হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজবাড়ী জেলায় চলতি বছরে টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা। একসঙ্গে টমেটো বাজারে ওঠা, অসময়ের বৃষ্টিতে পচন এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে প্রধান কারণ হিসাবে দায়ী করছেন এ জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
চলতি বছরে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও অসময়ের বৃষ্টি উপেক্ষা করেও জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে টমেটোতে কালচে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। এই পচন রোধ করতে পুনরায় খেতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে চাষিদের।
এতে করে তাদের খরচও বেড়ে গেছে। বাজারের দাম পড়ে যাওয়া এবং পচন রোগের কারণে কৃষকের মুখের হাসি শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, পচন রোগ ঠেকাতে মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রাজবাড়ীতে ৭২২ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায়। এ বছর রাজবাড়ী সদরে ২৪৬, গোয়ালন্দে ৩৫৭, পাংশায় ৭৫, কালুখালীতে ৩৫ ও বালিয়াকান্দিতে ১০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ীতে বিউটি ফুল, বিপুল প্লস, বিগল ও মিন্টু সুপার এসব উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোর আবাদ হচ্ছে।
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চল উড়াকান্দা, নয়নসুখ, অন্তরমোড়, গোপালবাড়ীতে ৩ শ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের টমেটো। ওই সব এলাকায় গিয়ে দেখা যায় থোকায় থোকায় ধরেছে টমেটো। পাকা টমেটো তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষ উভয়ই। গাছ থেকে টমেটো ছিঁড়ে তা গাদি করে বস্তায় ভরে হাট-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
উড়াকান্দার কৃষক মনছুর শেখ বলেন, আমাদের এক বিঘা জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ, বীজ বপন, শ্রমিকের মুজরিসহ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দিগুণের বেশি। ভালো ফলন হলে বিঘায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ টমেটো পাওয়া যায়। তবে এবার বৃষ্টিতে টমেটোর গায়ে ছোট ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যার কারণে এখন দামও কম পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ১২ থেকে ১৬ টাকা কেজি ও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক আজগর আলী, সবুর মন্ডল, আজিজ সরদারসহ একাধিক কৃষক বলেন, একসঙ্গে সব টমেটো বাজারে ওঠায় টমেটোর দাম পড়ে গেছে। এছাড়াও অসময়ের বৃষ্টির কারণে টমেটোতে পচন ধরায় টমেটোগুলো খেতেই পচন ধরছে। এতে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দিন শেষে দেখা যাচ্ছে আমাদের উৎপাদন খরচটাই উঠবে না।
অন্তরমোড় এলাকার কৃষক ইদ্রিস মিয়া জানান, টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে দামও ভালো পেয়েছি। বাজারদর না কমলে লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা তাদের।
রাজবাড়ী পাইকারি বাজারের আড়ৎদার মুক্তার হোসেন বলেন, চলতি বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। একসঙ্গে সব টমেটো বাজারে ওঠায় দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। তারপরও এই দামে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর বলেন, এ বছর জেলায় টমেটো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বৃষ্টিতে টমেটোতে পচন দেখা দেওয়ার কারণে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। টমেটোতে পচন রোধ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।