হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দেশের অন্যতম কক্সবাজারের রামু রাবার বাগানের জমি জবর দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি রোহিঙ্গা ভূমিসদ্যু চক্র। চক্রটি গত কয়েকদিনে বাগানের ৩৫ একর এলাকাজুড়ে সৃজিত প্রায় ৯ হাজার রাবার গাছের চারা কেটে দিয়েছে।
এতে বাগানের ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি বাগান কর্তৃপক্ষের।
রোববার (১২ জুন) এ ঘটনায় রামু থানায় ১০ জন রোহিঙ্গার নাম উল্লেখ করে মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
থানার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা মৌলভী মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ বর্মাইয়া মৌলভী এবং রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম নামের দুজনের নেতৃত্বে রাবার বাগানের জমি দখলের উদ্দেশ্যে চারাগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাগানটির পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছে।
এসব রোহিঙ্গারা স্থানীয় সমাজবিরোধী কিছু লোক দলে নিয়ে সরকারি রাবার বাগানটির পাহাড়ি জমি জবর দখলে মেতে উঠেছে।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গড়ে তোলা দেশের প্রথম মাতৃবাগান এটি। বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় জানান, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের মালিকানাধীন দুই হাজার ৭০০ একর পাহাড়ি জমির ওপর ১৯৬১ সালে বাগানটি যাত্রা শুরু করে। ইতোমধ্যে এটি রাবার শিল্প বিকাশের পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিণত হয়। কিন্তু এতে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কিছু ভুমিগ্রাসীর।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগে জোয়ারিয়ানালা মিঠাছড়া এলাকার বাগানের ১৩ নম্বর ব্লকে ৫০ একর পাহাড়ি জমি জুড়ে নতুন করে রাবার চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ৩৫ একর জমিতে রাবার চারা রোপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল।
কিন্তু সৃজিত বাগানের জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মিতারছড়া এলাকায় এ ভূমিগ্রাসী চক্র কয়েকদিন ধরে ৮ হাজার ৭০০টি চারা গাছ কেটে দেয়। এছাড়া এসব পাহাড়ি জমি জবর দখলের উদ্দেশ্য প্লাস্টিকের ছাউনী দিয়ে ১০-১২টি ঘর তৈরীর কাজ শুরু করে।
তিনি জানান, ভুমিদস্যু চক্রটি বাগানের গাড়ি চলাচল বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ওই স্থানে চলাচলের রাস্তাটিও কেটে দেয়। সর্বশেষ চারা রোপনে জড়িত শ্রমিকদের মারধরের হুমকী দিলে বাগান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে অবহিত করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার ও শনিবার (১১ জুন) বাগানের ওই স্থানে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা ও ওসি আনোয়ারুল হোসাইন গিয়ে পাহাড়ি জমি দখলের চেষ্টা, বিপুল পরিমাণ চারা গাছ কেটে দেওয়া এবং চলাচলের রাস্তুা কেটে বিচ্ছিন্ন করার সত্যতা পান। এমনকি পরিদর্শনকালে জবর দখলকারী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে ইউএনও প্রণয় চাকমার বাক-বিতণ্ডাও হয় বলে জানান ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল।
ইউএনও প্রণয় চাকমা জানান, শনিবার জবর দখলকারীদের নিষেধ করার পরও তারা পরদিন আবার বাগানের বিপুল পরিমাণ চারা কেটে দিয়েছে। এমনকি তারা বাগানের জমি জবর দখলের উদ্দেশে সেখানে থাকতে নতুন করে ১০-১২টি ঝুপড়ি ঘরও তৈরী করেছে।
বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে ইউএনও আরও বলেন, কয়েকজন রোহিঙ্গার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একটি দল সরকারি রাবার বাগানের জমি দখল করতে সেখানে মহড়া দিচ্ছে। তারা রাবার গাছের চারা কেটে অন্তত ২৫-২৬ লাখ টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট করেছে।
এ ঘটনায় রোববার রামু থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান প্রণয় চাকমা।