বিলাসবহুল পণ্যে নিরুৎসাহ : ফল আমদানি কমে অর্ধেকে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবশেষে বিদেশি ফল আমদানি কমতে শুরু করেছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে সরকার ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আগেই। আর এসব পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও বাড়িয়েছে। এই দুই উদ্যোগ কার্যকর করায় বিদেশি ফল আমদানি কমেছে।

আর অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমানোর সরকারি উদ্যোগের সুফলও মিলছে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আহসানুল আলম চৌধুরী পারভেজ মনে করেন, সরকারি এই উদ্যোগ অবশ্যই অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব আনবে আর ডলারের নিয়ন্ত্রণ এবং রিজার্ভের চাপ কমানোর জন্য সরকারের হাতে এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্পও ছিল না; কিন্তু সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে এই পদক্ষেপ কার্যকর করা যাবে না।

কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসে আমদানি কমেছে ৩১ শতাংশ আর আমাদের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ২৫ শতাংশ। ফলে ৬ শতাংশ আমদানি আমরা অপ্রয়োজনীয় বা বিলাসী মনে করছি। অর্থনীতির এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এই আমদানি কমিয়ে আনাও অনেক সুফল দেবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। ’ এর সঙ্গে ডলারের বিনিময়মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ফল আমদানি আরো সংকুচিত হয়েছে; পণ্যের দামও অনেক বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি কমেছে ব্যাপকভাবে।

চট্টগ্রামের আমদানিকারক জিএস ট্রেডিংয়ের এমডি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ফল আমদানি অর্ধেকের বেশি কমেছে। আমি আগে মাসে ৪০ থেকে ৫০ কনটেইনার ফল আমদানি করতাম; দুই মাস ধরে করছি মাত্র ২০ কনটেইনার। ’

আমদানি কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এক কোটি টাকার ফল আমদানির ঋণপত্র খুলতে আগে ব্যাংক সহায়তা মিলত ২৫ শতাংশ। সরকারের নতুন নির্দেশনার পর এখন এক কোটি টাকার পুরোটাই আমাকে নগদে পরিশোধ করতে হচ্ছে। যাদের হাতে নগদ টাকা আছে তারাই এই বিপুল বিনিয়োগে ঋণপত্র খোলার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া সম্পূরক শুল্কহার বাড়ানো এবং ডলার বিনিময়মূল্য বেশি থাকায় ফল আমদানিতে খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে আমদানি কমেছে। ’

কাস্টমস ও বন্দরের হিসাবে, দেশে বিদেশি ফল আমদানিতে বছরে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। বেশির ভাগ ফল আমদানি হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশেষায়িত কনটেইনারভর্তি হয়ে জাহাজে করেই। স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকেও বেশ কিছু ফল আমদানি হয়; কিন্তু মূল ফল আমদানির তুলনায় তার পরিমাণ কম।

দেশের ব্যাংক রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত ২৮ মে এক প্রজ্ঞাপনে ১৩৫ ধরনের বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য—এসব পণ্যের আমদানিতে ডলার ব্যয় কমানো এবং রিজার্ভ সুরক্ষা করা। সম্পূরক শুল্ক আরোপের পাশাপাশি এসব পণ্য আমদানিতেও কড়াকড়ি আরোপ করে শতভাগ মার্জিন দেওয়ার বিধান কার্যকর করে। ফলে বিদেশ থেকে ফল আমদানি কমেছে; বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজে করে ফল আমদানি কমেছে।

জানতে চাইলে ফল আমদানি চালান খালাসের সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সোনারগাঁও অ্যাসোসিয়েটরসের এমডি বোরহান উদ্দিন সিকদার (চঞ্চল) বলেন, ‘ফল আমদানি কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি; যাঁদের হাতে নগদ টাকা আছে তাঁরাই শুধু এই সুযোগটা নিতে পারছেন। এখন যে ফল আসছে সেগুলোর ঋণপত্র ছিল এপ্রিল-মে মাসের। জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত ঋণপত্র খোলা তো অনেক কমেছে। এর প্রভাব আমরা বুঝতে পারব আগামী সেপ্টেম্বরে। তখন হয়তো বিদেশি ফল নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে। ’

তিনি বলেন, এক কনটেইনার আপেলে ২৩ হাজার ৭০০ কেজি থাকে। এপ্রিলে এর বিপরীতে মোট শুল্ক দিতে হতো আট লাখ ৫২ হাজার টাকা। জুলাই মাসে দিতে হচ্ছে ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বাড়তি দিতে হচ্ছে তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা। শুল্কহার বাড়ানো এবং ডলারে বিনিময়মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় এই বাড়তি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আমদানি কমায় ফলের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ১৮ কেজির এক কার্টন আপেল এখন তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পাইকারিতেই কেজি আপেলের দাম পড়ছে ১৭৮ টাকায়। খুচরায় সেটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। আবার উচ্চমানের রয়েল গালা আপেল তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে; সুপারশপে এই আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর