আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন আর আট ঘণ্টা বিশ্রামের কথা থাকলেও চা শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টেই কাটে গোটা জীবন। অধিকাংশ শ্রমিক রুটি আর লাল চা খেয়েই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেকশন ও টিলায় দাঁড়িয়ে কাজ করেন। বাগানে যাদের কাজ নেই এমন অসংখ্য নারী শ্রমিক বেকারত্ব আর সংসারের বোঝা নিয়ে স্বল্প মজুরিতে দিনমজুরের কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। মহান মে দিবসের প্রাক্কালে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে চা শিল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের এমনই কষ্টের চিত্র চোখে পড়েছে।
নারী শ্রমিকরা জানান, ঘুম থেকে উঠেই লাল চা দিয়ে রুটি খেয়ে কাজে চলে যান। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রান্নাবান্না করে কোনমতে রাতের খাবার খেয়েই স্বামী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তাদের বিশ্রাম আর আমোদ-প্রমোদ করার সুযোগটুকুও নেই। মাত্র ৮৫ টাকা দৈনিক মজুরি দিয়ে একবেলা, আধা বেলা খেয়ে দিন কাটছে। আর চা বাগানের বেকার শ্রমিকরা বস্তির ইটভাটা, স-মিল, ভবন নির্মাণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন।
শমশেরনগর চা বাগানে কর্মরত ৫০ বছর বয়সী লছমি রানি রাজভর বললেন, ‘আমরা আমোদ-প্রমোদ কি করবো। সারাদিন কাজ করেও পরিবার চালাইতে পারি না। পেট ভরে না। বাচ্চাদেরও ঠিকমতো খাওয়াইতে পারি না। বৃষ্টির সময়ে লম্বরেও ভিজি, ঘরেও ভিজি। বাচ্চা, গরু-ছাগল নিয়া একঘরে থাকি। বহুত কষ্টে চলতে আছি।’
সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ চা শিল্প শ্রমিকরা। অথচ এই শিল্পের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে হাজার হাজার নারী শ্রমিক। একাধারে ঘরে বাইরে চলে তাদের কাজ। পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে চেহারায় হাড্ডিসার দশা। চা বাগানের এই নারী শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠিন কাজ করে চলেছেন। দুই হাতে সারাক্ষণ পাতি উত্তোলনে থাকেন ব্যস্ত। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজেই চলে তাদের কাজ। এরপর যে মজুরি মেলে তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিত্সা, বাসস্থান সংকট প্রবল। অজস সমস্যায় জর্জরিত চা শ্রমিকরা এক ঘরে গাদাগাদি করে কোনমতে দুঃখ-কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন।
মৌলভীবাজার চা শ্রমিক সংঘের আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী বলেন, শ্রম আইনের সকল সুযোগ-সুবিধা চা শ্রমিকদের পক্ষে ভোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র নেই। নারী শ্রমিকরা কাজে চলে গেলে শিশুদের রাখার জন্য ডে-কেয়ারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সেখানে আমোদ-প্রমোদের কথা কল্পনাই করা যায় না।