ড.গোলসান আরা বেগমঃ মন, স্ব্যাস্থ্য ও মননের যত্ন পরিশিলনের জন্য দুরে বা কাছে আনন্দ ঘন পরিবেশে ভ্রমন করা প্রয়োজন। স্মৃতির ঝাপিতে ভরা ভ্রমনের রুমাঞ্চগুলো বাঁচার নিশ্বাঃস যোগায়, প্রেরণা দেয়। একারনেই বিশ্বব্যাপি রয়েছে পর্যটন শিল্পের প্রসার। দিন দিনই রাড়ছে এ মাধ্যমের কদর।
আমরা ষাট জন লায়ন্স সদস্য দলবন্দ হয়ে ঢাকা টু বাঙ্যালোর- ওঠি- বোম্বে ( চেন্নাই) ভ্রমনে গিয়েছিলাম ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ এ, আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাবস, ড্রিষ্টিকস ৩১৫/এ ২ এর অধীনে, লায়ন্স প্রতিথি ক্লাবের পক্ষে। সে ভ্রমনের রোমাঞ্চগুলো ২য় কিস্তিতে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অনির্ধারিত কথা বলা, আনন্দের পর আনন্দ স্মৃতির ঝুড়িতে ভরাই হলো ভ্রমনের মূল উদ্দেশ্য।
বোম্বের কন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে যাত্রা শুরু করি সকাল সাড়ে নয়টায় ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ এ। বোম্বের আকর্ষনীয় স্থানগুলো দেখার চেষ্টা করবো। ভালো আছি, ভালো থাকবো – এই ছিলো সিটি ট্যুরের স্লোগান। রাজীব গান্ধী লিংক রোড় যার উপর দিয়ে বাসে আমাদের আনন্দ ভ্রমন চলতে থাকে। ৭.১৭ কিলোমিটার লম্বা এই ঝুলন্ত ব্রিজটি আরব সাগরের উপর দিয়ে নর্থ বোম্বেকে ওল্ড বোম্বের সাথে যুক্ত করেছে। আমাদের বাসে একটি স্পিকার ও হর্ণ যুক্ত রয়েছে, ওটা দিয়ে চলন্ত বাসে মাস্তি ও মজা করা যায়। হাসির রসাত্বক চুটকি, গান, কবিতা, ছড়া, নানা কথার তর্ক চলে। কেউ গেয়ে ওঠে- ওরে স্বাধের লাউ, ও আমার দেশের মাটি, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, ইত্যাদি গানে ছন্দে দোলতে থাকি।হঠাৎ করেই কেউ প্রশ্ন করলো -তিন অক্ষরে নাম যার জলে বাস করে, মধ্যের অক্ষর ছেড়ে দিলে আকাশেতে উড়ে,বলেন তো ওটা কি।আর একজন উত্তর দিলো — সুস্বাদু মাছ চিতল। আরো কতো হাসির রঙ্গতামসা করতে করতে গন্তব্যে পৌঁছে যাই।
ভারতের ধনকুবে মালিক মুখেশ আম্বলীর মেয়ের বাড়ীর সামনে দাঁড়াই, বাইশ তলা বাড়ীতে তার মেয়ে একাই বসবাস করে। বিলাসিতা কাকে বলে – ইউটিউবে চার্জ দিলেই দেখা যায় এই কেরুকার্যতা।একটু এগিয়ে গেলে নেহেরু সেন্টার বাম পাশে ডানে হাজী আলী দরগা।এই দরগাটি দাঁড়িয়ে আছে আরব সাগরের কোল ঘ্যাসে। আমাদের ট্যুরের গাড়িটি থামার সাথে সাথে বহু লোক নেমে পড়ে দরগায় যাওয়ার উদ্দ্যেশে।ফিরে এসে অনেকেই নানা মন্তব্য করছিলো। দরগার চারপাশে ছড়িয়ে আছে ময়লার ভাগার, দুর্গন্ধে টিকে থাকা দুস্কর। হিন্দু দর্শনার্থীদের সংখ্যাই অধিক, অর্ধ নগ্ন মেয়েরা করছে নাচানাচি।আমার পেছনে সিটের একজন করছে মন্তব্য-দরগায় যাওয়া মহাপাপ,তবে ওখানে বসে সৃষ্টিকর্তার নামে দুরাকাত নফল নামাজ পরা জায়েজ। হায় কি বিপরীত মুখী মতাদর্শ।আমি বাসে বসে দেখতে পেলাম পিপঁড়ার মতো দল বেধেঁ মানুষ দরগায় যাচ্ছে।
আরো একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম– বিখ্যাত অভিনেতা শারুখ খান, রেখা মুখার্জীর, গায়িকা লতামুঙ্গেসকারের বাড়ী।ক্রিকেট তারকা টেন্ডুল কারের বাড়ী বাসে বসেই দেখে নিলাম।রতন টাটার স্বত্বাধিকারের বাড়ী,টেম্বল, ড. জনহিনসন কলেজ, মেরিন ড্রাইভ,লার্ভাস পয়েন্ট, কুইন্স নেকলেস, বোম্বাই ইউনির্ভাসিটি,শেয়ার মার্কেট ভবন, ক্লক টাওয়ার,ইত্যাদি বহুবিধ নান্দনিক সৃষ্টির কারুকাজ।
পেছনে ফেলে আসি ফুলের ঝুলন্ত উদ্যান। ওখানে ফটোসেশনের জন্য সবাই নেমে ছিলাম। জানতে পারলাম – সভ্যতার কোন এক স্তরে সে এলাকায় পারসি নামক জাতি গোষ্টি ছিলো।মানুষ মারা যাওয়ার পর,মৃত্য বক্তির দেহটি পাহাড়ের ঊপরে রেখে আসতো। বিভিন্ন প্রজাতির পাখী দেহের মাংস খেয়ে ফেলতো। তখন কংকালটি গলিয়ে কুয়ার পানিতে ফেলে দিতো।সেই পানি মিশে যেতে আরব সাগরে।কি আজব দুনিয়া। তারই আশে পাশে রয়েছে গেলাস্কি ভবনে অভিনেতা সালমান খানের বাড়ি। ট্যুর গাইড নেমে গেলে আমরা মিরাক্যাল গার্ডেন পেরিয়ে পৌঁছে যাই শফিং মার্কেটে।
ফেরার পথে আরব সাগরের পানি ছুঁয়ে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। যেই কথা সেই কাজ, পথিমধ্যে একটি ঘাটে নেমে পড়ি। আর সাগরের টলমরল জলে নৌকা ভ্রমনে নেমে পড়ি। নৌকা বসে পাহাড়েরর সৌন্দর্য উপভোগ করি। নৌকা থেকে নেমে আসার পথে ইন্ডিয়ান গেইট ওয়েতে দাঁড়িয়ে ফটোসেশান করি।হৃদয়ে ভরে নিয়ে আসি ট্যুরের নানা উপভোগ্য সৌন্দর্য। পরিশেষে এই ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষনিয় বিষয়টি উল্লেখ না করলেই নয়।বোম্বের ওয়াস্ক মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম।সে খানে বিখ্যাক নামি দামি তারকা, দার্শনিক, মানবদরদি, সেবক,সিনেমা অভিনেতা, নাট্যকার, খোলোয়ার-তারকা খচিত ব্যক্তিত্বদের মোমের মূর্তি সাজানো রয়েছে।
দর্শনার্থীদের ভীড়ে আমরাও যুক্ত হয়েছিলাম। আমার জীবনের লোভনীয় ও বিখ্যাত ছবিগুলো ওখানে ওঠিয়েছি। ফেইজ বুক বন্ধুদের উপভোগ করার জন্য ভার্চুয়াল জগতে ছেড়ে দিয়েছি। ওগোলো যখর বছরান্তে ঘুরে ফিরে আসে, আমি ভীষণ ভাবে আন্দোলিত ও শিহরিত হই। নরেন্দ মোদি, মাদাম থেরেসা, মহাত্মা গান্ধী, রাজীবগান্ধীসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব যাদের ধারে কাছে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি বা হবেও না ।তাদের মোমের তৈরী মূর্তির হাতে ধরে, গায়ে স্পর্শ করে, বিভিন্ন আকর্ষনী মোডে পোজ দিয়ে ছবি তুলে মন ভরেছি, তৈরী করেছি তুল তুলে দোলে দোলে স্মৃতির ডায়রী।এই স্মৃতিময় ছবিগুলি আমি মরে গেলেও অন লাইন জগতে ঘুরতে থাকবে। আহা কি আনন্দ।যা শুধু উপভোগ করা যায়। টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
সন্ধ্যায় পাঁচ তারা বিলাসবহুল হোটেলে ফিরে এসে অনলাইনে যুক্ত হই বাংলাদেশের সঙ্গে।পুলকিত হই একটি শুভেচ্ছা খবর পেয়ে -আমাকে কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। ব্যাথি হই আর একটি খবরে-এক আত্মীয় ওজো করার সময় বেসিনে পা ধোতে গিয়ে ওল্টে পড়ে পা ভ্যেঙ্গেছে। তাকে এক হুজুর হাদিস দিয়েছে — ওয়াশ রুমে ওজো করলে তা শুদ্ধ হবে না।এ কারণেই তার পা ভাঙ্গার বিপর্যয়। পরদিন খুব সকালে চেন্নাইয়ের এপেলো হসপিটালে একাই চলে যাই ডাক্তার দেখাতে। ফুসফুসের ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ নিয়ে হোটেলে ফিরি দুপুর প্রায়। সঙ্গী সাথীরা মার্কিটিংএ চলে যায়। আমার এ দিকে আগ্রহ না থাকায়, বুদ্ধি মেধা খাঁটিয়ে একটি ভিডও প্রোগাম করি একা একাই। আসার পথে ওঠিতে পাহাড়ের পাদ দেশে দাঁড়িয়ে আরো একটি ভিডিও করেছিলাম। দুটি ভিডিও ফেইজ বুক ফেইজে ছেড়ে দিয়ে মনটা হালকা করি। পর দিন ভ্রমনের পরমাপ্তি ঘটে ঢাকা বিমান বন্দরে নেমে। বাই ।