ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারাম উৎসব উদযাপন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১১৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উত্তরাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশপরম্পরায় তারা ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় পালন করেন এ পূজা। যুগ যুগ ধরে নানান আনুষ্ঠানিকতায় উত্তরের সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা এই উৎসব পালন করে আসছেন।

এ উপলক্ষে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ডাকবাংলো মাঠে রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দেয়। ঢোল, মাদল আর মন্দিরার তালে তালে তারা তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তারা তাদের ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন।

 

জানা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে উপজেলায় নিয়মিত পালন করা হয় কারাম উৎসব। কারাম (খিলকদম) বা ডাল পূজা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন হিসেবে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মহাদেবপুরের ডাকবাংলো মাঠে কয়েকটি জেলা থেকে আসা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দেয়। তারা তাদের নিজেদের ভাষা ও সাংস্কৃতি তুলে ধরেন। এ সময় সাঁওতাল, ওরাও, মুণ্ডা, পাহান, মাহালি, মাহাতো ও হাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতীসত্তার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এলাকার কারাম উৎসব উপলক্ষে তারা মুখরিত হয়ে আছেন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মাঠে এক গ্রামীণ মেলা বসে।

আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাবিত্রি হেমব্রম বলেন, আমি রাজশাহী থেকে কারাম উৎসবে এসেছি। এখানের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। রাতভর কারাম উৎসবে পূজা-অর্চনা করেছি। আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যে মূল সংস্কৃতি ও ভাষা তা বিলুপ্তির পথে। কিন্তু আমরা তা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বিশ্বের দরবারে আমাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানাই।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ মহাদেবপুরের উপদেষ্টা সাংবাদিক আজাদুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব কারাম। কালের বিবর্তনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। আদিবাসীরা প্রকৃতির পূজারি। তারা কারাম গাছের ডালকে পূজা করে। তাদের বিশ্বাস প্রকৃতি তাদের ভাল রাখবে। এ বিশ্বাস থেকেই তারা কারাম পূজা করে।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, বৈশ্বিকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে। আদিবাসীদের কাছ থেকে যদি প্রকৃতির প্রতি ভালবাসার শিক্ষা নেওয়া যেত তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখতে হতো না। এদিক থেকে বলা যায় কারাম উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা আগে পাড়ায় পাড়ায় এ উৎসব করতো। ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে এ উৎসব পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উৎসব শেষে ডাকবাংলো মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সাংসদ ছলিম তরফদার সেলিম।

সংসদ সদস্য ছলিম তরফদার সেলিম বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে ডাক-বাংলোর মাঠে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে মিলিত হয়েছে তারা। সরকার তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তারা যে আন্দোলন ও সংগ্রাম করছে তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নওগাঁয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারাম উৎসব উদযাপন

আপডেট টাইম : ১০:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উত্তরাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশপরম্পরায় তারা ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় পালন করেন এ পূজা। যুগ যুগ ধরে নানান আনুষ্ঠানিকতায় উত্তরের সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা এই উৎসব পালন করে আসছেন।

এ উপলক্ষে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ডাকবাংলো মাঠে রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দেয়। ঢোল, মাদল আর মন্দিরার তালে তালে তারা তাদের নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তারা তাদের ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন।

 

জানা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে উপজেলায় নিয়মিত পালন করা হয় কারাম উৎসব। কারাম (খিলকদম) বা ডাল পূজা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন হিসেবে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

মহাদেবপুরের ডাকবাংলো মাঠে কয়েকটি জেলা থেকে আসা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দেয়। তারা তাদের নিজেদের ভাষা ও সাংস্কৃতি তুলে ধরেন। এ সময় সাঁওতাল, ওরাও, মুণ্ডা, পাহান, মাহালি, মাহাতো ও হাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতীসত্তার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এলাকার কারাম উৎসব উপলক্ষে তারা মুখরিত হয়ে আছেন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মাঠে এক গ্রামীণ মেলা বসে।

আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাবিত্রি হেমব্রম বলেন, আমি রাজশাহী থেকে কারাম উৎসবে এসেছি। এখানের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। রাতভর কারাম উৎসবে পূজা-অর্চনা করেছি। আমাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যে মূল সংস্কৃতি ও ভাষা তা বিলুপ্তির পথে। কিন্তু আমরা তা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বিশ্বের দরবারে আমাদের সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানাই।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ মহাদেবপুরের উপদেষ্টা সাংবাদিক আজাদুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব কারাম। কালের বিবর্তনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। আদিবাসীরা প্রকৃতির পূজারি। তারা কারাম গাছের ডালকে পূজা করে। তাদের বিশ্বাস প্রকৃতি তাদের ভাল রাখবে। এ বিশ্বাস থেকেই তারা কারাম পূজা করে।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, বৈশ্বিকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে। আদিবাসীদের কাছ থেকে যদি প্রকৃতির প্রতি ভালবাসার শিক্ষা নেওয়া যেত তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখতে হতো না। এদিক থেকে বলা যায় কারাম উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। সমতল ভূমির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা আগে পাড়ায় পাড়ায় এ উৎসব করতো। ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে এ উৎসব পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উৎসব শেষে ডাকবাংলো মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সাংসদ ছলিম তরফদার সেলিম।

সংসদ সদস্য ছলিম তরফদার সেলিম বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে ডাক-বাংলোর মাঠে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে মিলিত হয়েছে তারা। সরকার তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তারা যে আন্দোলন ও সংগ্রাম করছে তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হবে।