ঢাকা ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্ত্র লুট করে সেগুলো যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করতাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ মার্চ ২০১৬
  • ২৮৫ বার

বীর মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম ১৯৫৪ সালের ১ এপ্রিল, চাঁদপুরের মতলব থানার ঘোড়াধারি গ্রামে। বাবা মরহুম মৌলভী মোহাম্মদ আলী, মা মরহুমা আমির জাহান। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। সে সময়ই যোগ দেন স্থানীয় সংগ্রা্ম কমিটিতে। যুদ্ধ শুরু হলো। মাঠে নামলেন তিনিও। তারপর টানা নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় কি করলেন এই সাহসী তরুণ? মুক্তিযুদ্ধের সে সব গল্প শুনতে তার মুখোমুখি হয়েছিল পূর্বপশ্চিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রবিউল ইসলাম রবি। ছবি তুলেছেন দ্বীপময় চৌধুরী ডিউক।

`৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পরে মুক্তিযুদ্ধের মূল পর্ব শুরু হলেও এর প্রেক্ষাপট তৈরী হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই| আমরা সে সময় থেকেই চিন্তা করেছিলাম, বাঙ্গালি জাতিকে শোষন থেকে মুক্ত করার। তবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষনে স্পষ্ট হয়ে গেল দেশকে স্বাধীন করতে হবে।’

‘প্রথমে আমরা আক্রমন বা কোনো রকম উস্কানিতে যেতে চাইনি। ২৫ মার্চ যখন হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ কুমিল্লা জেলা আক্রমন করে পুরো শহর দখল করে নেয়। আমরা সে সময়ের স্থানীয় নেতা আফজাল খানের বাড়িতে সংগঠিত হতে থাকি। আমাদের ইউনিয়নে থানা হেড কোয়ার্টার থেকে লোক আসে সংগ্রাম কমিটি করার জন্য। সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র হিসেবে আমাকে দেওয়া হলো সংগ্রাম কমিটির মতলব থানার ২২ নং দক্ষিন উপাধি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।’

‘আমার মূল কাজ ছিল যুদ্ধে আসা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সমন্বয় করে তাদেরকে ভারতে পাঠানো ও ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে যারা আসে তাদেরেকে সংগঠিত করা। সে সময় থেকেই আমরা প্রথম প্রতিরোধ করার চিন্তা শুরু করি।’

‘পরবর্তিতে ৭১ এর জুন বা জুলাই এর দিকে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। সে সময় আমাকে সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি মুজিব বাহিনীরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমার কাজ হলো যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসে তাদের নানা সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা দেয়া। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারসহ সকল ধরণের সাপোর্ট দেওয়ার কাজ করা ও যারা ভারতে ট্রেনিং এর সুযোগ পায়নি তাদেরকে ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা করে দেওয়া। আমাদের লোকাল একটা ট্রেনিং সেন্টার ছিল কুমিল্লাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।’

IMG_0813 copy‘মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আমরা শর্ট গান ও স্টেনগান রাইফেল ব্যবহার করতাম। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকারদের আক্রমন করে তাদের থেকেও অস্ত্র লুট করে সেগুলো যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করতাম।’

‘সে সময় আমাদের জেলা কমান্ডার ছিলেন জহিরুদ্দির বাবর আর থানা কমান্ডার ছিলেন আব্দুল খালেক। তাদের নেতৃত্বেই মুলত সংগ্রাম কমিটি ও মুজিব বাহিনী কাজ করতো আমাদের জেলায়।’

‘জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি, যে স্বপ্ন নিয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সে লক্ষ্য অর্জন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে।’

‘আমার জীবন দিয়েই বলতে পারি, যুদ্ধে গেছি, যোদ্ধাদেরকে সংগঠিত করেছি, তারপরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আমাদের লাইনে দাঁড়াতে হয়। আমাদেরকে প্রমান করতে হয় আমরা মুক্তিযোদ্ধা।’

‘অথচ লজ্জার বিষয়, যারা মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, তারাই নির্ধারণ করছে কে মুক্তিযোদ্ধা আর কাকে সার্টিফিকেট দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি এলাকার সবাই জানে। সে সময়ের মুরুব্বিরা যারা এখনো জীবিত আছেন তারা দেখেছেন। সব প্রমান স্বত্বেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এখনও স্বীকৃতির জন্য দ্বারেদ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয়। অনেক অমুক্তিযোদ্ধা যারা স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেকের সে সময় জন্ম হয়েছিল মাত্র। তারা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশতো নামে স্বাধীন, প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তো নয়ই, দেশের মানুষও পায়নি।’

‘তবে যুদ্ধ যখন করেছি ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে করিনি। পুরো দেশ, জাতির মুক্তি নিয়ে কাজ করেছি। এখনও করছি।তবে শারীরিক শক্তি নেই, মানসিক শক্তিতেই মৃত্যু পর্যন্ত দেশের সেবা করতে চাই।’

