নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী কূটনীতিকরা। বাসা, অফিস ও নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চান তারা। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ এক ডজন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন। বিষয়টির গুরুত্ব বাড়াতে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কূটনৈতিক নিরাপত্তাবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি গ্রেগরি বি স্টার।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে তাগিদ দেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, তারা মূলত কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিই আজ আলোচনা করেছেন। আর যেন কোনো বিদেশী হামলার শিকার না হন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের শেষদিকে ঢাকায় কূটনৈতিক জোনের কাছে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লা ও রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিও। এরপর কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় সরকার নজিরবিহীন উদ্যোগ নেয়। গত মাসে ইউএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন থেকে পাঠানো চিঠিতে তাদের কর্মীদের জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা চাওয়া হয়।
মিশনপ্রধানদের কেউ কেউ গানম্যানের কথা বলেছেন। আবার অনেকে বাসার নিরাপত্তায় পুলিশ চেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে কূটনীতিকপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা নজরদারি ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে পর্যাপ্ত চেকপোস্টও। এমনকি গাড়ি, মোটরসাইকেল ও হেঁটে চলাচলকারীদের বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এরপরও কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানোর নানা আবদার করা হচ্ছে। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপ-সহকারী মন্ত্রী উইলিয়াম ই টডের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। তখনও তারা নিরাপত্তার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের তা জানিয়েছিলেন।
চলতি মাসেই নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকা সফর করেন।
এরপরই দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি উইলিয়াম টড আসেন বাংলাদেশে।
তারপরই এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের কূটনৈতিক নিরাপত্তাবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি গ্রেগরি বি স্টার এবং কূটনৈতিক নিরাপত্তা ও আন্ডার সেক্রেটারির (ব্যবস্থাপনা) বিশেষ সহকারী মাইলস এইচ কেচাম। তারা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইজিপি মোহাম্মদ শহিদুল হকের সঙ্গেও বৈঠক করেন।সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উগ্রবাদীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নিরাপত্তা ব্যুরোর এসব কর্মকর্তার সফরকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাদের ঘন ঘন সফর বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের শংকার ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। -যুগান্তর