ঢাকা ১২:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব বাবা দিবস আজ বাবা মানে ঠিকানা নিরাপত্তার চাদর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাবা মানে ঠিকানা, নির্ভরতার আকাশ। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে নিরাপত্তার চাদর। বাবা মানে শক্ত খুঁটির ঘর। সন্তানের প্রতি বাবার স্নেহ-আদর যেমন পরিমাপ করা যায় না, তেমনি মাপা যায় না সন্তানকে ঘিরে বাবার স্বপ্ন-সাধের সীমানাও। আর বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তার পরও পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাবা দিবসের প্রচলন। আজ বছর ঘুরে সেই রোববার, বিশ্ব বাবা দিবস। বিভিন্ন দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

শিশুর অন্তরে যে পিতা ঘুমিয়ে আছে আজ তাকে নতুন করে আরও একবার ভালোবেসে ফেলার দিন। বছরের এই একটি দিনকে প্রিয় সন্তানরা হৃদয়ে ধারণ করে আলাদা করে নিয়েছে। ভাষা বা স্থানভেদে ‘বাবা’ শব্দটির উচ্চারণ বদলায়। তবে বদলায় না রক্তের টান। জার্মানিতে যিনি ‘ফ্যাটা’, আমেরিকার ‘ফাদার’, ভারতের ‘পিতাজি’, দক্ষিণ আফ্রিকার ‘পা’, মালয়ের ‘আবাম্বু’ বাংলায় হয়ে যায় ‘বাবা-আব্বা’।

গত বছর অগ্নিকাণ্ডে বাবাকে হারান নারায়ণগঞ্জের কিশোর মিনহাজ চৌধুরী। বলছিলেন, বাবা নেই-জীবনটাই যেন শূন্য। টাকা পয়সা আছে, বাবার ব্যবসাও রয়ে গেছে। নতুন বাড়ি হয়েছে। কিন্তু, কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে। যে শূন্যস্থান কোনো কিছু দিয়ে পূরণ হচ্ছে না। আমার কোনো কিছু না থাকলেও, বাবা যদি সামনে থাকত, আর কিছুই দরকার ছিল না। বার্ন ইউনিটে তার সামনেই বাবা চিরতরে চলে গেছেন। বাবার কবরে গিয়ে কান্না করি, কিন্তু বাবার মুখের শব্দ শুনি না। মাথায় হাত রেখে বলে না, মিনহাজ কাঁদিস না। কথাগুলো বলতে গিয়ে শিশুর মতো কাঁদছিলেন কিশোর মিনহাজ।

ঢাকা থেকে প্রায় সময় মধ্যরাত, কখনোবা ভোররাতে গ্রামের বাড়ি আখাউড়া পৌঁছতেন গুনগুন নামের এক যুবক। তার বাবা ভোররাত পর্যন্ত দরজা খোলা রেখে অপেক্ষা করতেন কখন সন্তান আসবে। একদিন নয়, মাস নয়, বছরের পর বছর এমন করে সন্তানের অপেক্ষায় থাকতেন গুনগুনের বাবা। গ্রামের বাড়িতে সন্তান পৌঁছতেই শতবর্ষী বাবা মুহূর্তেই যেন যুবক হয়ে উঠতেন। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতেন। যত্ন করে রাখা লুঙ্গি বের করে দিতেন, গরম করে রাখা পানি দিয়ে গোসল করতে বলতেন। ভোর হতেই বাড়ির মহিলাদের বলতেন, গুনগুনের জন্য রান্না করো, পিঠা বানাও। সন্তান যখন নাস্তা করত, বাবা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন। অশ্রু গড়িয়ে পড়ত। গুনগুন বলছিল, যার বাবা নেই-কেবল সেই জানে কী হারিয়েছে। বাবাবিহীন পৃথিবী সন্তানের কাছে শূন্যই থেকে যায়।

প্রায় এক যুগ আগে বাবাকে হারিয়েছেন রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আলী আকবর খান। জানালেন, তার বিশাল ব্যবসা, দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান। বাবার মতো কাউকে পান না। কত কিছুই না দেশে নিয়ে আসেন, তবু মনে হয় শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন। কেন? বাবার জন্য কিছু আনতে না পারা মানেই শূন্য মনে হয়। বাবা দিবস ছাড়াও তিনি প্রতি শুক্রবার আজিমপুর কবরস্থানে জুমার নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করেন। ওখানেই শুইয়ে আছে বাবা। বিশ্লেষকরা বলেন, যাদের বাবা জীবিত আছে, আপন জীবনের আলোয় ভরে রাখুন মানুষটিকে। জড়িয়ে ধরুন। কপালে চুমু খান। বাবার জন্য উপহার নিয়ে আসুন। অনেকেই বলে, বাবাকে ভালোবাসতে নির্দিষ্ট কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসাই বড়, উপহার কী! কিন্তু ছোট্ট থেকে সন্তানকে যেমন ভালোবেসেছেন বাবা, সন্তানের একটু হাসি দেখার জন্য খুঁজে খুঁজে নিয়ে এসেছেন সন্তানের পছন্দের জিনিস। বাসায় যেন খালি হাতে ঢুকতেই পারতেন না। তেমনি এখন সেই ভার সন্তানের ওপরেও বর্তায়। বিভিন্ন উপহার দেওয়াসহ বাবার সঙ্গে দিনটি উদযাপন করা।

দিবসটি ঘিরে ফ্রান্সের প্রথা হলো, বাবা জীবিত থাকলে সন্তানরা তাকে লাল গোলাপ দেয়। বাবা না থাকলে, বাবার সমাধিতে সাদা গোলাপ রেখে আসে। বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোনো প্রথা নেই। বাবা বেঁচে থাকুক বা না থাকুক। ভাবুন, বিশেষ দিনটিতে আপনার বাবাকে কেমন করে ভালোবাসতে চান।

বাবা দিবসের প্রচলন বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতৃদিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিশ্ব বাবা দিবস আজ বাবা মানে ঠিকানা নিরাপত্তার চাদর

আপডেট টাইম : ০৯:৩৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাবা মানে ঠিকানা, নির্ভরতার আকাশ। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে নিরাপত্তার চাদর। বাবা মানে শক্ত খুঁটির ঘর। সন্তানের প্রতি বাবার স্নেহ-আদর যেমন পরিমাপ করা যায় না, তেমনি মাপা যায় না সন্তানকে ঘিরে বাবার স্বপ্ন-সাধের সীমানাও। আর বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তার পরও পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাবা দিবসের প্রচলন। আজ বছর ঘুরে সেই রোববার, বিশ্ব বাবা দিবস। বিভিন্ন দেশে জুন মাসের তৃতীয় রোববারকে বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

শিশুর অন্তরে যে পিতা ঘুমিয়ে আছে আজ তাকে নতুন করে আরও একবার ভালোবেসে ফেলার দিন। বছরের এই একটি দিনকে প্রিয় সন্তানরা হৃদয়ে ধারণ করে আলাদা করে নিয়েছে। ভাষা বা স্থানভেদে ‘বাবা’ শব্দটির উচ্চারণ বদলায়। তবে বদলায় না রক্তের টান। জার্মানিতে যিনি ‘ফ্যাটা’, আমেরিকার ‘ফাদার’, ভারতের ‘পিতাজি’, দক্ষিণ আফ্রিকার ‘পা’, মালয়ের ‘আবাম্বু’ বাংলায় হয়ে যায় ‘বাবা-আব্বা’।

গত বছর অগ্নিকাণ্ডে বাবাকে হারান নারায়ণগঞ্জের কিশোর মিনহাজ চৌধুরী। বলছিলেন, বাবা নেই-জীবনটাই যেন শূন্য। টাকা পয়সা আছে, বাবার ব্যবসাও রয়ে গেছে। নতুন বাড়ি হয়েছে। কিন্তু, কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে। যে শূন্যস্থান কোনো কিছু দিয়ে পূরণ হচ্ছে না। আমার কোনো কিছু না থাকলেও, বাবা যদি সামনে থাকত, আর কিছুই দরকার ছিল না। বার্ন ইউনিটে তার সামনেই বাবা চিরতরে চলে গেছেন। বাবার কবরে গিয়ে কান্না করি, কিন্তু বাবার মুখের শব্দ শুনি না। মাথায় হাত রেখে বলে না, মিনহাজ কাঁদিস না। কথাগুলো বলতে গিয়ে শিশুর মতো কাঁদছিলেন কিশোর মিনহাজ।

ঢাকা থেকে প্রায় সময় মধ্যরাত, কখনোবা ভোররাতে গ্রামের বাড়ি আখাউড়া পৌঁছতেন গুনগুন নামের এক যুবক। তার বাবা ভোররাত পর্যন্ত দরজা খোলা রেখে অপেক্ষা করতেন কখন সন্তান আসবে। একদিন নয়, মাস নয়, বছরের পর বছর এমন করে সন্তানের অপেক্ষায় থাকতেন গুনগুনের বাবা। গ্রামের বাড়িতে সন্তান পৌঁছতেই শতবর্ষী বাবা মুহূর্তেই যেন যুবক হয়ে উঠতেন। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতেন। যত্ন করে রাখা লুঙ্গি বের করে দিতেন, গরম করে রাখা পানি দিয়ে গোসল করতে বলতেন। ভোর হতেই বাড়ির মহিলাদের বলতেন, গুনগুনের জন্য রান্না করো, পিঠা বানাও। সন্তান যখন নাস্তা করত, বাবা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন। অশ্রু গড়িয়ে পড়ত। গুনগুন বলছিল, যার বাবা নেই-কেবল সেই জানে কী হারিয়েছে। বাবাবিহীন পৃথিবী সন্তানের কাছে শূন্যই থেকে যায়।

প্রায় এক যুগ আগে বাবাকে হারিয়েছেন রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আলী আকবর খান। জানালেন, তার বিশাল ব্যবসা, দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান। বাবার মতো কাউকে পান না। কত কিছুই না দেশে নিয়ে আসেন, তবু মনে হয় শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন। কেন? বাবার জন্য কিছু আনতে না পারা মানেই শূন্য মনে হয়। বাবা দিবস ছাড়াও তিনি প্রতি শুক্রবার আজিমপুর কবরস্থানে জুমার নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করেন। ওখানেই শুইয়ে আছে বাবা। বিশ্লেষকরা বলেন, যাদের বাবা জীবিত আছে, আপন জীবনের আলোয় ভরে রাখুন মানুষটিকে। জড়িয়ে ধরুন। কপালে চুমু খান। বাবার জন্য উপহার নিয়ে আসুন। অনেকেই বলে, বাবাকে ভালোবাসতে নির্দিষ্ট কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। ভালোবাসাই বড়, উপহার কী! কিন্তু ছোট্ট থেকে সন্তানকে যেমন ভালোবেসেছেন বাবা, সন্তানের একটু হাসি দেখার জন্য খুঁজে খুঁজে নিয়ে এসেছেন সন্তানের পছন্দের জিনিস। বাসায় যেন খালি হাতে ঢুকতেই পারতেন না। তেমনি এখন সেই ভার সন্তানের ওপরেও বর্তায়। বিভিন্ন উপহার দেওয়াসহ বাবার সঙ্গে দিনটি উদযাপন করা।

দিবসটি ঘিরে ফ্রান্সের প্রথা হলো, বাবা জীবিত থাকলে সন্তানরা তাকে লাল গোলাপ দেয়। বাবা না থাকলে, বাবার সমাধিতে সাদা গোলাপ রেখে আসে। বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কোনো প্রথা নেই। বাবা বেঁচে থাকুক বা না থাকুক। ভাবুন, বিশেষ দিনটিতে আপনার বাবাকে কেমন করে ভালোবাসতে চান।

বাবা দিবসের প্রচলন বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতৃদিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়।