মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর পরিবর্তনের সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। সংক্ষেপে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি। উদ্যোগ নেয়ার প্রায় তিন বছর পর এটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। এরপরই তিনি গ্রাহকদের কাছে এ সেবা পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ নেন। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাহকরা সুবিধাটি পাবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। প্রায় চার মাস পর বুধবার তা অনুমোদন দেয়া হয়। এখন তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপারেটর পরিবর্তনের এই বিধান বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। নতুন এই উদোগে কোনো গ্রাহক ইচ্ছে করলেই তার মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে তার পছন্দমতো অপারেটরে যেতে পারবেন। আবার প্রয়োজনে আগের অপারেটরে ফিরেও আসতে পারবেন। এজন্য তাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
এ নিয়ে তৈরি নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই সুবিধা দিতে অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রণালয় আগেই অনুমোদন করেছে। একবার এমএনপি সুবিধা নেয়ার পর গ্রাহক আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৪৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি পরিষেবা চালু রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বুধবার তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই এমএনপি সেবা চালু হচ্ছে। মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের পরিষেবা স্বচ্ছ করতে কয়েকটি মূল্যায়ন মানদণ্ড যুক্ত করে গত জানুয়ারিতে এমএনপি নীতিমালার সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত করে বিটিআরসি। এরপর তা পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংশোধিত খসড়া নীতিমালার কোনো পরিবর্তন ছাড়াই অনুমোদন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ বিষয়ে আগে কোনো নীতিমালা না থাকায় কোনো অপারেটরের সেবায় সন্তুষ্ট না হলে অন্য কোনো অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ কোনো গ্রাহকের ছিল না। এই সেবা চালু হওয়ার পরই যে কেউ নম্বর ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। গত বছর ২রা ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। তার আগে বিটিআরসি গ্রাহকদের অপারেটর বদলানোর সুযোগ করে দিতে প্রস্তাবনা তৈরি করে। এরপর তা গত বছর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠালে মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাবের অনুমতি প্রদান করে। পরে বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। নম্বর না বদলে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সালের জুনে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। তখন বিটিআরসি এই নির্দেশ অপারেটরদের দিলেও গাইড লাইন না থাকায় অপারেটররা সঠিক সময়ে এই সেবা চালু করতে পারেনি। এরপর বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে এমএনপি চালু করতে নতুন গাইডলাইন তৈরি করে সরকারের কাছে দেয়া হয়। সরকারের কাছে অনুমোদিত হয়ে এলে এটার টেন্ডার এবং লাইসেন্স হবে। যে লাইসেন্স পাবে সে এটাকে অপারেট করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে তারানা হালিম তার ভেরিফাইড ফেসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমি আনন্দিত, আসছে এমএনপি সার্ভিস। প্রধানমন্ত্রী এমএনপি গাইডলাইনে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। সুতরাং আপনাদের আকাঙ্ক্ষিত এমএনপি সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে এ বছরের মধ্যেই। এই সেবা চালু হলে বাংলাদেশের যে কোনো মোবাইল গ্রাহক তার নাম্বারটি ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্কে সুইচ করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি যদি এখন ০১৭ কোডের গ্রামীণফোনের গ্রাহক হয়ে থাকেন তবে ওই একই ০১৭ রেখেই আপনি অপারেটর পরিবর্তন করে অন্য যে কোনো অপারেটরের নেটওয়ার্ক পছন্দ অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পর চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই এমএনপি নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গাইডলাইনে বেশ কিছু পরিবর্তনের কারণে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হওয়ায় এক মাস দেরি হয়েছে বলে জানান তারানা হালিম। আশার কথা হলো, এ বছরের মধ্যেই চালু হতে যাচ্ছে এমএনপি সার্ভিস। তারানা হালিম লিখেছেন, আমি প্রতিটা কাজের জন্য সর্বদা যে ডেডলাইন ঠিক করেছি, সেই ডেডলাইনের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি। এরই ধারাবাহিকতায় এমএনপি লাইসেন্সের নিলাম প্রক্রিয়াও দুই তিন মাসের মধ্যে শুরু করা এবং এ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই এই সার্ভিস শুরু করা আমার অগ্রাধিকারমূলক কাজ সমূহের মধ্যে একটি।