‘মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকায় চলে আসি। ৭২ সালে আওয়ামী লীগের কমিটি হয়। সে সময় মোহাম্মদপুর ই-ব্লক আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। অনেকেই মোহাম্মদপুরের বিহারিদের বাড়ি দখল করে মালিক হয়ে গেছে, এখনো আছে। আমাকেও বলা হয়েছিল কিন্তু আমি পারিনি। এখনো আমার সে সময়ের পরিচিত অনেকেই বলে আমি ভূল করেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে আমি ঠিক কাজটিই করেছিলাম বলেই মনে করি।’

‘পরবর্তিতে ৭৩ এর নির্বাচন করলাম। সে সময় ড. কামাল হোসেন ছিলেন আমাদের ক্যান্ডিডেট। শুধু মোহাম্মদপুরের নেতাই নয় পুরো কুমিল্লা সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারিও ছিলাম।’

IMG_0802 copy‘৭৩ এর নির্বাচনের পর আমার বিয়ের জন্য আমার পরিবার মেয়ে দেখে। আমার পরিবার একজনকে মোটামুটি পছন্দও করে। সে সময় এক বন্ধুর সঙ্গে পুরনো ঢাকার ঠাটারি বাজারে বেড়াতে যাই। সেখানে একটি মেয়েকে দেখতে পাই একটি ছোট বাচ্চাসহ। তার সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হলো। সে ছিল একজন নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। যুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন ঠাটারী বাজার আওয়ামী লীগের সভাপতি। নাম ছিল আজিজুল হক হারুন। আমার তখন মনে হলো একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এত কম বয়সে বিধবা, তিনি যদি আমাকে বিয়ে করেন আমি তাকে বিয়ে করবো সিদ্ধান্ত নেই। আমার পরিবারকে পূর্ব নির্ধারিত মেয়েকে নিষেধ করতে বলেছিলাম। এখনো একসঙ্গে সেই সন্তানসহ আমার চার ছেলে মেয়ে নিয়ে বেশ ভাল আছি।’

‘ক্ষোভ বা দুংখ যেটাই বলেন, সেটা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ তখনও ছিলো এখনও আছে। সে সময়ে কারা কারা এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল দালিলিকভাবে প্রমানিত। তারপরও কেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্বীকৃতির জন্য ঘুরতে হবে যে, আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি মুক্তিযোদ্ধা বলে দ্বারে দ্বারে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্ত্র লুট করে সেগুলো যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করতাম

আপডেট টাইম : ১২:৪৭:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ মার্চ ২০১৬

বীর মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম ১৯৫৪ সালের ১ এপ্রিল, চাঁদপুরের মতলব থানার ঘোড়াধারি গ্রামে। বাবা মরহুম মৌলভী মোহাম্মদ আলী, মা মরহুমা আমির জাহান। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। সে সময়ই যোগ দেন স্থানীয় সংগ্রা্ম কমিটিতে। যুদ্ধ শুরু হলো। মাঠে নামলেন তিনিও। তারপর টানা নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় কি করলেন এই সাহসী তরুণ? মুক্তিযুদ্ধের সে সব গল্প শুনতে তার মুখোমুখি হয়েছিল পূর্বপশ্চিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রবিউল ইসলাম রবি। ছবি তুলেছেন দ্বীপময় চৌধুরী ডিউক।

`৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পরে মুক্তিযুদ্ধের মূল পর্ব শুরু হলেও এর প্রেক্ষাপট তৈরী হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই| আমরা সে সময় থেকেই চিন্তা করেছিলাম, বাঙ্গালি জাতিকে শোষন থেকে মুক্ত করার। তবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষনে স্পষ্ট হয়ে গেল দেশকে স্বাধীন করতে হবে।’

‘প্রথমে আমরা আক্রমন বা কোনো রকম উস্কানিতে যেতে চাইনি। ২৫ মার্চ যখন হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ কুমিল্লা জেলা আক্রমন করে পুরো শহর দখল করে নেয়। আমরা সে সময়ের স্থানীয় নেতা আফজাল খানের বাড়িতে সংগঠিত হতে থাকি। আমাদের ইউনিয়নে থানা হেড কোয়ার্টার থেকে লোক আসে সংগ্রাম কমিটি করার জন্য। সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র হিসেবে আমাকে দেওয়া হলো সংগ্রাম কমিটির মতলব থানার ২২ নং দক্ষিন উপাধি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব।’

‘আমার মূল কাজ ছিল যুদ্ধে আসা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সমন্বয় করে তাদেরকে ভারতে পাঠানো ও ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে যারা আসে তাদেরেকে সংগঠিত করা। সে সময় থেকেই আমরা প্রথম প্রতিরোধ করার চিন্তা শুরু করি।’

