ঢাকা ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

কৃষক দিশেহারা ফসল হারিয়ে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২
  • ১৫৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকালও সুনামগঞ্জে শালদীঘা হাওরের বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে ৩০ হেক্টর জমি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রতিদিনই নতুন নতুন হাওর প্লাবিত হচ্ছে। এতে হাওর এলাকার কৃষকের ভয় আর অতঙ্ক বাড়ছে। মাসের শুরুতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে খুব বেশি বৃষ্টি না হলেও ভারতের মেঘালয়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে নদনদী উপচে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ বোরো জমি। হার ভাঙা পরিশ্রমের ফসল হারিয়ে দিশেহারা হাওর এলাকার কৃষক।
গত ১ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কায় সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটের হাওরাঞ্চলের ৭ হাজার ১শ’ ৩০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জ জেলাতেই ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যায় আবারো বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় হাওর অঞ্চলের মানুষের চোখে ঘুম নেই। রাত দিন এক করে তারা জমির আধা পাকা ধান কাটছেন। নারী পুরুষ সবাই মিলে রাত জেগে ফসল রক্ষা বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। তারপরও অনেক জায়গায় শেষ রক্ষা হচ্ছে না। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের জমি।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকালও সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৩০ হেক্টর জমির ফসল। ভারত থেকে আসা ঢলে এবার শালদীঘা হাওরের বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে ৩০ হেক্টর জমির ফসল। গতকাল দুপুরে টাংগুয়ার হাওরের উপবাধ মাকড়দি গ্রামের পাশে পানি ঢুকে বাঁধ ভেঙে যায়। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, বংশীকুডা বাসাউড়া, হাতপাঠন, নয়াবন্দ, সানুয়া, মাকড়দি, কাউহানি, বীরসিংহপাড়া গ্রামের দুই শতাধিক কৃষকের জমি তলিয়ে যায়।
বংশীকুডা দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ জানান, মনাই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে শতাধিক কৃষকের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন নদী আর হাওরের পানি সমান সমান। জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনও বাঁধ নয়। গত ৩ এপ্রিল টাংগুয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরে স্থানীয়রা এই বাঁধ তৈরি করে জমির ফসল রক্ষা করেন। আজ সেটিও ভেঙে গেলো।
ভারত থেকে আসা ঢলের প্রথম তোড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার আনুষ্ঠানিক কোনো হিসেব এখনো দেয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে হেক্টর প্রতি বোরো ধানের গড় ফলন এবং গত বছরের সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের হিসেবে ডুবে যাওয়া হাওরে ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার।
এদিকে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র চলতি সপ্তাহের শেষে হাওরাঞ্চলে আরেকটি আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় পাহাড়ি ঢলের প্রথম তোড় সামলে নিতে পারলেও দ্বিতীয় ধাক্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা শেষে কয়েকদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদনদী ও হাওরের পানি হ্রাস পেতে থাকলে কৃষকরা আবারও আশান্বিত হয়েছিলেন এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়ার। কিন্তু পূর্বাভাস অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে খারাপ হতে শুরু করেছে আবহাওয়া। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশকিছু এলাকায়। এ অবস্থায় কৃষকদের বেশিরভাগই অবস্থান নিয়েছেন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে। পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভাঙা ঠেকাতে নিচ্ছেন প্রস্তুতি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার সময় কমছে ২ ঘণ্টা

কৃষক দিশেহারা ফসল হারিয়ে

আপডেট টাইম : ১০:৪৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকালও সুনামগঞ্জে শালদীঘা হাওরের বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে ৩০ হেক্টর জমি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রতিদিনই নতুন নতুন হাওর প্লাবিত হচ্ছে। এতে হাওর এলাকার কৃষকের ভয় আর অতঙ্ক বাড়ছে। মাসের শুরুতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে খুব বেশি বৃষ্টি না হলেও ভারতের মেঘালয়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে নদনদী উপচে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ বোরো জমি। হার ভাঙা পরিশ্রমের ফসল হারিয়ে দিশেহারা হাওর এলাকার কৃষক।
গত ১ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কায় সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটের হাওরাঞ্চলের ৭ হাজার ১শ’ ৩০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জ জেলাতেই ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যায় আবারো বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় হাওর অঞ্চলের মানুষের চোখে ঘুম নেই। রাত দিন এক করে তারা জমির আধা পাকা ধান কাটছেন। নারী পুরুষ সবাই মিলে রাত জেগে ফসল রক্ষা বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। তারপরও অনেক জায়গায় শেষ রক্ষা হচ্ছে না। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তলিয়ে যাচ্ছে হাওরের জমি।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকালও সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৩০ হেক্টর জমির ফসল। ভারত থেকে আসা ঢলে এবার শালদীঘা হাওরের বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে ৩০ হেক্টর জমির ফসল। গতকাল দুপুরে টাংগুয়ার হাওরের উপবাধ মাকড়দি গ্রামের পাশে পানি ঢুকে বাঁধ ভেঙে যায়। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, বংশীকুডা বাসাউড়া, হাতপাঠন, নয়াবন্দ, সানুয়া, মাকড়দি, কাউহানি, বীরসিংহপাড়া গ্রামের দুই শতাধিক কৃষকের জমি তলিয়ে যায়।
বংশীকুডা দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ জানান, মনাই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে শতাধিক কৃষকের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন নদী আর হাওরের পানি সমান সমান। জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনও বাঁধ নয়। গত ৩ এপ্রিল টাংগুয়ার হাওরে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরে স্থানীয়রা এই বাঁধ তৈরি করে জমির ফসল রক্ষা করেন। আজ সেটিও ভেঙে গেলো।
ভারত থেকে আসা ঢলের প্রথম তোড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার আনুষ্ঠানিক কোনো হিসেব এখনো দেয়নি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে হেক্টর প্রতি বোরো ধানের গড় ফলন এবং গত বছরের সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্যের হিসেবে ডুবে যাওয়া হাওরে ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকার।
এদিকে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র চলতি সপ্তাহের শেষে হাওরাঞ্চলে আরেকটি আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে। হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় পাহাড়ি ঢলের প্রথম তোড় সামলে নিতে পারলেও দ্বিতীয় ধাক্কায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
পাহাড়ি ঢলের প্রথম ধাক্কা শেষে কয়েকদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদনদী ও হাওরের পানি হ্রাস পেতে থাকলে কৃষকরা আবারও আশান্বিত হয়েছিলেন এ যাত্রায় রক্ষা পাওয়ার। কিন্তু পূর্বাভাস অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে খারাপ হতে শুরু করেছে আবহাওয়া। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশকিছু এলাকায়। এ অবস্থায় কৃষকদের বেশিরভাগই অবস্থান নিয়েছেন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে। পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভাঙা ঠেকাতে নিচ্ছেন প্রস্তুতি।