হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাল্লা দিয়ে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র। শহরাঞ্চল তো দূরে থাক এখন গ্রামেও তাল গাছ আগের মতো দেখা যায় না। তাল গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে হারাতে বসেছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা।
শিল্পী বা কারিগরি পাখি বাবুই। তাল বা খেজুর গাছে নিপুণভাবে বাসা তৈরিতে তাদের জুড়ি মেলা ভার। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রামে বেশকিছু তালগাছে বাবুই পাখির বাসার দেখা মেলে। বাড়িগ্রাম-বানিবহ আঞ্চলিক সড়কটির পাশে তালগাছে শৈল্পিক দক্ষতায় বাসা বেঁধেছে এরা। সারাক্ষণ কিচির মিচির কলকাকলিতে দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে এই পথ দিয়ে যাতায়াতকারী পথচারীদের।
দেখা যায়, বানিবহের শহীদ পূচুরিয়া গ্রামের সড়কের পাশেই তালগাছে শৈল্পিক দক্ষতায় খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে তালগাছের ঝুলন্ত পাতার সঙ্গে নিখুঁতভাবে বাসা বুনছে বাবুই পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত করে রাখছে এলাকাটি।
কথা হয় স্থানীয় আবসার উদ্দিন সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে যে গাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে সেই গাছটির বয়স চৌদ্দ থেকে পনের বছর হবে। বেশ কিছুদিন ধরে এই গাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। অনেক দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে। অনেকেই ছবি তুলে নিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকমান মণ্ডল বলেন, বাবুই পাখি থাকাতে ফসলে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারছে না। আমরা এলাকাবাসি সব সময় পাখিদের দেখা শোনা করে থাকি। কেউ যেন পাখি শিকার না করে বা পাখির বাসা নষ্ট না করে।
কিশোর মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন ধরেই বাবুই পাখি আমাদের এলাকায় বাসা বেঁধে আছে। দূর-দুরান্ত থেকেও নানা বয়সি মানুষ পাখি ও পাখির বাসা দেখতে আসে। বাবুই পাখির বাসা দেখতে খুবই ভালো লাগে।
তালগাছের মালিক আব্দুস ছামাদ বলেন, তালগাছগুলো পনেরো বছর আগে নিজ হাতে লাগিয়েছি। এখন অনেক বড় হয়েছে। সেই গাছে গত কয়েক বছর ধরে বাবুই পাখি বাসা বাঁধছে। পাখির যেন কোন ক্ষতি না হয় এবং পাখিরা যেন তার গাছ থেকে চলে না যায় সেজন্য গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি না।
কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী দেবকান্ত বিশ্বাস বলে, ছোট বেলা থেকে বাবুই পাখির নাম শুনতে শুনতে বড় হইছি। বইয়েও পড়েছি। কিন্তু বাবুই পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন সচরাচর বাবুই পাখি দেখা যায় না। শুনেছি বাড়িগ্রামের কয়েকটি গাছে বাবুই পাখি বাসা বেঁধেছে। সেটা দেখার জন্য শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে বাড়িগ্রামে এসেছি।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. নুরুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, বৃক্ষ নিধন ও নির্বিচারে পাখি শিকারের কারণে বাবুই পাখির বাসা এখন খুব একটা দেখা যায় না। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে পাখি নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাখিদের অভয়ারণ্য সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, বাবুই পাখি বিলুপ্ত হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। বাবুই পাখি সাধারণত তাল ও খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাল ও খেজুর গাছ কেটে ফেলছে মানুষ।
আরেকটি কারণ হচ্ছে, ফসলে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারছে না। এসকল বিষয় মাথায় রেখে আমরা সচেতনতা কর্মসূচি পালন করতে পারি।