মাদকই প্রধান চ্যালেঞ্জ ওসি তপনের

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের পুরাতন থানাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সূত্রাপুর। নিজস্ব ভবনও রয়েছে থানাটির। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যেও সূত্রাপুর গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই ভবনটি পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ডিএমপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই থানা রয়েছে।

অবস্থানগত দিক থেকে কেরানীগঞ্জের মানুষের যাতায়াত ও ওঠাবসা বেশি এই এলাকায়। থানাটির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তপন চন্দ্র সাহা। গত বছরের ১১ নভেম্বর ওয়ারী থানা থেকে সূত্রাপুরে ওসি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। যিনি উপ-পরিদর্শক (এসআই) থাকতে দুইবার রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছিলেন।

এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কমিউনিটি পুলিশকে শক্তিশালী করতে ও মাদককে না বলতে পুরো এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এই এলাকায় ধারাবাহিক কোনো অপরাধ না থাকলেও মাদকই প্রধান সমস্যা।

সম্প্রতি ওসি তপন চন্দ্র সাহার একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে। পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
তপন চন্দ্র সাহা: জ্বি, আমি ভালো আছি। আমরা তো আর কথা বলি না। ডিএমপি মিডিয়া শাখার মাধ্যমে সব বলি। তবে আসছেন, কিছু তো শুনতেই হয়।

জাগো নিউজ: তাহলে সরাসরি প্রশ্নে চলে যাই। ডিএমপির মধ্যে এই সূত্রাপুর থানার গুরুত্ব কী?
তপন চন্দ্র সাহা: ডিএমপির অনেক পুরাতন একটি থানা এটি। এখানকার রাস্তাঘাট, সরকারি স্থাপত্য সবই পুরাতন। বৃহৎ কাঁচা বাজারের আড়ৎ এখানে, বই প্রকাশনীর ঐতিহ্যবাহী বাংলা বাজার এলাকাও এই থানা এলাকাতেই। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। জনবসতিও বাড়ছে। সঙ্গত কারণে ক্রমশই থানাটির গুরুত্ব বাড়ছে।

এই থানা এলাকায় কী কী ধরনের অপরাধ হয়?
তপন চন্দ্র সাহা: এখানে ধারাবাহিক কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড নেই। তবে প্রধান সমস্যা বলতে ওই মাদকই। নেশাজাতীয় দ্রব্যের কেনাবেচা নিয়মিতই ছিল এখানে। নজরদারি ও অভিযানের কারণে ইদানিং তা কমে গেছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে।

মাদকের ব্যাপারে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তপন চন্দ্র সাহা: পুলিশ নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এখনো মাদক এখানে পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অপরাধ কর্ম বলতে এখানে মাদকই সমস্যা। এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।

আপনার থানা এলাকায় কি চেকপোস্ট রয়েছে?
তপন চন্দ্র সাহা: জ্বি, আমাদের একটি স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে। ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে স্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজর রাখি।

আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ?
তপন চন্দ্র সাহা: গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ও ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া বিট পুলিশিং শক্তিশালী করে পুরো থানা এলাকাতেই নজরদারি করা হচ্ছে।

আপনার এলাকার পুলিশিং কতোটা সফল?
তপন চন্দ্র সাহা: ডিএমপির প্রত্যেকটি থানার আলাদা মার্কিং রয়েছে। মার্ক অনুযায়ী থানার মূল্যায়ন হয়। আমি আসার আগে সূত্রাপুর থানার অ্যাভারেজ পয়েন্ট ছিল ২। কিন্তু এখন ৫.৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সফলতা না থাকলে ডিএমপি এই মার্কিং করতো না। গত জানুয়ারি থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এরমধ্যে ৭/৯ এমএম পিস্তলসহ সন্ত্রাসী গ্রেফতার ছিল। বিট পুলিশিং শক্তিশালী করা হয়েছে। পাঁচটি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। একজন করে ইন্সপেক্টর টিম তদারকি করেন। এছাড়া রাতে মোটরসাইকেলেও টহল দেয় পুলিশ। আমরা কমিউনিটি পুলিশিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কমিউনিটি পুলিশ শক্তিশালী হলে সব ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ও নজরদারি রাখা সম্ভব।

মামলা দেখছি আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে করে কি বলা যায় অপরাধ বেড়েছে?
তপন চন্দ্র সাহা: সংখ্যা হয়তো তাই মিন করে। তবে এর অধিকাংশই রিকভারি মামলা, মানে যা পুলিশ নিজে মামলা করে। এর বাইরে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এই পেশাটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তপন চন্দ্র সাহা: ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকায় বাড়ি। ১৯৯০ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে যোগদান করি। ২০০৬ সালে ওসি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ওয়ারী ও সূত্রাপুরের আগে আরো সাতটি থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেছি। যেহেতু অন্য কোনো পেশায় যাওয়ার সুযোগ নেই, সেবামূলক পেশাও বটে, মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ এখানেই বেশি, সে কারণে যতোটা সম্ভব আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিজের দায়িত্বটা পালন করতে চাই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
তপন চন্দ্র সাহা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর