হাওর বার্তা ডেস্কঃ নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় চলতি আমনের ভড়া মৌসুমে সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাজারের খুচরা দোকানে ও ডিলারের কাছে কৃষকদের চাহিদামতো মিলছে না ইউরিয়া, পটাশ ও ডিএপি সার। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা। সার সংকটের কারণে চাষিরা আমন ধানের আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটকারীরা সারের সংকট তৈরি করার কারণে ডিলারদের কাছে চাহিদামতো সার না পেয়ে বাড়তি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সার কিনতে হচ্ছে। এতে উপজেলায় সার সংকটে অজুহাতে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে সার বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের অর্থ।
জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলাজুড়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করা হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ শেষ হবে। এবার কৃষকরা স্বর্ণা ৫, বিনা ১৭, ৯০, আতব ধানসহ বিভিন্ন জাতের ধান রোপণ করেছেন।
কৃষকরা বলছেন, ধান রোপণের শুরু থেকেই উপজেলায় সারের তীব্র সংকট। স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও মিলছে না সার। পেলেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। আবার ডিলারদের কাছে গেলে কৃষকদের চাহিদামতো সার দিতে পারছেন না তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা ১১ হাজার টন হলেও সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাত হাজার টন, পটাশ সারের চাহিদা ছয় হাজার হলেও দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ২০০ টন ও ডিএপি সারের ছয় হাজার ৩০০ চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ দেওয়া হয় পাঁচ হাজার টন।
সদরে সার নিতে আসা বরিয়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম সোহেল জানান, আমান মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে আমি ধান রোপণ করেছি। জমিতে ঘাস মারা ওষুধ দেওয়ার জন্য ইউরিয়া ৩-৪ বস্তা সারের প্রয়োজন হলে খোলাবাজারে সার না পেয়ে এক ডিলালের কাছে সার নিতে যাই। কিন্তু তারা আমাকে মাত্র এক বস্তা সার দিতে চাইলে, আমি সেই সার না নিয়ে চলে আসি।
দেউলা গ্রামের এক কৃষক জানান, তিনি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ বিঘা জমি ধান লাগিয়েছেন। খোলাবাজারে সার না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। সদরে এক ডিলারের কাছ থেকে মাত্র পাঁচ বস্তা ইউরিয়া সার পেয়েছেন তিনি। তার দাবি চাহিদার তুলনায় সার পাননি তিনি।
বিলপালশা গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, তার তিন থেকে চার বস্তা সারের প্রয়োজন হলে ডিলারের কাছে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাননি। বাধ্য হয়ে খোলাবাজারে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা বস্তার ইউরিয়া সার এক হাজার ৪০০ টাকা করে কিনতে হয়েছে। তার পরও চাহিদামতো সার পাইনি।
খাসগড় গ্রামের কৃষক জয়ন্ত কুমার জানান, জমিতে ওষুধ ছিটানোর জন্য সারের প্রয়োজন হলে স্থানীয় বাজারে ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও সার পাইনি তিনি।
এ ছাড়া বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, উপজেলাজুড়ে চলছে স্যারের তীব্র সংকট। আর ডিলারের কাছে ছাড়া খোলাবাজারে সার মিলছে না। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ডিলারদের কাছে গিয়েও লাইনে দাঁড়িয়ে সার নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর পরও চাহিদার তুলনায় কোনো সার দিতে পারছেন না ডিলাররা। যে কৃষকের দরকার চার বস্তা সার তাকে ডিলাররা দিচ্ছেন এক থেকে দুই বস্তা বলে দাবি করেছেন। দ্রুত এই সার সংকটের সমস্যার সমাধান না করা হলে আমন মৌসুমের ধান উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলেও জানান তারা।
থার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশান রানীনগর উপজেলা ইউনিটের সভাপতি আব্দুস সাত্তার শাহ্ বলেন, চাহিদার তুলনায় আমরা ডিলাররা সার বরাদ্দ অনেক কম পেয়েছি। ডিলারের ঘরে যে সার রয়েছে, তা কৃষকদের চাহিদামতো ডিলাররা দিতে পারছেন না। চাহিদামতো সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলে সারের সংকট থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী ডিলাররা খোলা বাজারের ব্যবসায়ীদের সার দিতে পারছে না। এই জন্য খোলাবাজারে সারের সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলাজুড়ে ডিলাররা সরকারি রেটের বাহিরে বাড়তি দামের সার বিক্রি করছেন না বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার উপজেলাজুড়ে আমন মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাহিদার তুলনায় সার বরাদ্দ কম পাওয়া গেছে। আবার বরাদ্দের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কৃষকরা যেন সঠিক সময়ে তাদের চাহিদামতো সার পান। উপজেলায় সারের কোনো সংকট নেই বলেও দাবি করেছেন এ কর্মকর্তা।