বিদেশি চাপে সরকার বিক্ষোভ সমাবেশে ঝামেলা করছে না: মির্জা ফখরুল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিদেশি চাপে আছে। তাই বেশ কিছুদিন ধরে তারা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে ঝামেলা করছে না।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম, বিদ্যুতের বিপর্যয়, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের ওপর বিদেশি চাপ রয়েছে যে, তোমরা বিরোধী দলকে সভা-সমিতি করতে দাও না। এ কারণে তারা (সরকার) দেখাচ্ছে যে, বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে। আজ আমরা সমাবেশ করেছি, খুব বেশি ঝামেলা করছে না। কারণ তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা প্রতারণা। এই প্রতারণা তাদের চরিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

জনতার সুনামিতে সরকার ভেসে যাবে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ জেগে উঠেছে। তাই তাদের (সরকার) পতন অনিবার্য। এই রাজপথে ঢল নামবে, ঢেউ উঠবে, সেই ঢেউয়ে যে সুনামি সৃষ্টি হবে তাতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার ভেসে যাবে।’

বিনা কারণে ভোলায় দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বিএনপির ৬০০-এর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করেছে ফ্যাসিবাদী সরকার।’

ইভিএমকে জালিয়াতির মেশিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএম চেয়েছে। ওই মেশিন তারা চেতনায় ধারণ করে। কারণ ইভিএম মেশিন ছাড়া তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ভোট দেবেন ধানের শীষে, ভোট চলে যাবে নৌকায়। এ কারণেই তারা ইভিএম মেশিন চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। লুটপাট করে ব্যাংকগুলো খালি করছে। সরকার প্রচার করছে- ‘মেট্রোরেল হচ্ছে, টানেল হচ্ছে, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে, মালয়েশিয়া হয়ে যাচ্ছে।’ কিন্তু এখন আমরা কী দেখছি? রিজার্ভ এখন নিচের দিকে নামা শুরু হয়েছে।

শ্রীলংকাকে বাহাদুরি দেখিয়ে আড়াইশ মিলিয়ন ডলার লোন দিল। এখন আইএমএফের কাছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে, এডিবির কাছে লোন চাচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই তারা ৭৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে দিয়েছে। কাদেরকে দিয়েছে? তাদের-যারা ব্যবসায়ী, তাদের যারা টাকা-পয়সা দেয়, তাদের যারা কমিশন দেয়, ঘুস দেয় তাদেরই ৭৮ হাজার কোটি দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। এখন আবার বলছে সমন্বয় করব। আরে আন্তর্জাতিক বাজারে তো তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। আমেরিকাতে এক আত্মীয়কে জিজ্ঞাসা করলাম, ওখানে তেলের দাম কত? সে বলল আগে ১৪ ডলার ছিল, তা কমে ৩ ডলারে এসেছে। আর আমাদের আগে যে দাম ছিল ৭৮ টাকা তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৫ টাকা। তাহলে সমন্বয় কোথায় করছেন? এখন বিশ্ববাজারে দাম কমছে, তাহলে আপনারা কমাচ্ছেন না কেন? কারণ আবার চুরি করবেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম।

বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর