হাওর বার্তা ডেস্কঃ থোকায় থোকায় ঝুলছে মালবেরি। গাছজুড়ে শোভা পাচ্ছে সবুজ, লাল ও কালো লম্বাটে ছোট আকারের অসংখ্য মালবেরি ফল। পুষ্টিগুণসম্পন্ন বিদেশি ও উচ্চমূল্যের এই মালবেরি এখন চাষ করা হচ্ছে দেশে ছাদবাগানে ও জমিতেও।
পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন দেশের আটটি জাত সংগ্রহ করে প্রথমবার চাষেই সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা।
ভালো ফলন দেখে বাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি।
কামরুজ্জামান বছর চারেক আগে থাইল্যান্ড থেকে এর কয়েকটি জাত দেশে এনে তাঁর বাগানে লাগান। গাছগুলো দৃষ্টিনন্দন ফলে ভরে ওঠে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের তুঁতগাছই আসলে মালবেরিগাছ। এর একটি প্রজাতি। এ দেশের আবহাওয়া তুঁতগাছের জন্য খুবই উপযোগী। রেশমগুটির জন্য, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে এই তুঁতগাছ (হোয়াইট মালবেরি) লাগানো হয়।
কামরুজ্জামান বলেন, ‘তাঁর লাগানো গাছের মালবেরি বিদেশের চেয়েও বেশি সুস্বাদু মনে হয়েছে। বেরি (জাম) গোত্রের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এই ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দেশের মানুষের পুষ্টির জোগান বাড়াতে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ খুবই লাভজনক হবে। ’
রাজধানীতে অনেকের ছাদবাগানেও রূপ ছড়াচ্ছে মালবেরিগাছ। পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোডের একটি বাড়ির ছাদে সাত-আটটি চারা লাগানোর মাসখানেকের মধ্যেই ফল চলে আসে। পেকে চকচকে কালো হয়ে ওঠে কিছুদিনের মধ্যেই। বাড়ির মালিক পরিবারটির সদস্য আবুল হোসেন জানান, হাইকোর্ট এলাকার একটি নার্সারি থেকে তাঁর ছোট ভাই ইমরান হোসেন চারা এনে ছাদে টবে লাগান। এখন তাঁরা প্রায়ই ফল খাচ্ছেন। খেতে কেমন—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, বেশ মিষ্টি।
সরেজমিনে বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে ঘুরে দেখা যায়, গাছ ভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে মালবেরি। পাতার চেয়ে ফল বেশি ধরে আছে। গাছের পাতা ডিম্বাকার, খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সুচালো। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় গুচ্ছ আকৃতির এই ফল। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকে। প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রং ধারণ করে। দেখতে খুবই সুন্দর। পাকা ফল রসালো ও টক-মিষ্টি হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি ফল মেলে। চারাও তৈরি করা যায়। খুব সহজেই ছাদে এর চাষ সম্ভব।
উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ কয়েকটি দেশ থেকে আটটি জাত সংগ্রহ করে মালবেরি চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। তিনি জানান, এই ফল চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশকও তেমন লাগে না। উৎপাদনখরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারা বছরই এই ফল পাওয়া যায়। বাজারেও মালবেরি ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই ফল ঢাকা শহরে সুপারশপগুলোতে বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কেজি দরে।
তিনি জানান, বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য তিনি চারটি জাত পছন্দ করেছেন। চারা তৈরি করে এক বিঘা জমিতে ৪০০ গাছ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করবেন। নতুন এই ফল দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে আসছে। এরই মধ্যে নওগাঁয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মালবেরিগাছগুলো পরিদর্শন করেছেন।
তাঁর বাগানে মালবেরি ফল দেখতে আসা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মালবেরি ফল দেখতে খুবই সুন্দর লাগল এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে শুনলাম, ছাদে নাকি এটা লাগানো যাবে। তাই আমিও তাঁর কাছ থেকে চারা নিয়ে আমার ছাদে লাগাব। ’
অ্যাগ্রো পার্কে ঘুরতে আসা উম্মে সেহেলী সুলতানা বলেন, ‘গাছগুলোতে থোকায় থোকায় কত সুন্দরভাবে ধরে আছে। একটা ফল খেয়ে দেখলাম অনেক সুস্বাদু। ’
এলাকার মোসাব্বের আহম্মেদ বলেন, ‘সোহেল ভাইয়ের বাগানে মালবেরিগাছ দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি। থোকায় থোকায় ফল ধরেছে। কোনোটা সবুজ, কোনোটা লাল, আবার কোনোটা কালো রং ধারণ করে আছে। শুনলাম বাজারে নাকি এর চাহিদা অনেক এবং দামও ভালো। তাই মনে করি কৃষকরা যদি ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে তাহলে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৮-১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে। নওগাঁর মাটিও মালবেরি চাষের উপযোগী। এ ছাড়া বাড়ির ছাদে টবেও এর চাষ করা যাবে।