হাওর বার্তা ডেস্কঃ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলোতে ডেক থেকে শুরু করে কেবিনের ভাড়া কম নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়ক পথে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ পথে হাঁটতে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের।
স্বপ্নের সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া সড়ক পরিবহন ব্যবসা এখন চাঙ্গা। নতুন নতুন পরিবহন কোম্পানির আগমন এবং নতুন নতুন বাস ও রুটের সার্ভিসে সরগরম গোটা দক্ষিনাঞ্চলের সড়কপথ।
যদিও লঞ্চ মালিকরা বলছেন দুই-একদিনের হিসেব কষে লঞ্চের যাত্রী কমেছে এমন কথা বলা যাবে না। এজন্য কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে লঞ্চের যাত্রী ধরে রাখতে ভাড়া কমানো, সেবার মান উন্নয়নসহ যাত্রীবান্ধব নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চের স্টাফরা।
বরিশাল-ঢাকা রুটের বিভিন্ন লঞ্চের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত তাদের এ রুটে তেমন একটা যাত্রী হয়না। তবে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার এই তিনদিন প্রচুর যাত্রী হয়। একসময় ছিলো যখন শুধু ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশাল অভিমূখে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার যাত্রীচাপ হতো, তবে কয়েকবছর ধরে ঢাকা থেকে বরিশাল এবং বরিশাল থেকে ঢাকা অর্থাৎ উভয়মুখী লঞ্চেই এই তিনদিন যাত্রী চাপ থাকে।
এছাড়া ঈদ-কোরবানিসহ ধর্মীয় উৎসব, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা এবং বিশেষ ছুটির সময় লঞ্চে প্রচুর যাত্রী হয়। তবে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চের যাত্রীর সংখ্যা বিশেষ করে কেবিনের যাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। এমনকি কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের তোড়জোড় থাকলেও এবারে তাও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ঈদের আগে ঢাকা থেকে বরিশালে আসতে চাওয়া মানুষের কেবিনের জন্য অগ্রিম যোগাযোগও কমে গেছে।
একটি লঞ্চের স্টাফ নাছির উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর পর এ কয়েকদিন ধরে সব কেবিন বিক্রি হয়নি কোনো লঞ্চেরই। এমনকি যেসব লঞ্চে কেবিন পাওয়াটা খুবই কষ্টের ছিলো, সেসব লঞ্চেও এখন কেবিন পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ডেকের যাত্রী সংখ্যা তেমন একটা কমেনি।
তিনি বলেন, নিজেদের মতো করে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ডেক ও কেবিনের ভাড়া অনেকটাই কমিয়ে নিতে শুরু করেছে। কোম্পানি ভেদে ডেকের ভাড়া এক থেকে দেড়শত টাকা কমিয়ে নিচ্ছে লঞ্চগুলো। আবার কেবিনের ভাড়া কমপক্ষে দুইশত টাকা কম নেওয়া হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে ১২ শত টাকার সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার টাকায় এবং ২৪ শত টাকার ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকায়ও মিলছে।
এ রুটের নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, সাধারণত ঢাকা যাওয়া আসার ক্ষেত্রে দুই একদিন আগেই লঞ্চের টিকিট করে রাখি। তবে এবার মাত্র দুদিন আগে ঢাকার যাওয়ার কথা বলতেই এক বন্ধু বললো ঘাটে গিয়ে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে এখন। ওর কথা মতো লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখি সব লঞ্চের সামনেই নৌযান শ্রমিকদের হাক-ডাক। বিভিন্ন জন বিভিন্ন সুবিধার কথা বলে লঞ্চের প্রতি যাত্রীদের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। কেউ ডেকের ভাড়া সাড়ে তিনশত থেকে কমিয়ে দুইশত করে বলছে, আবার সিঙ্গেল-ডাবল কেবিন খালি রয়েছে তাও বলছে।
তিনি বলেন, বেশ কিছু কোম্পানির লঞ্চ রয়েছে যাদের যাত্রী না হওয়াটা
স্বাভাবিক, তবে বিলাসবহুল নামিদামি কোম্পানির লঞ্চে যে কেবিন খালি পাওয়া যাবে তা বুঝিনি। যা হোক নামিদামি লঞ্চের ১২শত টাকার কেবিনে শেষ পর্যন্ত ১ হাজার টাকায় রাজধানীতে গিয়ে পৌঁছালাম।
ব্যবসায়ী ইনজামামুল হক বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া কম নেওয়া হচ্ছে এমনটা নয়, লঞ্চের স্টাফদের আচরণও ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, সিঙ্গেল কেবিন না পেয়ে গত সোমবারে একটি ডাবল কেবিনে সিঙ্গেলের ভাড়া দিয়ে ঢাকায় যাই। তবে কেবিনের দু’বেড আমি ব্যবহার করলেও কোনো ধরনের অসন্তোষ হতে দেখিনি লঞ্চের স্টাফদের।
আর ডেকের যাত্রী কাজল জানান, পারাবত লঞ্চের ডেকে দেড়শত টাকায় যাত্রীদের ঢাকায় নেওয়ার কথা বলেছে, তাই দেরি না করে তাতেই উঠে পরি। অথচ জুনের প্রথম দিনে ৩ শত টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় গিয়েছি দোকানের জন্য মালামাল আনতে।
যদিও ভাড়া কমানোটা নিজ নিজ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বা যৌথভাবে লঞ্চের ভাড়া কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মালিকরা। তবে যে যার মতো করে যাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে ভাড়া কমিয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য আশির্বাদ। এর কারণে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলো। তবে এ সেতুর কারণে যে লঞ্চের যাত্রী কমবে এটা ঠিক না। আর লঞ্চের যাত্রী যে কমেছে সেটাও এখন বলা যাচ্ছে না, এতে সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বাসের চেয়ে লঞ্চের যেমন ভাড়া কম, তেমনি আবার শিশুদের নিতে বাসের মতো লঞ্চে ভাড়া দিতে হয় না। তারওপর রাতের বেলা নিশ্চিন্তে-নিরাপদে ঘুমিয়ে যাতায়াত করা যায়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করলে লঞ্চের যাত্রী তেমনভাবে কমবে না।
তবে আগামী ২ জুলাই মালিকদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে আসন্নপবিত্র ঈদুল আযহার স্পেশাল সার্ভিস, লঞ্চের ভাড়া কমানো, যাত্রীসেবার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হতে পারে বলে জানান তিনি।