হাওর বার্তা ডেস্কঃ বৈচিত্র্যপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক এক রকম বৈশিষ্ট্য।
একই সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা।
তারা আশ্বিনে খেজুর গাছ চাঁছতে (স্থানীয় শব্দ- ঝোড়া) শুরু করেছেন। কাজ শেষে ভাদ্রে গাছ শুকানো নল লাগানো শেষে রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করা হয়।
তবে আরও দুইসপ্তাহ পর খেজুর গাছ থেকে বেশি রস সংগ্রহ করতে পারবে গাছিরা। খেজুর গাছ একবার চাঁছলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়। তারপর তিনদিন গাছ শুকাতে হয়। শুকনো গাছের রস সুমিষ্ট হয়। শীত বাড়বে, তত খেজুরের রস সংগ্রহ হবে। খেজুরের রস সংগ্রহ করে রস থেকে পাটালি গুড় তৈরি শুরু হয়ে চলবে মাঘ মাস জুড়ে।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে গাছিরা খেজুরের গাছগুলো পরিচর্যা করছেন। ঝুঁকি নিয়ে মাজায় রাবারের বেল্ট ব্যবহার করছেন। রোদ্রে খেজুর গাছ শুকানোর পর কেউ প্লাস্টিকের, কেউ মাটির হাঁড়ি গাছে বাঁধছেন। এখনকার রস তেমন মিষ্টি না। কেউবা অল্প কাঁচা রস সংগ্রহ করে হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কেউ কেউ আবার ঝোলা গুড় বানানোর চেষ্টা করছেন।
গ্রামাঞ্চলে পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, বাড়ির আঙিনায় খেজুরের গাছ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য ছিল। ঝোপঝাড়ে, ক্ষেতের আইলে, গ্রামের মেঠোপথের দুই ধারে অসংখ্য খেজুরের গাছ কোন পরিচর্যা ছাড়া বড় হতো। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হতো সুস্বাদু খেজুরের পাটালী গুড়। অগ্রহায়ণ মাসে গ্রামাঞ্চলে গাছি পুরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। একদিকে নতুন ধানের চাল,আর খেজুরের রসে তৈরি হতো নানা প্রকার পিঠা-পায়েস। বাড়িতে বাড়িতে নবান্নের উৎসব দেখা যেতো। যা এখন বিলুপ্ত। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্য।
জনপদের সাধারণ মানুষ সচেতন না হওয়ার কারণে পরিবেশবান্ধব এ খেজুরের গাছ ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে বেশি ব্যবহার করার কারণে খেজুর গাছ চোখে পড়ে না। কমছে শুধুই খেজুর গাছের সংখ্যা। সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন-যাপনের হারিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রচলিত সংস্কৃতি।
ঈশ্বরদীতে বড় আকৃতির খেজুর গাছ ছিল, সাত কিলোমিটার দূরে, ঈশ্বরদী শহর থেকে পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখা যেতো। কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন সেই খেজুরের গাছ। এখন ঈশ্বরদী উপজেলা শহরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কোথাও খেজুরের গাছ চোখে পড়ে না। প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সচেতন মহল মনে করেন, খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে।