ঢাকা ০৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বাংলাদেশের বিরাট ভুল : ড. বুরাক আকচাপার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০১৬
  • ৩২১ বার

জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটাকে তুরস্ক যে বাংলাদেশের ‘বিরাট এক ভুল’ বলেই মনে করে, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তাদের এক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক।

দিল্লিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপার বলেছেন– এই ফাঁসি কার্যকর করায় তারা যে ক্ষুব্ধ, সেটা প্রকাশ করাটা তুরস্কের অধিকারের মধ্যেই পড়ে এবং তুরস্ক মি. নিজামীকে কোনো যুদ্ধাপরাধী নয়, বরং একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই দেখছে।

মি. নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে তুরস্ক এরই মধ্যে ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তুর্কী প্রেসিডেন্ট মি. এরদোয়ান তীব্র ভাষায় এই ফাঁসির নিন্দা করেছেন।

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেয়া হয় ঠিক এক সপ্তাহ আগে।

সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশের সমালোচনা করেছে অনেক দেশই। কিন্তু তুরস্ক যে ভাষা ও ভঙ্গীতে তাদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছে তা প্রায় নজিরবিহীন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান মি. নিজামীর ফাঁসির আগে ও পরে বারবার এ পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন, এমন কী ইউরোপ কেন এই প্রশ্নে নীরব, সে প্রশ্নও তুলেছেন।

ফাঁসির পর তুরস্ক বাংলাদেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়ায় আঙ্কারা ও ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন হুমকির মুখে।

বাংলাদেশের নিজস্ব একটি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তুরস্ক কেন এত কঠোর অবস্থান নিয়েছে, দিল্লিতে

নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপারের কাছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুরস্কের এই কঠোর অবস্থান সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত।

‌‘একজন রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো যে কখনওই সমীচিন নয় – আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গীটা স্পষ্টভাবে জানানোর প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের মানুষকে আমরা বন্ধুর মতো, ভায়ের মতো ভালোবাসি বলেই তাদের এই বার্তাটা দিতে চেয়েছি যে, এভাবে কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধ করা যায় না’।

তিনি বলছেন তুরস্কের ইতিহাসেও একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে আদালতে বিচার করে তারপর ফাঁসিতে ঝোলানোর নজির আছে।

‘কিন্তু আজও আমরা সেই ফাঁসির জন্য অনুশোচনা করি। এভাবে আসলে কোনও সমাধান হয় না’।

তুর্কী রাষ্ট্রদূত যার কথা বলছেন, সেই আদনান মেন্দেরিসকে সংবিধান লঙ্ঘন করার অপরাধে তুরস্কের একটি সামরিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আজ থেকে ৫৫ বছর আগে।

আর মি. নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আল বদরের মতো একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার– যারা যুদ্ধের সময় খুন, অনৈতিককাজ বা গণহত্যায় লিপ্ত ছিল। মি. নিজামীর বিচারও হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এটা কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটা বিষয়ে তুরস্কের হস্তক্ষেপ করার সামিল? এ প্রশ্নের জবাবে ড. আকচাপার বলছেন কোনও একটা জিনিস যদি আমরা মনে করি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী, তাহলে আমাদেরও কিন্তু অধিকার আছে তা প্রকাশ করার।

‘আমরা বাংলাদেশকে বন্ধু বলে মনে করি বলেই কিন্তু আমরা মন খুলে কথা বলছি। যাদেরকে আপনি একই পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন, তাদের বেলায় কখনও কখনও কিন্তু চুপ করে থাকার চেয়ে বড় প্রতারণা আর কিছু হয় না’।

বাংলাদেশের মানুষদের একটা বিরাট অংশ বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে এসেছেন- বিশেষ করে যুদ্ধের সময় যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের সেই অন্যায়ের একটা ক্লোসার দেয়ার অধিকার বাংলাদেশের এই জনগণের থাকার প্রশ্নটাকে তুরস্ক কীভাবে দেখছে- এ প্রশ্নের উত্তরে ড: আকচাপার বলেন, বাংলাদেশের কী অধিকার আছে না-আছে তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না।

‘মৃত্যুদণ্ড এমনিতেই কোনও ভাল সাজা নয়– আর একজন রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো তো কিছুতেই মানা যায় না। অমুক কারণ কি তমুক কারণ দেখিয়ে একজন রাজনৈতিক নেতাকে যদি হত্যা করা হয়– তাহলে আমাদেরও কিন্তু অবশ্যই ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে। তবে প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত অধিকারের নয়– আমাদের মূল কথাটা হলো এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ কিন্তু বিরাট একটা ভুল করেছে’।

তুর্কী রাষ্ট্রদূত নানাভাবে তার কথার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন– মি. নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যেসব অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে সেগুলোকে তারা গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

তুরস্ক তাকে বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই গণ্য করছে, কোনও যুদ্ধাপরাধী বলে মনে করছে না।

তাহলে বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধের সময়কার ভিক্টিমরা কীভাবে বিচার পাবেন? ড. আকচাপারের সংক্ষিপ্ত জবাব– ‘টাইম ইজ দ্য বেস্ট হিলার অর্থাৎ সময়ের চেয়ে ভালো উপশম আর কিছু হতে পারে না’। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বাংলাদেশের বিরাট ভুল : ড. বুরাক আকচাপার