‘পরবর্তিতে ৭১ এর জুন বা জুলাই এর দিকে মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। সে সময় আমাকে সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি মুজিব বাহিনীরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমার কাজ হলো যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসে তাদের নানা সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনা দেয়া। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারসহ সকল ধরণের সাপোর্ট দেওয়ার কাজ করা ও যারা ভারতে ট্রেনিং এর সুযোগ পায়নি তাদেরকে ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা করে দেওয়া। আমাদের লোকাল একটা ট্রেনিং সেন্টার ছিল কুমিল্লাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য।’

IMG_0813 copy‘মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আমরা শর্ট গান ও স্টেনগান রাইফেল ব্যবহার করতাম। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকারদের আক্রমন করে তাদের থেকেও অস্ত্র লুট করে সেগুলো যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করতাম।’

‘সে সময় আমাদের জেলা কমান্ডার ছিলেন জহিরুদ্দির বাবর আর থানা কমান্ডার ছিলেন আব্দুল খালেক। তাদের নেতৃত্বেই মুলত সংগ্রাম কমিটি ও মুজিব বাহিনী কাজ করতো আমাদের জেলায়।’

‘জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি, যে স্বপ্ন নিয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সে লক্ষ্য অর্জন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে।’

‘আমার জীবন দিয়েই বলতে পারি, যুদ্ধে গেছি, যোদ্ধাদেরকে সংগঠিত করেছি, তারপরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আমাদের লাইনে দাঁড়াতে হয়। আমাদেরকে প্রমান করতে হয় আমরা মুক্তিযোদ্ধা।’

‘অথচ লজ্জার বিষয়, যারা মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, তারাই নির্ধারণ করছে কে মুক্তিযোদ্ধা আর কাকে সার্টিফিকেট দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি এলাকার সবাই জানে। সে সময়ের মুরুব্বিরা যারা এখনো জীবিত আছেন তারা দেখেছেন। সব প্রমান স্বত্বেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে এখনও স্বীকৃতির জন্য দ্বারেদ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয়। অনেক অমুক্তিযোদ্ধা যারা স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেকের সে সময় জন্ম হয়েছিল মাত্র। তারা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশতো নামে স্বাধীন, প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তো নয়ই, দেশের মানুষও পায়নি।’

‘তবে যুদ্ধ যখন করেছি ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে করিনি। পুরো দেশ, জাতির মুক্তি নিয়ে কাজ করেছি। এখনও করছি।তবে শারীরিক শক্তি নেই, মানসিক শক্তিতেই মৃত্যু পর্যন্ত দেশের সেবা করতে চাই।’

‘মুক্তিযুদ্ধের পরে ঢাকায় চলে আসি। ৭২ সালে আওয়ামী লীগের কমিটি হয়। সে সময় মোহাম্মদপুর ই-ব্লক আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। অনেকেই মোহাম্মদপুরের বিহারিদের বাড়ি দখল করে মালিক হয়ে গেছে, এখনো আছে। আমাকেও বলা হয়েছিল কিন্তু আমি পারিনি। এখনো আমার সে সময়ের পরিচিত অনেকেই বলে আমি ভূল করেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে আমি ঠিক কাজটিই করেছিলাম বলেই মনে করি।’

‘পরবর্তিতে ৭৩ এর নির্বাচন করলাম। সে সময় ড. কামাল হোসেন ছিলেন আমাদের ক্যান্ডিডেট। শুধু মোহাম্মদপুরের নেতাই নয় পুরো কুমিল্লা সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারিও ছিলাম।’

IMG_0802 copy‘৭৩ এর নির্বাচনের পর আমার বিয়ের জন্য আমার পরিবার মেয়ে দেখে। আমার পরিবার একজনকে মোটামুটি পছন্দও করে। সে সময় এক বন্ধুর সঙ্গে পুরনো ঢাকার ঠাটারি বাজারে বেড়াতে যাই। সেখানে একটি মেয়েকে দেখতে পাই একটি ছোট বাচ্চাসহ। তার সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হলো। সে ছিল একজন নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। যুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন ঠাটারী বাজার আওয়ামী লীগের সভাপতি। নাম ছিল আজিজুল হক হারুন। আমার তখন মনে হলো একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এত কম বয়সে বিধবা, তিনি যদি আমাকে বিয়ে করেন আমি তাকে বিয়ে করবো সিদ্ধান্ত নেই। আমার পরিবারকে পূর্ব নির্ধারিত মেয়েকে নিষেধ করতে বলেছিলাম। এখনো একসঙ্গে সেই সন্তানসহ আমার চার ছেলে মেয়ে নিয়ে বেশ ভাল আছি।’

‘ক্ষোভ বা দুংখ যেটাই বলেন, সেটা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ তখনও ছিলো এখনও আছে। সে সময়ে কারা কারা এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল দালিলিকভাবে প্রমানিত। তারপরও কেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্বীকৃতির জন্য ঘুরতে হবে যে, আমি মুক্তিযোদ্ধা, আমি মুক্তিযোদ্ধা বলে দ্বারে দ্বারে।’