হাওর বার্তা ডেস্কঃ একজন আদর্শ ও অগ্রগামী কৃষক হলেন শাহজাহান মিয়া। নিজের চেষ্টা, আন্তরিকতা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় একের পর এক অপ্রচলিত ফসল উৎপাদন করে গোটা নীলফামারী জেলায় মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
নীলফামারীর অবহেলিত উপজেলা কিশোরগঞ্জ। এ উপজেলায় সমতল মাটিতে চা চাষ, কফি ও আগর চাষে কৃষকরা বিরাট সাফল্য দেখিয়েছেন।
উপজেলার মাস্টারপাড়া এলাকার কৃষক শাহজাহান মিয়া। পৈতৃক সূত্রে ৪০ বিঘা (৩৩ শতাংশে বিঘা) জমি পান। সেসব জমির কিছু অংশে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন। এবছর আবাদ করেন ব্লাক রাইস, বাসমতি ধান যা আশাতীত ফলন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১০০, ব্রি ধান-৮৮ চাষ করে ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করেন। বেশি তেলের জন্য রকেট সরিষাও আবাদ করে পান ভালো ফল। আগামীতে ব্যাপক হারে কিনোয়া চাষের পরিকল্পনা করছেন। সেসঙ্গে স্কভিয়া, রামবুটানও চাষের চেষ্টা করছেন তিনি।
সঙ্গে কথা হয় কৃষক শাহজাহান মিয়ার। ওই কৃষক জানান, বাউচিয়ার বীজ দিনাজপুরের এক লোক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করেন। তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করে তিনি জমিতে লাগান। ২০ শতক জমিতে ফলন হয়েছে প্রায় ৪৫ কেজি। প্রতিকেজি ৮০০ টাকা হিসাবে ৩৬ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেন। আশেপাশের কৃষককেও তিনি দিয়ে বাকিটা বীজ হিসাবে রেখেছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা। চিকিৎসকের মতে, ওষুধি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর দানাশস্য বাউচিয়া পানিতে ভিজে রেখে খেলে শরীরের ওজন কমে, ডায়াবেটিক ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। চিয়া সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।
কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, ভাতের বিকল্প ফসল হচ্ছে কিনোয়া। কিনোয়া একটি অত্যন্ত উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন খাবার। গেল বছর ৭০ শতক জমিতে চাষাবাদ করে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। বড় শপিংমলের মূল ক্রেতা। তারা পরীক্ষা করে এসব কিনে থাকেন। এবছর বেশকিছু জমিতে এটি করার চিন্তাভাবনা করছি।
বাউচিয়া ও কিনোয়া দুটোই মেক্সিকোর। তিনি বলেন, নতুন নতুন জাতের ফসল উৎপাদন করে এলাকায় মানুষের মাঝে বিতরণ করছি। আমি একদিন না থাকলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব আবাদ করে লাভবান হবেন এবং এলাকায় কৃষি অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষক শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। তাঁর বড় মেয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ছোট ছেলে প্রাথমিকের ছাত্র। মাস্টারপাড়া মোড়ে তাঁর সার ও কীটনাশকের দোকান রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, কৃষক শাহজাহান আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। নিত্য নতুন আবাদে আগ্রহী তিনি। সার্বক্ষণিক কৃষি বিভাগের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তিনি পর পর দুইবছর নীলফামারী জেলার শ্রেষ্ঠ চাষি নির্বাচিত হয়েছেন।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবু বকর ছিদ্দিক জানান, কৃষক শাহজাহান মিয়ার প্রতিটি কার্যক্রম আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। তিনি জেলার একজন অগ্রগামী কৃষক। তাঁর কার্যক্রম অনেকের কাছে অনুকরণীয় হওয়ায় তাঁর জাতীয় পর্যায়ে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছি আমরা। পরিশ্রম ও আন্তরিকতা থাকলে সফলতা আসবে তার উৎকৃষ্ট উদাহারণ কৃষক শাহজাহান মিয়া। যেহেতু এই চাষাবাদ প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং তিন মাসেই ঘরে তোলা সম্ভব। তাই আমরা সামনে যেন এই চাষের পরিধি বৃদ্ধি পায় সে বিষয়ে কাজ করছি।