ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আদিবাসী’দের উন্নয়নের নামে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৯:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২
  • ১৬৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণ। কৃষি জমি বাড়াতে বনাঞ্চল উজাড় ইত্যাদি কারণে উত্তরাঞ্চলের বন্য প্রাণিজগত এমনিতেই বিপন্ন হতে চলেছে। এর বাইরে উপজাতিদের অন্যতম নেশা বন্যপ্রাণী শিকার করে খাওয়ার প্রবণতায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণি। অপরদিকে ‘আদিবাসী’দের জীবনমান উন্নয়নের নামে যে কাজ হচ্ছে তা হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলায় রয়েছে উপজাতি মানুষ। তবে বৃহত্তর দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, ঘোড়াঘাট, বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, বৃহত্তর বগুড়ার জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, বৃহত্তর রাজশাহীর নওগাঁ, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং চলনবিল এলাকায় এদের বসবাস। উপজাতিদের উন্নয়ন ও ধর্মান্তর কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন চার্চ, মিশনারি সংস্থার কার্যক্রমের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ডভিশন ও কারিতাস ইত্যাদি এনজিওর চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও কমপক্ষে ২৫ লাখ উপজাতি মানুষ আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি।
‘আদিবাসী’ গবেষণা পর্ষদের তথ্য বলছে, ওই ২৫ লাখ উপজাতিরা প্রাচীন জীবনধারায় চলছে। এদের বেশিরভাগই সাঁওতাল। প্রায় ভূমিহীন উপজাতিরা স্বভাবতই শহর ও পৌর এলাকা থেকে দূরবর্তী দুর্গম গ্রামাঞ্চলে বসবাস করতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। ভূস্বামী গোত্রের মানুষদের কাছ থেকে এরা সামান্য জমি নিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করে।

ভূস্বামীসহ অন্যান্য মানুষের জমিতে ফসল ফলানোই উপজাতি মেয়েদের প্রধান কাজ। কৃষিকাজ ও ঘর গেরস্থালীর কাজ মেয়েরাই করে থাকে। চোলাইমদ তৈরিও এদের অন্যতম একটি কাজ। পুরুষরা মাছ ও বন্যপ্রাণি শিকারের কাজ করে। নদ-নদীতে পানি না থাকা এবং বিল-জলাশয়ে মৎস্যচাষ শুরু হওয়ায় উপজাতিদের মাছ শিকার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তীর ধনুক নিয়ে পাখি ও বন্যপ্রাণি শিকারই হয়ে উঠেছে তাদের আমিষের চাহিদা মেটানোর একমাত্র অবলম্বন। এটা উপজাতি পুরুষদের নেশাও বটে।
বেজি, বন বিড়াল, মেছোবাঘ, ভোঁদড় জাতীয় প্রাণি, ধেড়ে ইঁদুর, শজারু, বনরুই ও শেয়াল জাতীয় প্রাণি এবং কিছু কিছু সাপ ও পাখি উপজাতিদের প্রিয় খাবার। বর্ষায় এরা বসতবাড়িতে থেকেই উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে এবং ঘরে তৈরি চুঁঁয়ানি ও দারু জাতীয় মদ খেয়ে সময় কাটায়। তবে শীত মৌসুমে এরা দলবদ্ধ হয়ে তীর ধনুকসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে বন্যপ্রাণি শিকারের অভিযানে বেরিয়ে পড়ে।

‘আদিবাসী’ গবেষণা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বলেন, দিন দিন প্রকৃতি ও পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে সেটা উপজাতিদের বিবেচনায় আসে না। বন্যপ্রাণি শিকার বন্ধের বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। উপজাতি জনগোষ্ঠির ভাষা ও সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য ঠিক রেখে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরানোর কর্মসূচি নিতে হবে। এর ফলে বিপন্ন প্রায় বন্যপ্রাণি রক্ষাসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্যও ধরে রাখা সম্ভব হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার রায়হান আহম্মেদ রানার মতে, উপজাতিদের নিয়ে যেটুকু কাজ হচ্ছে সেটা মূলত খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষার শর্তে উন্নয়ন। এটাতো কাঙ্খিত হতে পারে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার জানান, উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে ভাবনা চিন্তার অবকাশ তৈরি হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আদিবাসী’দের উন্নয়নের নামে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা

আপডেট টাইম : ০৯:২৯:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণ। কৃষি জমি বাড়াতে বনাঞ্চল উজাড় ইত্যাদি কারণে উত্তরাঞ্চলের বন্য প্রাণিজগত এমনিতেই বিপন্ন হতে চলেছে। এর বাইরে উপজাতিদের অন্যতম নেশা বন্যপ্রাণী শিকার করে খাওয়ার প্রবণতায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণি। অপরদিকে ‘আদিবাসী’দের জীবনমান উন্নয়নের নামে যে কাজ হচ্ছে তা হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলায় রয়েছে উপজাতি মানুষ। তবে বৃহত্তর দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, ঘোড়াঘাট, বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, নীলফামারী, বৃহত্তর বগুড়ার জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, বৃহত্তর রাজশাহীর নওগাঁ, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং চলনবিল এলাকায় এদের বসবাস। উপজাতিদের উন্নয়ন ও ধর্মান্তর কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন চার্চ, মিশনারি সংস্থার কার্যক্রমের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ডভিশন ও কারিতাস ইত্যাদি এনজিওর চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও কমপক্ষে ২৫ লাখ উপজাতি মানুষ আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি।
‘আদিবাসী’ গবেষণা পর্ষদের তথ্য বলছে, ওই ২৫ লাখ উপজাতিরা প্রাচীন জীবনধারায় চলছে। এদের বেশিরভাগই সাঁওতাল। প্রায় ভূমিহীন উপজাতিরা স্বভাবতই শহর ও পৌর এলাকা থেকে দূরবর্তী দুর্গম গ্রামাঞ্চলে বসবাস করতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। ভূস্বামী গোত্রের মানুষদের কাছ থেকে এরা সামান্য জমি নিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করে।

ভূস্বামীসহ অন্যান্য মানুষের জমিতে ফসল ফলানোই উপজাতি মেয়েদের প্রধান কাজ। কৃষিকাজ ও ঘর গেরস্থালীর কাজ মেয়েরাই করে থাকে। চোলাইমদ তৈরিও এদের অন্যতম একটি কাজ। পুরুষরা মাছ ও বন্যপ্রাণি শিকারের কাজ করে। নদ-নদীতে পানি না থাকা এবং বিল-জলাশয়ে মৎস্যচাষ শুরু হওয়ায় উপজাতিদের মাছ শিকার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তীর ধনুক নিয়ে পাখি ও বন্যপ্রাণি শিকারই হয়ে উঠেছে তাদের আমিষের চাহিদা মেটানোর একমাত্র অবলম্বন। এটা উপজাতি পুরুষদের নেশাও বটে।
বেজি, বন বিড়াল, মেছোবাঘ, ভোঁদড় জাতীয় প্রাণি, ধেড়ে ইঁদুর, শজারু, বনরুই ও শেয়াল জাতীয় প্রাণি এবং কিছু কিছু সাপ ও পাখি উপজাতিদের প্রিয় খাবার। বর্ষায় এরা বসতবাড়িতে থেকেই উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে এবং ঘরে তৈরি চুঁঁয়ানি ও দারু জাতীয় মদ খেয়ে সময় কাটায়। তবে শীত মৌসুমে এরা দলবদ্ধ হয়ে তীর ধনুকসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে বন্যপ্রাণি শিকারের অভিযানে বেরিয়ে পড়ে।

‘আদিবাসী’ গবেষণা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বলেন, দিন দিন প্রকৃতি ও পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে সেটা উপজাতিদের বিবেচনায় আসে না। বন্যপ্রাণি শিকার বন্ধের বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। উপজাতি জনগোষ্ঠির ভাষা ও সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য ঠিক রেখে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরানোর কর্মসূচি নিতে হবে। এর ফলে বিপন্ন প্রায় বন্যপ্রাণি রক্ষাসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্যও ধরে রাখা সম্ভব হবে।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার রায়হান আহম্মেদ রানার মতে, উপজাতিদের নিয়ে যেটুকু কাজ হচ্ছে সেটা মূলত খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষার শর্তে উন্নয়ন। এটাতো কাঙ্খিত হতে পারে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফজলে রাব্বি ডলার জানান, উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে ভাবনা চিন্তার অবকাশ তৈরি হয়েছে।