প্রধান শিক্ষকের মানসিক নির্যাতনে শিক্ষকের আত্মহত্যার ঘোষণা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের ভদ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) বিদ্যালয়ে বিরূপ কর্মপরিবেশের কারণে আত্মহত্যা করবেন বলে জানিয়েছেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। কয়েকদিন আগে ওই শিক্ষক এ ঘোষণা দিলেও মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিষয়টি জানাজানি হয়।

ওই শিক্ষকের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্যের (এসএমসি) মানসিক নির্যাতনে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে এমন ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খাঁন বিষয়টি অবগত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি ৫ বছর আগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ভদ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। বিদ্যালয়ের যোগদানের পর ধেকেই প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান তার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে আসছেন। সঙ্গে যোগ দেন প্রধান শিক্ষকের বন্ধু ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির (এসএমসি) সদস্য জাহিদুল ইসলাম।

সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার বিকেলে ক্রন্দনরত অবস্থায় জানান, ওই দুজন তার ওপর প্রতিদিন মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। পাঠ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও তিনি যখন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন তখনও ওই দুজন তাকে কটাক্ষ করেন।

তিনি জানান, তিনি যথাসময়ে বিদ্যালয়ে যান, তারপরও তাকে অপমান করা হয়। একজন মানুষ যতটুকু অতিষ্ঠ হলে আত্মহত্যা করতে চান তার অবস্থা এখন সেই পর্যায়ে চলে গেছে। তাকে বদলি করে দেওয়া হলেও অন্তত তিনি প্রাণে বাঁচবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজুর রহমান ও জাহিদুল ইসলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও দুজনই ভদ্রপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। বিরোধের বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে তা ফলপ্রসু হয়নি। ধারাবাহিকভাবে ওই সহকারী শিক্ষককে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়। জাহাঙ্গীর কখনও প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক আরো চড়াও হয়েছেন।

 

এছাড়া বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ড এবং অন্যান্য উন্নয়ন বরাদ্দের কোনো কাজই প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ঠিকমতো করেননি। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাগজে হলেও বাস্তবে হয়নি। গত কয়েক বছরের স্লিপ বরাদ্দ, প্রাক-প্রাথমিক বরাদ্দ, ক্ষুদ্র মেরামতের কাজের তালিকার সুষ্ঠু তদন্ত হলেই তা বেরিয়ে আসবে।

এদিকে সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে প্রধান শিক্ষকের ইন্ধনে এসএমসি সদস্য জাহিদুল ইসলাম তাকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়েও তার সামনে দাঁড়িয়েছেন। এ অবস্থায় তিনি কয়েকদিন আগে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে বলেছেন তার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় নেই।

এতদিন তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসন না হলেও এবার ওই শিক্ষকের আত্মহত্যার ঘোষণা দেওয়ার পর বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিস।

এ ব্যপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই সহকারী শিক্ষকের অভিযোগ ও আবেগময় ঘোষণা জানার পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে মঙ্গলবার বিকেলে ফোন করা হলে তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ বলে সংযোগ কেটে দেন।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। প্রাথমিকভাবে ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে তাকে শান্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলছেন।

বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করবেন। তখন বিষয়টি বিস্তারিত জেনে এর একটি সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানান ইউএনও।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর