হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্লাস্টিকের তৈরি রকমারি জিনিসে সয়লাব বাজার। তারপরও পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় সব পণ্য। ফরিদপুরের মধুখালীর গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের মো. সেকেন্দার আলী মৃধা পাট দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
প্রথমে তিনি ১৭টি মেশিন দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এখন ৫টি মেশিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পণ্য। এসব পণ্য দেশ ও বিদেশে রফতানি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ১৯৭৮ সালের ৫ জুন উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরী। তবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আর আলোর মুখ দেখেনি। সরকারি পরিত্যাক্ত ১ নং খতিয়ানভুক্ত এক একর ৪২ শতাংশ জমির ওপর সরকারি একটি ঘরে গড়ে তোলা হয় একটি কুটির শিল্প কারখানা।
এখন এর চারদিকে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে আশ্রায়ন প্রকল্পের কয়েকটি ঘর। কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে মো: সিকেন্দার আলী মৃধা বলেন, আমার জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছি এ শিল্পতে।
সেকেন্দার আলী মৃধা বলেন, ‘ইচ্ছা শক্তি, প্রচেষ্টা আর মনোবলকে পুঁজি করেই এ কাজে দীর্ঘ ২৬ বছরের পথচলা। ফরিদপুরের কানাইপুরের বিভিন্ন পাটকল থেকে সুতা ক্রয় করি। বিদেশে এসব সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও দেশে এখনো সেভাবে প্রসার লাভ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কারখানায় তৈরি করা হয় দষ্টিং, বাস্কেট, ফ্লোর ম্যাট, ট্যাপার, চাকা, স্কয়ার ম্যাথ, রাউন্ড ম্যাট, কস্টার, ব্যাগ, রশি, কলমদানি, ঝুড়ি ও অভাল মেথ। এছাড়া হাতের তৈরি বিভিন্ন কুটির শিল্পের কাঁচামাল তৈরি করা হয়।’
সরকারের পৃষ্টপোষকতা পাওয়ার আশা করে সেকেন্দার বলেন,‘এসব পণ্য বিদেশে রফতানি করতে পারতাম তাহলে আমি আরও বেশ লাভবান হতাম। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারতাম। এছাড়া বাংলার পাটের সুনাম আরো বাড়ত।’
‘তবে আমার উদ্দেশ্য একটাই, এখান থেকে আয় করে আমি বাঁচবো ও শ্রমিকদের বাঁচাবো। এর জন্য অল্প লাভেই চলছে ব্যবসা। এক সময় ১৭টি মেশিন দিয়ে কাজ করলেও এখন মাত্র ৫টি মেশিন ভালো আছে।’
সেকেন্দার জানান, ‘এই কয়েকটি মেশিন দিয়েই বর্তমানে ৫ জন শ্রমিক ব্র্যাক ও বিআরডিবির সহযোগিতায় কোনোমতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিআরডিবি থেকে স্বল্প মুনাফায় ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। সে টাকা দিয়েই অগ্রসরের চেষ্টা করছি।’
মিলে কর্মরত শ্রমিক মো: লোকমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলে সন্তান নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। এখানে কাজ করে দিনে ২০০ টাকা পাই। যদিও পোশায় না। তবুও যা বেতন পাই তা আমার সংসারে বড় একটা সাপোর্ট।’
মিলের কাজকর্মের তদারকির দায়িত্বে থাকা পিইপি বিআরডিবির মাঠ সংগঠক মো: আবু তারেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখানকার শ্রমিকদের বিভিন্ন সময়ে ট্রেনিংয়ে বগুড়াতে পাঠাই। সল্প সুদে লোন সুবিধা দিয়ে থাকি। পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো সহায়তা থাকলে তাদের জন্য আরও সুবিধা হবে। মেশিনপত্র ও শ্রমিক বাড়ানো যেত।’
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু বলেন, ‘সেকেন্দারের কারখানাটি ভালোই চলছে তবে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সাহায্য সহযোগিতা পেলে আরও ভালো করতে পারতেন।’
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেকেন্দার আলী মৃধা এ বিষয়ে যদি কোনো সাহায্য সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করেন তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’