ঢাকা ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এদের নাম ইমার্জেন্সি, লকডাউন, সুনামি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২
  • ১২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতে সন্তানের নামের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাবা-মা দেব-দেবি, রাজা-বাদশাহ কিংবা বলিউডের কোনো নায়ক-নায়িকার নামকে বেছে নেন। খুব কম সংখ্যক মানুষই কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটে সন্তানের নাম রেখে থাকেন। বিবিসি এমনই কয়েক জন ভারতীয়কে খুঁজে বের করেছে।

ইমার্জেন্সি যাদব: ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার একদিন পর ২৬ জুন ইমার্জেন্সি যাদবের জন্ম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রেডিওতে এক ঘোষণায় বলেছিলেন তিনি ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছেন। ওই সময় সাংবিধানিক অধিকার স্থগিত করা হয়েছিল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল এবং অনেক বিরোধী নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

ইমার্জেন্সি যাদব তার নামের ইতিহাস প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন লোকেরা ভারতের ইতিহাসের এই দুঃখজনক, অন্ধকার সময়ের কথা যেন ভুলে না যায় সেজন্য তিনি আমার এই নাম রেখেছেন।’

ইমার্জেন্সি যাদবের বাবা রাম তেজ যাদব ছিলেন কংগ্রেস বিরোধী রাজনীতিবিদ ছিলেন। ছেলের জন্মের কয়েক ঘন্টা আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি ২২ মাস জেলে কাটিয়েছেন এবং ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর ছেলের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।

লকডাউন কাক্কান্দি :  ২০২০ সালে ভারতে কোভিড লকডাউন ঘোষণার এক সপ্তাহ পরে উত্তর প্রদেশের খুখুন্দুর ছোট্ট গ্রামে তার জন্ম লকডাউনের।

লকডাউনের বাবা পবন কুমার বলেন, ‘আমার ছেলের জন্ম লকডাউনের শুরুর দিকে। আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাহন খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। অনেক ডাক্তার রোগীদের সেবা দিতেও অনিচ্ছুক ছিলেন। সৌভাগ্যবশত আমার ছেলের জন্ম হয়েছে কোনো জটিলতা ছাড়াই।’

 

লকডাউনের গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায়, সবাই তার ঠিকানা জানে এবং অনেকে তার সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়।

পবন কুমার বলেন, ‘মানুষ হয়তো কিছু সময়ের জন্য তাকে নিয়ে মজা করতে পারে, কিন্তু সবাই তাকে মনে রাখবে। আমি চাই ওই সময় মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল সেটি যেন তার নামটি স্মরণ করিয়ে দেয়।’

২০২০ সালের ২৪ মার্চ প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা অনেক ভারতীয়কে হতবাক করেছিল। কারণ তাদের মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে এই লকডাউনের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি এবং বিশেষত বেসরকারি খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছিলেন।

সুনামি রায়: ২০০৪ সালে মৌনিতা রায় যখন সন্তানসম্ভবা তখন তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ছিলেন। যে রাতে তিনি সন্তান প্রসব করেছিলেন সেদিন আঘাত হেনেছিল বিধ্বংসী সুনামি। ছেলের জন্মের দিনটি এখনও মৌনিতা রায়ের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ওই ভয়াবহ দিনটির কথা মনে রাখতে সেই ছেলেটির নাম তিনি রেখেছেন সুনামি।

মৌনিতা রায় সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি স্বামীকে আমার বড় ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিলাম। আমার নিজের এবং আমার গর্ভের সন্তানের জন্য কোনো আশা ছিল না। রাত ১১টার দিকে, আমি একটি পাথরের উপরে অন্ধকারে আমার ছোট ছেলেকে প্রসব করি, কোনো সাহায্য বা ওষুধ ছাড়াই। আমার শরীর এর পরে আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি।’

স্কুলে সুনামিকে তার নামের জন্য উপহাস করা হয়েছিল। কিন্তু তার মায়ের কাছে নামের অর্থ আশা এবং বেঁচে থাকা।

মৌনিতা রায় বলেন, ‘সবাই যখন তাদের পরিবারের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন তখন আমার ছেলে আমাদের সবার কাছে আশার আলো হয়ে এসেছিল। ওই দিন একমাত্র যে ভালো ঘটনা ঘটেছিল সেটি হচ্ছে আমার ছেলের পৃথিবীতে আসা।’

২৬ ডিসেম্বরের সুনামিতে ১০ হাজার ভারতীয়সহ দুই লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এদের নাম ইমার্জেন্সি, লকডাউন, সুনামি

আপডেট টাইম : ১০:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতে সন্তানের নামের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বাবা-মা দেব-দেবি, রাজা-বাদশাহ কিংবা বলিউডের কোনো নায়ক-নায়িকার নামকে বেছে নেন। খুব কম সংখ্যক মানুষই কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটে সন্তানের নাম রেখে থাকেন। বিবিসি এমনই কয়েক জন ভারতীয়কে খুঁজে বের করেছে।

ইমার্জেন্সি যাদব: ১৯৭৫ সালে ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার একদিন পর ২৬ জুন ইমার্জেন্সি যাদবের জন্ম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রেডিওতে এক ঘোষণায় বলেছিলেন তিনি ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছেন। ওই সময় সাংবিধানিক অধিকার স্থগিত করা হয়েছিল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল এবং অনেক বিরোধী নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

ইমার্জেন্সি যাদব তার নামের ইতিহাস প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন লোকেরা ভারতের ইতিহাসের এই দুঃখজনক, অন্ধকার সময়ের কথা যেন ভুলে না যায় সেজন্য তিনি আমার এই নাম রেখেছেন।’

ইমার্জেন্সি যাদবের বাবা রাম তেজ যাদব ছিলেন কংগ্রেস বিরোধী রাজনীতিবিদ ছিলেন। ছেলের জন্মের কয়েক ঘন্টা আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি ২২ মাস জেলে কাটিয়েছেন এবং ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পর ছেলের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।

লকডাউন কাক্কান্দি :  ২০২০ সালে ভারতে কোভিড লকডাউন ঘোষণার এক সপ্তাহ পরে উত্তর প্রদেশের খুখুন্দুর ছোট্ট গ্রামে তার জন্ম লকডাউনের।

লকডাউনের বাবা পবন কুমার বলেন, ‘আমার ছেলের জন্ম লকডাউনের শুরুর দিকে। আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাহন খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। অনেক ডাক্তার রোগীদের সেবা দিতেও অনিচ্ছুক ছিলেন। সৌভাগ্যবশত আমার ছেলের জন্ম হয়েছে কোনো জটিলতা ছাড়াই।’

 

লকডাউনের গ্রাম এবং আশেপাশের এলাকায়, সবাই তার ঠিকানা জানে এবং অনেকে তার সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায়।

পবন কুমার বলেন, ‘মানুষ হয়তো কিছু সময়ের জন্য তাকে নিয়ে মজা করতে পারে, কিন্তু সবাই তাকে মনে রাখবে। আমি চাই ওই সময় মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল সেটি যেন তার নামটি স্মরণ করিয়ে দেয়।’

২০২০ সালের ২৪ মার্চ প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা অনেক ভারতীয়কে হতবাক করেছিল। কারণ তাদের মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পরে এই লকডাউনের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি এবং বিশেষত বেসরকারি খাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছিলেন।

সুনামি রায়: ২০০৪ সালে মৌনিতা রায় যখন সন্তানসম্ভবা তখন তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ছিলেন। যে রাতে তিনি সন্তান প্রসব করেছিলেন সেদিন আঘাত হেনেছিল বিধ্বংসী সুনামি। ছেলের জন্মের দিনটি এখনও মৌনিতা রায়ের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ওই ভয়াবহ দিনটির কথা মনে রাখতে সেই ছেলেটির নাম তিনি রেখেছেন সুনামি।

মৌনিতা রায় সেই দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি স্বামীকে আমার বড় ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিলাম। আমার নিজের এবং আমার গর্ভের সন্তানের জন্য কোনো আশা ছিল না। রাত ১১টার দিকে, আমি একটি পাথরের উপরে অন্ধকারে আমার ছোট ছেলেকে প্রসব করি, কোনো সাহায্য বা ওষুধ ছাড়াই। আমার শরীর এর পরে আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি।’

স্কুলে সুনামিকে তার নামের জন্য উপহাস করা হয়েছিল। কিন্তু তার মায়ের কাছে নামের অর্থ আশা এবং বেঁচে থাকা।

মৌনিতা রায় বলেন, ‘সবাই যখন তাদের পরিবারের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন তখন আমার ছেলে আমাদের সবার কাছে আশার আলো হয়ে এসেছিল। ওই দিন একমাত্র যে ভালো ঘটনা ঘটেছিল সেটি হচ্ছে আমার ছেলের পৃথিবীতে আসা।’

২৬ ডিসেম্বরের সুনামিতে ১০ হাজার ভারতীয়সহ দুই লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়।