ঢাকা ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছেন না কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
  • ১৩৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুরে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। তবে দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট। বেশি টাকা মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক।

কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানে পোকার আক্রমণ কম হলেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। অসময়ে বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে ধান পড়ে যাওয়ায় ফলন কম হয়েছে। পাশাপাশি ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে ধানের দামও কম। হালকা বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক মো. ইমরান সরকার বলেন, এবার ১১ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্ট করে শ্রমিক সংগ্রহ করলেও বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকার কমে ধান কাট রাজি হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটতে লাগিয়ে দিয়েছি। না হলে পাকা ধান ঝরে পড়ছে।

 

তিনি আরও বলেন, সব কিছুর দাম বেশি কিন্তু ধানের দাম কম। ধানের ফলনও ভালো হয়নি। এবার মিনিকেট ধান এক বিঘাতে ৩০-৩২ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে মিনিকেট ধান ৮০০ টাকা মণ। এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২৪-২৫ হাজার টাকা। লাভ তো দূরের কথা, বোরোতে বিঘা প্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আউলিয়াপুকুর গ্রামের কৃষক শাহ মোহাম্মদ গাজী বলেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার জন্য আমরা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু হারভেস্টার মালিক আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বার বার অনুরোধ করার পরও হারভেস্টার মালিক ধান কাটতে আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে বেশি দামে ধান কাটতে হলো।

ভিয়াইল ইউনিয়নের কৃষক মনিরুজ্জামন বলেন, অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও সঠিক সময় ধান কাটা শ্রমিক মিলছে না। ঝড়-বৃষ্টিতে ধান মাটিতে পড়ে গেছে আগেই। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। ধান কাটা শ্রমিক সুজন ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিদিন ১২-১৪ জন মিলে ২-৩ বিঘা জমির ধান কাটতে পারি। ধানগাছ যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে ৬ হাজার টাকা বিঘা আর যদি বাতাসে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে যায় তাহলে ৭ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে নিচ্ছি।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও আমরা কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বলছি। এতে খরচ কমবে কৃষকদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ২৯ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন এবং ২০২০-২১ মৌসুমে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান বলেন, দিনাজপুরে বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন।

তিনি আরও বলেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও আমরা কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বলছি। এতে খরচ কমবে কৃষকদের। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দিনাজপুরে শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছেন না কৃষক

আপডেট টাইম : ১১:০৩:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুরে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। তবে দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট। বেশি টাকা মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক।

কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানে পোকার আক্রমণ কম হলেও আশানুরূপ ফলন হয়নি। অসময়ে বৃষ্টি আর বাতাসের কারণে ধান পড়ে যাওয়ায় ফলন কম হয়েছে। পাশাপাশি ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে ধানের দামও কম। হালকা বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক মো. ইমরান সরকার বলেন, এবার ১১ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্ট করে শ্রমিক সংগ্রহ করলেও বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকার কমে ধান কাট রাজি হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটতে লাগিয়ে দিয়েছি। না হলে পাকা ধান ঝরে পড়ছে।

 

তিনি আরও বলেন, সব কিছুর দাম বেশি কিন্তু ধানের দাম কম। ধানের ফলনও ভালো হয়নি। এবার মিনিকেট ধান এক বিঘাতে ৩০-৩২ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে মিনিকেট ধান ৮০০ টাকা মণ। এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো আবাদ করেছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২৪-২৫ হাজার টাকা। লাভ তো দূরের কথা, বোরোতে বিঘা প্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আউলিয়াপুকুর গ্রামের কৃষক শাহ মোহাম্মদ গাজী বলেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার জন্য আমরা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু হারভেস্টার মালিক আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বার বার অনুরোধ করার পরও হারভেস্টার মালিক ধান কাটতে আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিক দিয়ে বেশি দামে ধান কাটতে হলো।

ভিয়াইল ইউনিয়নের কৃষক মনিরুজ্জামন বলেন, অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও সঠিক সময় ধান কাটা শ্রমিক মিলছে না। ঝড়-বৃষ্টিতে ধান মাটিতে পড়ে গেছে আগেই। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। ধান কাটা শ্রমিক সুজন ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিদিন ১২-১৪ জন মিলে ২-৩ বিঘা জমির ধান কাটতে পারি। ধানগাছ যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে ৬ হাজার টাকা বিঘা আর যদি বাতাসে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে যায় তাহলে ৭ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে নিচ্ছি।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও আমরা কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বলছি। এতে খরচ কমবে কৃষকদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ২৯ হাজার ২৬৩ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয় ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন এবং ২০২০-২১ মৌসুমে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান বলেন, দিনাজপুরে বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন।

তিনি আরও বলেন, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও আমরা কৃষকদের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বলছি। এতে খরচ কমবে কৃষকদের। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।