ঢাকা ০৬:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব, আছে শঙ্কাও

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২
  • ২০৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফসল তোলাকে কেন্দ্র করে বাংলা সনের সৃষ্টি। ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী চলছে বৈশাখ মাস। এ মাসে কৃষকের বাড়িতে আনন্দের আসে। নতুন ফসল তুলে গোলা ভরবে কৃষক। এই আশায় বুক বেঁধে থাকে তারা।

ঋতু হিসেবে এটা গ্রীষ্মকাল। এই সময়ে গ্রামের কৃষক মাঠে ধান কাটতে থাকে। তাই বসে নেই মৌলভীবাজার জেলার কৃষকরাও। জেলার তিনটি হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘী, হাইল হাওরে পবিত্র রমজানে সোনার ফসল গোলায় তুলতে কাকডাকা ভোরে মাঠে যাচ্ছেন কৃষকরা।

 মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৫৫ হেক্টর, রাজনগরে ১৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ৮ হাজার ২১৫ হেক্টর, জুড়ীতে ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর, বড়লেখায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টর, কমলগঞ্জে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর ও শ্রীমঙ্গলে ১০ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমি।

এবছর নতুন জাতের বীজ ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-১০০ যেটিকে বঙ্গবন্ধু ধান হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। নতুন জাতের মধ্যে ব্রি ধান-৮৯ ভালো ফলন হয়েছে।

জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ব্রি ধান-২৯। এ ছাড়াও চাষ হয়েছে ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-১৪, হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের ধান।

কৃষি বিভাগ বলছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্রি ধান-২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান-৮৯ ও ব্রি ধান-৯২ এবং ব্রি ধান-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি ধান-৮৮ চাষ করা হবে।

তবে হাওরে ব্রি ধান-২৮ চিটা দেখা দিয়েছে। যার ফলে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিটার কারণে অনেক কৃষক ধান কাটতে চাচ্ছেন না। তারা বলেন, এই ধান কেটে শ্রমিকের টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। একই কথা বলেন কাউয়াদিঘি হাওর ও হাইল হাওরের কৃষক মাহমুদুল হাসান, খায়রুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন।

 

কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজুর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগ কাগজে-কলমে ফলন বাড়িয়ে দেখাতে ব্যস্ত। কৃষকের সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো কাজে আসেন না। এভাবে চললে তো হবে না।

তবে কৃষি বিভাগ চিটার বিষয়টি স্বীকার করলেও কৃষককে অসহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ৪১ হাজার ৮০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার কৃষককে হাইব্রিড বীজ ও ৭ হাজার ৫০০ কৃষককে উচ্চ ফলনশীল বীজ দেওয়া হয়। আর অন্যান্য ৬ হাজার ৮০০ কৃষককে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজি লুৎফুল বারী জানান, বোরো ধান হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রোগ বালাই থাকে। শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এমনকি প্লাবনের আশঙ্কাও থাকে।

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বোরো ধান হাওরে কাটার উপযোগী হওয়ার পরও কাটা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কৃষকরা বলছেন রোজা মাস থাকা ও শ্রমিক সংকটের কথা। এগুলো শঙ্কা তৈরি করছে। তবে সবমিলিয়ে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব, আছে শঙ্কাও

আপডেট টাইম : ০৭:৪৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফসল তোলাকে কেন্দ্র করে বাংলা সনের সৃষ্টি। ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী চলছে বৈশাখ মাস। এ মাসে কৃষকের বাড়িতে আনন্দের আসে। নতুন ফসল তুলে গোলা ভরবে কৃষক। এই আশায় বুক বেঁধে থাকে তারা।

ঋতু হিসেবে এটা গ্রীষ্মকাল। এই সময়ে গ্রামের কৃষক মাঠে ধান কাটতে থাকে। তাই বসে নেই মৌলভীবাজার জেলার কৃষকরাও। জেলার তিনটি হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘী, হাইল হাওরে পবিত্র রমজানে সোনার ফসল গোলায় তুলতে কাকডাকা ভোরে মাঠে যাচ্ছেন কৃষকরা।

 মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৫৫ হেক্টর, রাজনগরে ১৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ৮ হাজার ২১৫ হেক্টর, জুড়ীতে ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর, বড়লেখায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টর, কমলগঞ্জে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর ও শ্রীমঙ্গলে ১০ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমি।

এবছর নতুন জাতের বীজ ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-১০০ যেটিকে বঙ্গবন্ধু ধান হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। নতুন জাতের মধ্যে ব্রি ধান-৮৯ ভালো ফলন হয়েছে।

জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ব্রি ধান-২৯। এ ছাড়াও চাষ হয়েছে ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-১৪, হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের ধান।

কৃষি বিভাগ বলছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্রি ধান-২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান-৮৯ ও ব্রি ধান-৯২ এবং ব্রি ধান-২৮ এর পরিবর্তে ব্রি ধান-৮৮ চাষ করা হবে।

তবে হাওরে ব্রি ধান-২৮ চিটা দেখা দিয়েছে। যার ফলে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিটার কারণে অনেক কৃষক ধান কাটতে চাচ্ছেন না। তারা বলেন, এই ধান কেটে শ্রমিকের টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। একই কথা বলেন কাউয়াদিঘি হাওর ও হাইল হাওরের কৃষক মাহমুদুল হাসান, খায়রুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন।

 

কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজুর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগ কাগজে-কলমে ফলন বাড়িয়ে দেখাতে ব্যস্ত। কৃষকের সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো কাজে আসেন না। এভাবে চললে তো হবে না।

তবে কৃষি বিভাগ চিটার বিষয়টি স্বীকার করলেও কৃষককে অসহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ৪১ হাজার ৮০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার কৃষককে হাইব্রিড বীজ ও ৭ হাজার ৫০০ কৃষককে উচ্চ ফলনশীল বীজ দেওয়া হয়। আর অন্যান্য ৬ হাজার ৮০০ কৃষককে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজি লুৎফুল বারী জানান, বোরো ধান হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রোগ বালাই থাকে। শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এমনকি প্লাবনের আশঙ্কাও থাকে।

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বোরো ধান হাওরে কাটার উপযোগী হওয়ার পরও কাটা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কৃষকরা বলছেন রোজা মাস থাকা ও শ্রমিক সংকটের কথা। এগুলো শঙ্কা তৈরি করছে। তবে সবমিলিয়ে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।