আইভীরশেষ আট মাস কঠিন সময়

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মেয়াদকাল বাকি আর সাড়ে আট মাস। স্থানীয় সরকার বিভাগের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী তার মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর।

নির্বাচনের আরো আট মাসের বেশি সময় বাকি থাকলেও মাঠে নেমে গেছেন মেয়র আইভীর প্রতিপক্ষরা। বিশেষ করে গত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বেশ জোরেশোরে তার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, সামনের আট মাস মেয়র আইভীকে কঠিন সময় পর করতে হবে। এই ধাক্কা কীভাবে সামলান সেটাই দেখার বিষয়।

শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর সাপে-নেউলে সম্পর্ক অনেক পুরনো। তবে ২০১১ সালের সিটি নির্বাচন ঘিরে তাদের তিক্ত সম্পর্ক চরমে ওঠে। এখন আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ‘শত্রুতার রাজনীতি’ আবার মাঠে গড়িয়েছে। মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে শত শত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে্ এসবের বিচার চাইছেন শামীম ওসমান।

আইভী অভিযোগ করছেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে তার পেছনে লেগে আছেন শামীম ওসমান। একই সঙ্গে তাকে হয়রানি করার জন্য শামীম ওসমান এখন উঠেপড়ে লেগেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জুড়ে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এসব পোস্টারে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অশোভন বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। গত বুধবার সিটি করপোরেশনের এক ঠিকাদারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, যার পেছনে শামীম ওসমানের নির্দেশ আছে বলে ইঙ্গিত করেন আইভী।

আইভীর অভিযোগ, তাকে কোণঠাসা করতে তার ভাই, ভাগ্নেসহ সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে নারায়ণগঞ্জে লেক ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের ঠিকাদার জাকির হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে রেলওয়ের একজন কানুনগোর মামলায়। তাকে ছাড়িয়ে আনতে রাতভর থানায় বসে থাকেন মেয়র আইভী।

একটি বিশেষ মহলের নির্দেশে এই মামলা দেয়া হয়েছে দাবি করে আইভী বলেন, “তাদের নির্দেশে আমার ভাই, ভাগ্নে, ঠিকাদার সুফিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নকাজ ঠেকাতে ওই মহলটি এসব করছে। আমার অপরাধ আমি সাত খুনের বিচার চেয়েছি, ত্বকী হত্যার বিচার চেয়েছি, নাট্যকার চঞ্চল হত্যার বিচার চেয়েছি। এ জন্য বিশেষ মহলটি আমার পেছনে লেগেছে।”

থানায় বসে আইভী আরো বলেন, “কাল থেকে উন্নয়নকাজ চলবে না। উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকলে আমি পদত্যাগ করব। এই শহর শামীম ওসমানের। শামীম ওসমানই এই শহরে থাক।”

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আইভী বলেন, “আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তারা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আসছে এবং অভিযোগ দিয়ে আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদন্ত করে কিছুই পায়নি। তারপর থেকে তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।”

আইভীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, “আগামী বছর ১৬ মার্চ (নিয়ম অনুযায়ী এর মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা) নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে সত্যের সঙ্গে মিথ্যার লড়াই হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে এই নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর, উন্নয়ন করার জন্য সিটি করপোরেশনের আগামী দিনে নতুন নেতৃত্ব আসবে।”

নারায়ণগঞ্জ জুড়ে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটানোর বিষয়ে শামীম ওসমান কিছু না বললেও স্থানীয় লোকজনের দাবি, তার লোকজনই এসব করেছে।

স্থানীয় যুবলীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইভীর বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তাতে সামনে কঠিন সময় পার করতে হবে তাকে।একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবহারের আশঙ্কাও করেন তিনি।

সদর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার আলী বলেন, “সিটি মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে আগে থেকে শামীম ওসমান দুর্নীতির পেপার পুরো শহর ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু মেয়র তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না।”

১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেগম মনিরা বেগম বলেন, “সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। সরকারি দল যা করছে তা-ই হচ্ছে। শামীম ওসমান ও মেয়র দুজনই সমান।”

২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আইভী মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে। দুজনের ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৩। আইভি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট, আর শামীম ওসমান পান ৭৮ হাজার ৭০৫।

আইভীর বাবা আলী আহম্মদ চুনকাও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়াই স্বাধীন বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার শেষ চেয়ারম্যান ছিলেন চুনকার মেয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভের পর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ২৮ মে পর্যন্ত আইভী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ‘চেয়ারম্যান’ পদ পরিবর্তন করে ‘মেয়র’করার পর একই বছরের ২৯ মে থেকে ২০১১ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আইভী।

পরে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে এর প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর