হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইউক্রেনে রাশিয়ার অধিকৃত দুটি শহরে স্থানীয় বাসিন্দাদের রুশ পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ। সর্বপ্রথম মুক্ত হওয়া শহর দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন এবং মেলিতোপোলের বাসিন্দাদের জন্য এ সুযোগ দিয়েছে তারা। তবে একে ‘রাশিফিকেশন’ হিসেবে উল্লেখ করে তার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেন। এদিকে, রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট একদিনে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর তিনটি সুখোই সু-২৫ অ্যাটাক এয়ারক্রাফটকে গুলি করে ধ্বংস করেছে
রুশ সংবাদ সংস্থা তাস বলছে, শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৩ জন খেরসনের অধিবাসীকে প্রথম রাশিয়ান পাসপোর্ট দেয়া হয়। সংবাদ সংস্থাটি বলছে, রাশিয়ান পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য হাজার হাজার ইউক্রেনিয়ান নাগরিক আবেদন করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়া নিযুক্ত সামরিক গভর্নর ভলোদোমির সালদো বলেছেন, ‘খেরসনে আমাদের সকল কমরেড যত দ্রুত সম্ভব (রাশিয়ান) পাসপোর্ট এবং নাগরিকত্ব পেতে চান।’ রাশিয়ান কার্যক্রমকে নিজেদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে ইউক্রেন তার কঠোর সমালোচনা করেছে। ইউক্রেন বলছে, পুতিনের এই আদেশ আইনত অবৈধ।
ইউক্রেনের তিনটি সু-২৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারী প্রতিনিধি, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ গতকাল জানিয়েছেন, ‘রাশিয়ান বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খারকিভ অঞ্চলের ডলগেনকোয়ে এলাকায় ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর একটি সু-২৫ বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।’ ‘অপারেশনাল-কৌশলগত এবং সেনা বিমান চলাচল তিনটি কমান্ড পোস্ট এবং বাহিনী ও সামরিক সরঞ্জামের ঘনত্বের ২৫টি এলাকায় আঘাত করেছে,’ কোনাশেনকভ বলেছেন এবং যোগ করেছেন, ‘ডোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের রাইগোরোডক এবং চেরকাসকোয়ে জেলায় ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর দুটি সু-২৫ বিমানকে গুলি করে গুলি করে ফাইটার এয়ারক্রাফট।’
কূটনীতিক আরও উল্লেখ করেছেন যে, রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জৈবিক এবং টক্সিন অস্ত্র কনভেনশন (বিটিডব্লিউসি) মেনে চলার জন্য এবং এই প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করার জন্য একটি দায়িত্বশীল পদ্ধতি গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে অভিযানের সময় সেখানকার বিভিন্ন পরীক্ষাগারে জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা ও তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায় রাশিয়া। ইতোমধ্যে তারা বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপণ করেছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে চীন : চীনা সরকার ইউক্রেনের সংঘাতে আগ্রহী নয়, তবে একই সময়ে, তারা বিশ্বাস করে না যে, নিষেধাজ্ঞাগুলি সঙ্কট সমাধানে সাহায্য করতে পারে। রোববার চীনা স্টেট কাউন্সিলর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা ফোরামে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি সংঘাত বা যুদ্ধই শেষ জিনিস যা চীন ইউক্রেনে দেখতে চায়। একই সময়ে, আমরা বিশ্বাস করি না যে, সর্বাধিক চাপ বা নিষেধাজ্ঞা সমস্যার সমাধান করতে পারে। এটি আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং সমস্যাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।’ চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ বক্তৃতা ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।
চীন সরকার রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে সংলাপকে সমর্থন করে এবং আশা করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার সাথে শীঘ্রই যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করবে, ফেংহে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘চীন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনাকে সমর্থন করে। আমরা আশা করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার সাথে শীঘ্রই যুদ্ধবিরতির পরিস্থিতি তৈরি করতে আলোচনা করবে।’
রাশিয়ার ব্যাপারে ইউরোপের সঙ্গে একমত নয় সার্বিয়া : সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট শুক্রবার সেদেশে সফররত জার্মান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপের ব্যাপারে সার্বিয়ার অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে ভিন্ন বলে উল্লেখ করেন। বৈঠক শেষে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ও জার্মান প্রধানমন্ত্রী যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, জার্মান চ্যান্সেলর ‘স্পষ্টভাবে ও জোর দিয়ে’ সার্বিয়াকে ইইউ’র সাথে একযোগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের দাবি জানিয়েছে।
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, জার্মানি জ্বালানি খাতে সার্বিয়াকে সাহায্য দেয়ার কথাও বলেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সার্বিয়ার অবস্থান ভিন্ন। তিনি বলেন, কয়েক শতাব্দী ধরে সার্বিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে বিশেষ ও অসাধারণ সম্পর্ক রয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সার্বিয়ার ভূখন্ডের অখন্ডতার বিষয়ে রাশিয়া সমর্থন দিয়েছে এবং দু’দেশের মধ্যে জ্বালানি খাতে সহযোগিতা রয়েছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের ভাগ্য স্থির করবে ইইউ : আর একটা সপ্তাহ। তার মধ্যেই হয়তো স্পষ্ট হয়ে যাবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এ ইউক্রেন স্থান পাবে, কি না। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেয়েন শনিবার একটি বৈঠকে এই কথা জানিয়েছেন। কিয়েভে শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন উরসুলা। যুদ্ধ চলাকালীন এটি তার দ্বিতীয় বার কিয়েভ সফর। এ বারের বৈঠক ছিল সম্পূর্ণ ইইউ নিয়ে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ইইউ-এ যোগ দেয়ার আবেদন জানিয়েছিল ইউক্রেন। তার চার দিন পরেই রাশিয়া হামলা করে। মস্কো চায় না প্রতিবেশী দেশটি ইইউ-এ যোগ দিক।
অতীতে সোভিয়েতের অন্তর্ভূক্ত ছিল ইউক্রেন। সোভিয়েত পতনের পরে তারা আলাদা হয়। এ নিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলেও এত দিন শোনা গিয়েছে, ইইউ-এ জায়গা দেয়া হবে না ইউক্রেনকে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে কিছুটা সরেছে ইইউ। এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য বেশ কিছু মাপকাঠি রয়েছে। সে সবে পাশ করলে তবে মেলে সদস্যপদ। যেমন, দেশে গণতন্ত্র থাকতে হবে, যথাযথ আইন থাকবে এবং মজবুত অর্থনীতি থাকবে। জেেেলনস্কির উদ্দেশ্যে শনিবার উরসুলা বলেন, ‘আপনি দেশের আইনকানুন অনেকটাই মজবুত করেছেন। কিন্তু আরও সংস্কার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে দুর্নীতি রুখতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ জেলেনস্কি অনুরোধ করেছেন, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে যদি বিষয়টি আলাদ ভাবে দেখে অবিলম্বে সদস্য পদ দেয়া হয়। বৈঠকের পরে একটি যুগ্ম সাংবাদিক বৈঠক করেন উরসুলা ও জেলেনস্কি। সেখানে সাংবাদিকদের সামনে খোলাখুলিই উরসুলা বলেন, ‘শনিবারকের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই কথার উপর ভিত্তি করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ সূত্র : বিবিসি নিউজ, সিআরআই, তাস, এপি।
জৈব অস্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে জবাবদিহি করতে হবে : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি প্রতিনিধি মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, মস্কো সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে মার্কিন সামরিক-জৈবিক কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর চায়। বার্তা সংস্থা তাস-এর সাথে একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি (ওয়াশিংটন) সাধারণ তথ্য প্রদান করবে না, তবে সোভিয়েত-পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়া দেশগুলোতে মার্কিন সামরিক জৈবিক কার্যকলাপের সাথে রাশিয়ান পক্ষের দ্বারা উত্থাপিত নির্দিষ্ট সমস্যাগুলির বিষয়ে সারগর্ভ ব্যাখ্যা দেবে।’