আপডেট টাইম : ১১:২০:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ মে ২০১৬

জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাটাকে তুরস্ক যে বাংলাদেশের ‘বিরাট এক ভুল’ বলেই মনে করে, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন তাদের এক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক।

দিল্লিতে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপার বলেছেন– এই ফাঁসি কার্যকর করায় তারা যে ক্ষুব্ধ, সেটা প্রকাশ করাটা তুরস্কের অধিকারের মধ্যেই পড়ে এবং তুরস্ক মি. নিজামীকে কোনো যুদ্ধাপরাধী নয়, বরং একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই দেখছে।

মি. নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে তুরস্ক এরই মধ্যে ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তুর্কী প্রেসিডেন্ট মি. এরদোয়ান তীব্র ভাষায় এই ফাঁসির নিন্দা করেছেন।

বাংলাদেশে ১৯৭১-এ সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেয়া হয় ঠিক এক সপ্তাহ আগে।

সেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশের সমালোচনা করেছে অনেক দেশই। কিন্তু তুরস্ক যে ভাষা ও ভঙ্গীতে তাদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছে তা প্রায় নজিরবিহীন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান মি. নিজামীর ফাঁসির আগে ও পরে বারবার এ পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন, এমন কী ইউরোপ কেন এই প্রশ্নে নীরব, সে প্রশ্নও তুলেছেন।

ফাঁসির পর তুরস্ক বাংলাদেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়ায় আঙ্কারা ও ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কও এখন হুমকির মুখে।

বাংলাদেশের নিজস্ব একটি বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তুরস্ক কেন এত কঠোর অবস্থান নিয়েছে, দিল্লিতে

নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. বুরাক আকচাপারের কাছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুরস্কের এই কঠোর অবস্থান সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত।

‌‘একজন রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো যে কখনওই সমীচিন নয় – আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গীটা স্পষ্টভাবে জানানোর প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের মানুষকে আমরা বন্ধুর মতো, ভায়ের মতো ভালোবাসি বলেই তাদের এই বার্তাটা দিতে চেয়েছি যে, এভাবে কোনো উদ্দেশ্য সিদ্ধ করা যায় না’।

তিনি বলছেন তুরস্কের ইতিহাসেও একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে আদালতে বিচার করে তারপর ফাঁসিতে ঝোলানোর নজির আছে।

‘কিন্তু আজও আমরা সেই ফাঁসির জন্য অনুশোচনা করি। এভাবে আসলে কোনও সমাধান হয় না’।

তুর্কী রাষ্ট্রদূত যার কথা বলছেন, সেই আদনান মেন্দেরিসকে সংবিধান লঙ্ঘন করার অপরাধে তুরস্কের একটি সামরিক আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আজ থেকে ৫৫ বছর আগে।

আর মি. নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আল বদরের মতো একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার– যারা যুদ্ধের সময় খুন, অনৈতিককাজ বা গণহত্যায় লিপ্ত ছিল। মি. নিজামীর বিচারও হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এটা কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটা বিষয়ে তুরস্কের হস্তক্ষেপ করার সামিল? এ প্রশ্নের জবাবে ড. আকচাপার বলছেন কোনও একটা জিনিস যদি আমরা মনে করি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী, তাহলে আমাদেরও কিন্তু অধিকার আছে তা প্রকাশ করার।

‘আমরা বাংলাদেশকে বন্ধু বলে মনে করি বলেই কিন্তু আমরা মন খুলে কথা বলছি। যাদেরকে আপনি একই পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন, তাদের বেলায় কখনও কখনও কিন্তু চুপ করে থাকার চেয়ে বড় প্রতারণা আর কিছু হয় না’।

বাংলাদেশের মানুষদের একটা বিরাট অংশ বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে এসেছেন- বিশেষ করে যুদ্ধের সময় যারা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের সেই অন্যায়ের একটা ক্লোসার দেয়ার অধিকার বাংলাদেশের এই জনগণের থাকার প্রশ্নটাকে তুরস্ক কীভাবে দেখছে- এ প্রশ্নের উত্তরে ড: আকচাপার বলেন, বাংলাদেশের কী অধিকার আছে না-আছে তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না।

‘মৃত্যুদণ্ড এমনিতেই কোনও ভাল সাজা নয়– আর একজন রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো তো কিছুতেই মানা যায় না। অমুক কারণ কি তমুক কারণ দেখিয়ে একজন রাজনৈতিক নেতাকে যদি হত্যা করা হয়– তাহলে আমাদেরও কিন্তু অবশ্যই ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে। তবে প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত অধিকারের নয়– আমাদের মূল কথাটা হলো এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ কিন্তু বিরাট একটা ভুল করেছে’।

তুর্কী রাষ্ট্রদূত নানাভাবে তার কথার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন– মি. নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যেসব অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে সেগুলোকে তারা গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

তুরস্ক তাকে বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই গণ্য করছে, কোনও যুদ্ধাপরাধী বলে মনে করছে না।

তাহলে বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধের সময়কার ভিক্টিমরা কীভাবে বিচার পাবেন? ড. আকচাপারের সংক্ষিপ্ত জবাব– ‘টাইম ইজ দ্য বেস্ট হিলার অর্থাৎ সময়ের চেয়ে ভালো উপশম আর কিছু হতে পারে না’। সূত্র : বিবিসি বাংলা