নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ওপর বিরাগভাজন হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ওসমান পরিবার এখন আর আওয়ামী লীগের সম্পদ নয়, বোঝা। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য স্থাপনের পরিকল্পনাও বাতিল করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি একেএম শামীম ওসমান এই ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে এক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করার সময় ওসমান পরিবার সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব দেখিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের স্থানীয় সরকার/পৌরসভা-ইউনিয়ন নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, ওসমান পরিবার এখন আর আওয়ামী লীগের সম্পদ নয়, বোঝা।
ওই বৈঠকে উপস্থিত দু’জন কেন্দ্রীয় নেতা বৈঠকের শুরুতে শামীম ওসমানের পক্ষে অবস্থান নিলেও পরে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বুঝতে পেরে চুপসে যান।
পরবর্তীতে আবার বিপাকে পড়েন শামীম ওসমান। তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের প্রবেশমুখে ত্রিভুজাকৃতির সড়ক বিভাজনের ওপর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের
অনুমোদন না থাকায় ওই ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমতি দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৬ মে ওই ভাস্কর্যটি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উদ্বোধন করার কথা ছিল। প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘ধন্য পিতার ধন্য মেয়ে, ধন্য তোমার জন্য যে’ নামের এই ভাস্কর্যটি পরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালে তোলা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর একটি দুর্লভ ছবির অনুকরণে এই ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে একেএম শামীম ওসমানের উদ্যোগে। এটি নির্মাণে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম।
শাহ নিজাম জানান, ভাস্কর্যটি নির্মাণের আগে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এর কপি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আর অসাবধানতাবশত শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ায় ভাস্কর্যের সামনের দিকের কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ভাস্কর্য উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। নতুন করে ভাস্কর্য নির্মাণে আরও পাঁচ মাস লাগবে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, ভাস্কর্য উদ্বোধনের আমন্ত্রণপত্রে ভাস্কর্যের ছবি দেখে হতবাক হয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃত হয়েছে।
শাহ নিজাম বলেছেন, এটি সঠিক নয়। স্থিরচিত্র থাকে টুডি অবস্থায়। ভাস্কর্য থাকে থ্রিডি অবস্থায়। যে কারণে কারও কাছে এমনটি মনে হতেই পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, থ্রিডি লুকে চারপাশ থেকেই ভাস্কর্যটি একই রকম দেখাবে।
শাহ নিজাম আরো বলেছেন, ভাস্কর্যটির ওপরের অংশ গ্গ্নাস ফাইভার দিয়ে তৈরি। নিচের অংশ তৈরি হয়েছে ১০ ইঞ্চি পুরো কাচ দিয়ে। প্লাস্টিকের সবুজ ঘাষ দিয়ে ভাস্কর্যের সামনে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র। এর সামনে একটি ফোয়ারা রয়েছে। ভারতের তিন শিল্পী আশীষ চৌধুরী, নব ও সুরজিত চার কোনাবিশিষ্ট ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। বাস্তবায়ন করে টেকনো ইভেন্ট ও জাওয়াদ কনস্ট্রাকশন। ভাস্কর্যটিতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে আরেক দফায় দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছে ওসমান পরিবার। ইসলাম ধর্ম অবমাননার অপবাদ দিয়ে গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রথমে কান ধরে ওঠবস এবং পরে তাকে চাকরিচ্যুত করায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন ওসমান পরিবারের সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি একেএম সেলিম ওসমান।
তখন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বাড়াবাড়ি না করার জন্য একেএম শামীম ওসমানকে সতর্ক করে দেন। শামীম ওসমান অবশ্য শিক্ষক লাঞ্ছনার বিষয়ে কোনো ধরনের ভূমিকায় ছিলেন না। সূত্র: সমকাল