হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে বেকারত্ব নেই, বরং কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। বেকারত্ব আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের, এটা তাদের সমস্যা। দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে। গতকাল এফবিসিসিআই এবং আইএলও এর যৌথ আয়োজনে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত করার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বাড়ানোর উপায় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সালমান এফ রহমান বলেন, আমার অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশে কোনো বেকারত্ব নেই। বরং কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের চাকরির অভাব থাকলেও দেশের বিভিন্ন খাতে যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে। বস্ত্র খাত লোক পাচ্ছে না। ওষুধ খাত লোক পাচ্ছে না। কৃষি খাত লোক পাচ্ছে না। দেশে অনেক ধরনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। মানুষ পণ্য খাত থেকে সেবা খাতে চলে যাচ্ছে। আইটি খাতে চলে যাচ্ছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বেকারত্ব আছে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের, এটা তাদের সমস্যা। তারা এই ডিগ্রি নেয়ার আগে কি ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করেছিল? তিনি বলেন, আমাদের বেশি বেশি কারিগরি শিক্ষা দিতে হবে। কারিগরি শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
ব্যবসায়ীদের উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরি এবং নিয়ম-নীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে কোনো খাতে ব্যবসা করতে গেলে অবশ্যই নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলতে হবে। আপনি যদি কমপ্লায়েন্ট না হন, তাহলে আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন না। সময় আসছে, যখন বাংলাদেশের মানুষ পণ্য কেনার সময় দেখে কিনবে যে-কোন কোম্পানি ভালোভাবে আইন কানুন মানছে।
এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা জানান, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য রফতানিমুখী শিল্পকে যেভাবে নিরাপদ করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য যেসব কারখানা পণ্য উৎপাদন করে সেগুলোকেও নিরাপদ করা হবে। এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি ৫২০০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে। একইভাবে বাকি কারখানাকেও পরিদর্শনের আওতায় আনা হবে। দেশের সব শিল্পকারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, পোশাক খাতে শুরুর দিকে সংস্কার কার্যক্রমে অনেক মালিকের অনীহা ছিল। কিন্তু এখন এই খাত শোভন কর্মপরিবেশের সুফল পাচ্ছে। একইভাবে দেশের ওষুধ শিল্পও মানসম্পন্ন কারখানার কারণে বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. এহছানে এলাহি বলেন, শিল্পকারখানার উন্নয়নে নিরাপত্তা, মান ও উৎপাদন একটি আরেকটির সাথে সংশ্লিষ্ট। কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত হলে, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মানেরও উন্নয়ন হয় । ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে শিশুশ্রম মুক্ত করতে কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান সচিব।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কাজ করার সুযোগ পাওয়া শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদশের শিল্প বাণিজ্য যেমন বাড়ছে, তেমনি সেখানে শ্রমিকদের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। টেকসই উন্নয়নের বৈশ্বিক প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে সুষ্ঠ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, শিল্পের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেফটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেছে এফবিসিসিআই। জাতীয় ওএইচএস প্রোফাইল ও জাতীয় ওএইচএস নীতির ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে এই কাউন্সিল।
কর্মশালায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, মো. হাবীব উল্ল্যাহ ডন, পরিচালক হাসিনা নেওয়াজ, রেজাউল করিম রেজনু, এম.জি.আর নাসির মজুমদার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, হারুন অর রশীদ, ড. ফেরদৌসী বেগম, আমজাদ হোসাইন, মো. শাহীন আহমেদ, শমি কায়সার প্রমুখ।###
কর্মশালায় বিভিন্ন সেক্টরকে নিরাপদ করতে সরকারি নীতিগুলোর সফল বাস্তবায়নের আহ্বান জানান আইএলও’র কারিগরি উপদেষ্টা জর্জ ফলার। কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হলে মালিক-শ্রমিক উভয়ের জন্যই তা লাভজনক হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।