হাওর বার্তা ডেস্কঃ টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটাকে টনসিলাইটিস বলি। মানবদেহে গলার ভেতরে দুপাশে একজোড়া Palatine tonsil থাকে, টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকেই বুঝে থাকি। টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না, তা কিন্তু নয়।
টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। এ ইনফেকশনের অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার ঠান্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা; অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়ে আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।
লক্ষণ দেখে কীভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন
* গলাব্যথা এবং সঙ্গে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে।
* এ ক্ষেত্রে গলাব্যথার সঙ্গে জ্বর ১০২-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সঙ্গে খাবার গ্রহণে অরুচি এবং বমির ভাব থাকতে পারে।
* গলার সঙ্গে কানের সম্পর্ক রয়েছে। তাই টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।
* শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।
* অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে।
এরকম সমস্যাকে তীব্র ইনফেকশন বা Acute tonsillitis বলা হয়। চিকিৎসকের দেওয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত এন্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের উপদেশের মাধ্যমে টনসিলের ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। তবে কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে বারবার দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে Chronic tonsillitis বলা হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে Chronic tonsillitis-কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তবে এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে চার-পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়াই শ্রেয় এবং স্থায়ী সমাধান।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিুোক্ত সমস্যা হতে পারে
* টনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে (Peritonsilar Abscess)।
* টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
* ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।
* রক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* বয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই এ ধরনের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অপারেশন করানো ভালো এবং নিরাপদ। আমাদের দেশে প্রতিদিন নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে।
কখন টনসিলের অপারেশন করা যাবে না
* টনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে অর্থাৎ জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না।
* তিন বছরের কম বাচ্চাদের।
* এ ছাড়াও কারও রক্তে হিমেগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে/রক্তশূন্যতা থাকলে।
* হিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগের ইতিহাস থাকলে।
* মহিলাদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায়।
আশার কথা, তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ওষুধ সেবন, উপদেশমতো ঠান্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং আদা-লেবু রং চা পান করলে অপারেশনের টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।