পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়, দেশে ফিরলেন ওয়াসফিয়া

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক দশক আগে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন। ১০টি বছর কেটে যাওয়ার পর তাঁর সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, অতি দুর্গম আর বিপজ্জনক হিসেবে পরিচিত পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ‘কে-টুু’ জয়ের মধ্য দিয়ে।

ওয়াসফিয়া গতকাল বুধবার দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আরো উল্লেখ করেন, বাঙালি ও বাংলাদেশি মিলিয়ে তিনিই সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করা প্রথম ব্যক্তি। নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে ঘরে ফিরেছেন এই দূর-দূরান্তের পাহাড় দাবড়ে বেড়ানো ৩৯ বছর বয়সী ওয়াসফিয়া।

কারাকোরাম পর্বতমালায় অবস্থিত পাকিস্তানের কেটু পর্বত আট হাজার ৬১১ মিটার উঁচু। ওয়াসফিয়া নাজরীন গত ২২ জুলাই তাঁর দলের সঙ্গে এর চূড়ায় ওঠেন। পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলেও পর্বতারোহীদের কাছে এটি এভারেস্টের চেয়েও দুর্গম বলে পরিচিত। বিপদসংকুল পরিবেশ, প্রায় পিরামিডের মতো ঢালু পার্শ্ব আর অনিশ্চিত আবহাওয়ার এই পর্বতের চূড়ায় এ পর্যন্ত পা রাখতে পেরেছেন মাত্র ৪০০ পর্বতারোহী। তাঁদের অনেকেই আর নিচে নামতে পারেননি।

১৯৫৪ সালে প্রথম আরোহণের পর থেকে কে-টুতে আরোহণ করা ৪০ নারী পর্বতারোহীর একজন ওয়াসফিয়া নাজরীন।

গতকাল দুপুরে ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই মাসব্যাপী রোমাঞ্চকর কারাকোরাম অভিযানের বর্ণনা দেন ওয়াসফিয়া। তাঁর ভাষ্য মতে, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেখানে পর্বতারোহণ ও ট্রেকিং করার অনুমতি পান।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসফিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন চল্লিশে পা দেয়, তখন আমি সেভেন সামিট জয় করার যাত্রা শুরু করি। দেশের ৫০ বছরে আমি চেয়েছিলাম কেটু জয় করতে। এ জন্য ১০ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছি। ’ তাঁর এ অভিযানে স্পন্সর ছিল রেনাটা লিমিটেড।

ওয়াসফিয়া বলেন, “কেটু আমার আরোহণ করা সবচেয়ে দুর্গম পর্বত, যেখানে বেশ কয়েকবার পাথরে আঘাত পেয়েছি। কেটু স্থানীয়ভাবে ‘ছোগোরি’ বা পর্বতের রাজা হিসেবে পরিচিত। প্রতি পদক্ষেপে সেখানে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে! এক অভিযানেই কেটু জয় করে ফিরে আসা অল্প কিছু পর্বতারোহীর মধ্যে আমরা রয়েছি। ”

পর্বতচূড়া থেকে নেমে প্রথম কার কথা মনে হয়েছে জানতে চাইলে ওয়াসফিয়া নাজরীন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য একটা গৌরব বয়ে নিয়ে আসব। শুরু থেকে প্রতিটি মুহূর্ত শুধু দেশের কথা ভেবেছি। নিচের মাটিতে পা রেখে আমি দেশকে স্মরণ করেছি। কারণ এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি। পাশাপাশি বাবাকে মনে পড়েছিল খুব। ’

এই সাফল্যের জন্য নিজের দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওয়াসফিয়া। ধন্যবাদ জানান স্পন্সর রেনাটা লিমিটেডসহ তাঁর প্রতি ভরসা করা সবাইকে।

চূড়ায় ওঠার সময়ের অনুভূতির বর্ণনা করে ওয়াসফিয়া বলেন, “যখন প্রথম সামিটে পা রাখলাম তখন পাশে আমার দলের ছয়জন নারী ছিলেন। তাঁরা সবাই ‘জয় বাংলা’ বলে উল্লাস করতে থাকেন। এই আনন্দ ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। ”

দেশের নারীরা পর্বতারোহণে তুলনামূলক পিছিয়ে কেন—জানতে চাইলে ওয়াসফিয়া বলেন, ‘এর জন্য অনেক আবেগ আর ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। সাহসী হতে হয়। অনেক মেয়ে শুরু করেও একটা সময় বন্ধ করে দেন। ’

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর