ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিধবা বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় কর্মচারীকে দুই টুকরো করে হত্যা করে হোটেল মালিক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২
  • ১১১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হোটেল কর্মচারী মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫) কে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় জড়িত হোটেল মালিক মো. হারিছ মিয়া (৫০) কে গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেন ১৬৪ ধারায় হারিছ মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

স্বীকারোক্তিতে সে জানিয়েছে, হারিছ মিয়ার বিধবা বোনকে কর্মচারী মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। এছাড়া সে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে হারিয়ে ফেলার অজুহাত দেখায়।

এতে হারিছ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমের ওষুধ মেশানো কোক খাইয়ে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। লাশের দুই টুকরোর মধ্যে একটি অংশ একটি কবরের পাশে এবং অন্য অংশটি কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়।

নিহত মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে।
অন্যদিকে ঘাতক মো. হারিছ মিয়া একই গ্রামের মৃত আব্দুল হাফিজের ছেলে। পার্শ্ববর্তী মরিচখালী বাজারে তার ভাতের হোটেল রয়েছে। নিহত মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া এই হোটেলে কাজ করতো।

পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৭ মে দুপুরে সুলতাননগর গ্রামের একটি কবরের পাশ থেকে মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়ার কোমর থেকে খণ্ডিত লাশের উপরের অংশ উদ্ধার করা হয়।

দ্বিখণ্ডিত লাশ পাওয়ার পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পর্রিদশন করে এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

এ ঘটনায় নিহত মতিউর রহমানের ছেলে মো. রমজান বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় মামলা (নং-২৩, তাং- ২৭/০৫/২০২২ খ্রি., ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড) দায়ের করার পর মামলাটি পিবিআই সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই বৃহস্পতিবার (৯ জুন) মামলাটি গ্রহণ করে এবং পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খানকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ভোররাত আড়াইটার দিকে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জের জিমটি বাজার এলাকায় অভিযান করে পিবিআই সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে মো. হারিছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করায় তাকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান জানান, নিহত মতিউর রহমান আসামি হারিছ মিয়ার হোটেলের কমর্চারী হলেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অনুমান ৫/৬ বছর পূর্বে মতিউর রহমানের স্ত্রী মারা যায়।

এরপর হতে সে দিনে হোটেলে কাজ করে রাতে হারিছ মিয়ার সাথেই তার হোটেল ঘরে ঘুমাতো। গত ১৩ ফাল্গুন মতি মিয়া তার ছোট মেয়ের সংসারে ফার্নিচার কিনে দেওয়ার কথা বলে হারিছ মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়।

হত্যাকাণ্ডের ৩/৪ দিন পূর্বে মতি মিয়া তার বড় মেয়ের জামাইকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে পূনরায় হারিছ মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়।

মতি মিয়া এ টাকা নিয়ে সিলেটে যায় এবং সিলেট থেকে ফেরার পর ২৪ মে সকালে হারিছ মিয়াকে মতি মিয়া জানায়, ধার নেওয়া ৫০ হাজার টাকা সে হারিয়ে ফেলেছে।

এছাড়া হারিছ মিয়ার বিধবা বোন রেজিয়াকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মতি মিয়া। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সে ২১ মে দোলেনা নামের আরেক নারীকে বিয়ে করে।

টাকা ধার নিয়ে হারানোর অজুহাত দেখানো এবং বিধবা বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় মতি মিয়ার ওপর হারিছ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সে অনুযায়ী, গত ২৪ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মতি মিয়া হারিছ মিয়ার দোকানে গেলে হারিছ মিয়া পরিকল্পিতভাবে মতি মিয়াকে নিয়ে কেক-পাউরুটি খায় এবং সু-কৌশলে কোকের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়ে মতি মিয়াকে খাওয়ায়।

এরপর মতি মিয়া দোকান ঘরে ঘুমিয়ে পড়লে রাত ১২টার দিকে হারিছ মিয়া ঘুমন্ত মতি মিয়াকে ধারালো দা দিয়া নৃশংসভাবে কুপিয়ে দেহকে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যা করে।

পরে লাশ গুম করার জন্য মতি মিয়ার দ্বিখণ্ডিত লাশের একটি অংশ সুলতাননগর গ্রামের ছলেমন্নেছার কবরের পাশে রেখে আসে এবং অপর অংশটি কাঁথা দিয়া মুড়িয়ে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়।

আসামি হারিছ মিয়ার দেখানো মতে প্রকৃত ঘটনাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সিআইডি, ফরেনসিক ইউনিট, ময়মনসিংহ জেলা কর্তৃক ঘটনাস্থল হতে পর্যাপ্ত বস্তুগত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিধবা বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় কর্মচারীকে দুই টুকরো করে হত্যা করে হোটেল মালিক

আপডেট টাইম : ১০:৪৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হোটেল কর্মচারী মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫) কে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। এ ঘটনায় জড়িত হোটেল মালিক মো. হারিছ মিয়া (৫০) কে গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেন ১৬৪ ধারায় হারিছ মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

স্বীকারোক্তিতে সে জানিয়েছে, হারিছ মিয়ার বিধবা বোনকে কর্মচারী মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলে। এছাড়া সে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে হারিয়ে ফেলার অজুহাত দেখায়।

এতে হারিছ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুমের ওষুধ মেশানো কোক খাইয়ে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। লাশের দুই টুকরোর মধ্যে একটি অংশ একটি কবরের পাশে এবং অন্য অংশটি কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়।

নিহত মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে।
অন্যদিকে ঘাতক মো. হারিছ মিয়া একই গ্রামের মৃত আব্দুল হাফিজের ছেলে। পার্শ্ববর্তী মরিচখালী বাজারে তার ভাতের হোটেল রয়েছে। নিহত মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া এই হোটেলে কাজ করতো।

পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৭ মে দুপুরে সুলতাননগর গ্রামের একটি কবরের পাশ থেকে মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়ার কোমর থেকে খণ্ডিত লাশের উপরের অংশ উদ্ধার করা হয়।

দ্বিখণ্ডিত লাশ পাওয়ার পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পর্রিদশন করে এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

এ ঘটনায় নিহত মতিউর রহমানের ছেলে মো. রমজান বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় মামলা (নং-২৩, তাং- ২৭/০৫/২০২২ খ্রি., ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড) দায়ের করার পর মামলাটি পিবিআই সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই বৃহস্পতিবার (৯ জুন) মামলাটি গ্রহণ করে এবং পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খানকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ভোররাত আড়াইটার দিকে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জের জিমটি বাজার এলাকায় অভিযান করে পিবিআই সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে মো. হারিছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করায় তাকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান জানান, নিহত মতিউর রহমান আসামি হারিছ মিয়ার হোটেলের কমর্চারী হলেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অনুমান ৫/৬ বছর পূর্বে মতিউর রহমানের স্ত্রী মারা যায়।

এরপর হতে সে দিনে হোটেলে কাজ করে রাতে হারিছ মিয়ার সাথেই তার হোটেল ঘরে ঘুমাতো। গত ১৩ ফাল্গুন মতি মিয়া তার ছোট মেয়ের সংসারে ফার্নিচার কিনে দেওয়ার কথা বলে হারিছ মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়।

হত্যাকাণ্ডের ৩/৪ দিন পূর্বে মতি মিয়া তার বড় মেয়ের জামাইকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে পূনরায় হারিছ মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়।

মতি মিয়া এ টাকা নিয়ে সিলেটে যায় এবং সিলেট থেকে ফেরার পর ২৪ মে সকালে হারিছ মিয়াকে মতি মিয়া জানায়, ধার নেওয়া ৫০ হাজার টাকা সে হারিয়ে ফেলেছে।

এছাড়া হারিছ মিয়ার বিধবা বোন রেজিয়াকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মতি মিয়া। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সে ২১ মে দোলেনা নামের আরেক নারীকে বিয়ে করে।

টাকা ধার নিয়ে হারানোর অজুহাত দেখানো এবং বিধবা বোনকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় মতি মিয়ার ওপর হারিছ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

সে অনুযায়ী, গত ২৪ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মতি মিয়া হারিছ মিয়ার দোকানে গেলে হারিছ মিয়া পরিকল্পিতভাবে মতি মিয়াকে নিয়ে কেক-পাউরুটি খায় এবং সু-কৌশলে কোকের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়ে মতি মিয়াকে খাওয়ায়।

এরপর মতি মিয়া দোকান ঘরে ঘুমিয়ে পড়লে রাত ১২টার দিকে হারিছ মিয়া ঘুমন্ত মতি মিয়াকে ধারালো দা দিয়া নৃশংসভাবে কুপিয়ে দেহকে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যা করে।

পরে লাশ গুম করার জন্য মতি মিয়ার দ্বিখণ্ডিত লাশের একটি অংশ সুলতাননগর গ্রামের ছলেমন্নেছার কবরের পাশে রেখে আসে এবং অপর অংশটি কাঁথা দিয়া মুড়িয়ে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়।

আসামি হারিছ মিয়ার দেখানো মতে প্রকৃত ঘটনাস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সিআইডি, ফরেনসিক ইউনিট, ময়মনসিংহ জেলা কর্তৃক ঘটনাস্থল হতে পর্যাপ্ত বস্তুগত সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।