হাওর বার্তা ডেস্কঃ লড়াইটা শুরু হয়েছিল ২০ বছর আগে। নিজেদের মাটিতে কিছুতেই বশ মানছিল না দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে তাদের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় এমনকী গত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু না পাওয়ার হাহাকার থেকেই যাচ্ছিল।
রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ ওভারে দলীয় ১৮ রানে জানেমান মালানকে (৪) মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন পেসার শরীফুল। প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান আরেক তরুণ পেসার তাসকিন। তার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন অপর ওপেনার কাইলি ভেরানে। তিন বল পরেই মেহেদি মিরাজের তালুবন্দি হয়ে ফিরেন এইডেন মার্করাম (০)। এরপর ভ্যান ডার ডুসেনকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করেন ৮৫ রান। এই জুটিতেই ঘুরে দাঁড়ায় প্রোটিয়ারা। ৩১ রান করা প্রোটিয়া অধিনায়ককে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করে জুটি ভাঙেন শরীফুল।
৫৭ বলে ফিফটি পূরণ করা ভ্যান ডার ডুসেন আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠেন। তার সঙ্গী ডেভিড ‘কিলার’ মিলারও হাত খুলে খেলছিলেন। ৬৪ বলে ৭০ রানের এই ঝড়ো জুটি ভাঙেন তাসকিন। ৯৮ বলে ৮৬ রান করে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা ডুসেনের দেওয়া ক্যাচ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারলেগে অসাধারণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন ইয়াসির। ১৯১ রানে প্রোটিয়াদের ইনিংস অর্ধেক শেষ হয়। তখনও বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েই যাচ্ছিলেন মিলার। মাত্র ৩৮ বলে তুলে নেন ফিফটি। ৪০ ওভারে প্রোটিয়াদের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৯৯। শেষ ৬০ বলে চাই ১১৬ রান। এমন সময়ে ৪১তম ওভারে মিরাজের শিকার হন ফেলুকায়ো (২)। প্রোটিয়াদের একমাত্র ভরসা হয়ে থাকা ডেভিড মিলার আক্রমণ করেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু অন্যপ্রান্ত ছিল নড়বড়ে।
মার্কো জনসেনকে (২) ফেরান মিরাজ। মিডউইকেটে সীমানা দড়ির ওপর চোখ ধাঁধানো ক্যাচ নেন তামিম। একই ওভারে তিনি কট অ্যান্ড বোল্ড করেন রাবাদাকে (১)। জয়ের সুবাস পেতে থাকে বাংলাদেশ। একা লড়তে থাকা ডেভিড মিলারকে মেহেদি মিরাজ চতুর্থ শিকারে পরিণত করলে বাংলাদেশের জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ৫৭ বলে ৮ চার ৩ ছক্কায় ৭৯ রান করা মিলারকে স্টাম্পড করেন মুশফিক। ১০ আর ১১ নম্বর ব্যাটার কেশব মহারাজ এবং লুঙ্গি এনগিডি কিছু বাউন্ডারি মেরে ব্যবধান কমান। শেষ ৮ বলে প্রয়োজন ছিল ৩৯ রানের। মাহমুদউল্লাহর করা ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে লেগ বিফোরের আবেদন নাকচ করেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে জিতে যান মাহমুদউল্লাহ। ২৭৬ রানে অল-আউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩৮ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। ৬১ রানে ৪ উইকেট নেন মেহেদি মিরাজ। তাসকিন ১০ ওভারে মাত্র ৩৬ রানে নেন ৩টি। ২ উইকেট নিয়েছেন শরীফুল।
এর আগে সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্কে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। একটু সময় নিয়েই তামিম ইকবাল আর লিটন দাস উইকেটে সেট হন। পাওয়ারপ্লের ১০ ওভারে আসে ৩৩ রান। দুজনে গড়েন ৯৫ রানের ওপেনিং জুটি। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড। আন্দিলে ফেলুকায়োর করা ২২ তম ওভারের তৃতীয় বলে তামিম এলবিডাব্লিউ হলে ভাঙে এই জুটি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ৬৭ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৪১ রান করা তামিম। পরের ওভারে আরেক ওপেনার লিটনও বিদায় নেন। শিকারী কেশব মহারাজ। আউট হওয়ার আগে ৬৬ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি তুলে নেন লিটন। ১০৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দুই সিনিয়র সাকিব আর মুশফিক।
মি. ডিপেন্ডেবল আজ নির্ভরতা দিতে না পারলেও ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক সমালোচিত সাকিব। ফেলুকায়োকে ছক্কা মেরে ৫০ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরপর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠা সাকিব ৪২তম ওভারে লুঙ্গির করা ইয়র্কার অযথা স্কুপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। শেষ হয় ৬৪ বলে ৭ চার ৩ ছক্কায় ৭৭ রানের ইনিংস। এরই সঙ্গে ভাঙে ইয়াসির আলীর সঙ্গে ৮২ বলে ১১৫ রানের জুটি। নিজেকে প্রমাণের মিশনে থাকা ইয়াসির ৪৩ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে আউট হন। শেষদিকে ছোট ছোট অবদানে স্কোরকার্ড বড় করেন মাহমুদউল্লাহ (১৭ বলে ২৫), আফিফ (১৩ বলে ১৭) এবং মেহেদি মিরাজ (১৩ বলে ১৯*)। বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৩১৪ রান। ২টি করে উইকেট নেন মার্কো জনসেন এবং কেশব মহারাজ।