নিরাগ হাওরে স্বপ্নীল অল-ওয়েদার রোডে পর্যটকদের আকাশছোঁয়া উল্লাস

রফিকুল ইসলামঃ ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের ফলে বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের ১০৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বর্তমানে গভীর জলে নিমজ্জিত রয়েছে।

এই তিনটি উপজেলায় লাখ লাখ পানিবন্দি বানভাসি দুর্গত মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে হাহাকারের একরত্তি কমতি নেই এখনো। সেখানে বন্যার করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে জনজীবন।

এদিকে আফালের (তুফান) ফাঁকে নিরাগ (শান্ত) হাওরের স্বপ্নের অল-ওয়েদার রোডে (আবুড়া সড়ক) থেমে নেই পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ও আকাশছোঁয়া উল্লাস। সেই সাথে মনখোলা সমস্বরে সুর তোলা- ‘হাওর দেশে আইসা আমার নয়ন জুরাইছে’।

289162690_1228024927969815_
সূত্রমতে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলার প্রায় ৪৮টি উপজেলায় ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪৩২টি হাওর নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত।

এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩৩টি, কিশোরগঞ্জে ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি এবং ব্রাক্ষ্মবাড়িয়ায় ৩টি হাওর রয়েছে। প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশাল এই হাওর বাংলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বিকাশে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এলাকা এটি।

সেই লক্ষ্যে বেসরকারিভাবে কিছুক্ষেত্রে সেই উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে মিঠামইনের হোসেনপুর গ্রামে বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ এবং রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কামালপুর গ্রামের সন্নিকটে ‘হাওর রিসোর্ট’ অন্যতম।289945405_2850941608541646_
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্রমতে, জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ ও উন্নততর করতে প্রায় ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অল-ওয়েদার রোড (আবুড়া সড়ক) নির্মিত হয়েছে। এতে ৫৯০.৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসিগার্ডার ব্রিজ,১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯.৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্বপ্নের দেশের এই বিস্ময়কর রোডটি ২০২০ সালে অক্টোবরে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিস্তীর্ণ হাওরের রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের সেই অল-ওয়েদার রোড দেখতে এবার ঈদের আগেই দূরদূরান্ত থেকে আসা বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিদিন।

ওপরে অসীম নীল আকাশ আর নিচে অথৈ জলরাশি। বয়ে চলেছে ছোট-বড় রঙবেরঙের বিভিন্ন ধরনের নৌকা। আর মাঝখানে গভীর জলে সমতল থেকে পর্বতসম উঁচু দাঁড়িয়ে অল-ওয়েদার রোড। যা নিয়ে আহ্লাদে মাতামাতির শেষ নেই।

সাগরসম হাওরের এই জলরাশি ভেদ করে সর্পিলভাবে একেবেঁকে যেন স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেছে এই অল-ওয়েদার রোড। নৌকায় হাওরের গভীর বিস্তৃত বুকে ভাসতে ভাসতে দেখা মিলে মাছ শিকারীদের ভাসমান জীবন। তাই তো হাওরের নৈসর্গিক রূপ দর্শনে ছুটির দিনগুলোতে হাওর ও অল-ওয়েদার রোড হয়ে ওঠে লোকে-লোকারণ্য।

এতে বর্ষায় হাওর উত্তাল যৌবনের জয়গানে মুখরিত হয়। নীল আকাশের সাথে জলরাশির মিতালী বিমোহিত করে পর্যটকদের। হাওরের জলে ক্লান্ত সূর্যের অবগাহন দেখতে সন্ধ্যা নামার আগেই ছুটে যান অনেকেই। শেষ বিকেলে স্নিগ্ধতায় সূর্যাস্তের মায়াবতী দৃশ্য বিধাতা যেন অঢেল অকৃপণ হাতে সাজিয়েছেন। ব্যাপ্ত  হাওরের ঘোর জলে গোধূলির সূর্য ডোবার অপরূপ দৃশ্য যে কাউকে নিয়ে যায় স্বপ্নিল জগতে।

290168085_709457626947308_1
হাওর-প্রকৃতির অপরূপ লীলানিকেতন। হাওরের প্রতিটা ক্ষণ উপভোগ্য। হাওরের পানিতে রাতে চাঁদের আলোর মায়াভরা স্মৃতি যে কারো হৃদয় কাড়বে। চাঁদনি রাতে নৌকায় হাওরে বেড়ানো আর মৃদু ঢেউয়ের দোল খাওয়ার স্মৃতি কখনো ভুলবার নয়। আবার তর্জে গর্জে ওঠা আফালের (তুফান) ঢেউয়ের আতঙ্ক সবকিছুই মোহনীয় প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যা স্বচক্ষে না দেখলে আফসোস থেকে যাবে।

অবশ্য, একটি স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বর্তমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের অল-ওয়েদার রোডকে দায়ী করে প্রচারণায় নেমেছেন। এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ পানি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, ‘অল-ওয়েদার রোডের সঙ্গে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার কোনোই সম্পর্ক নেই। মেঘালয় থেকে বৃষ্টির পানি নামছে। ভৌগোলিক পরিবেশগতভাবে হাওরের অবস্থানের কারণে এই বন্যা।  #

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর