হাওর বার্তা ডেস্কঃ ম্যাচের আগে বাংলাদেশকে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির কাতারে নামিয়ে এনে কথার বাউন্সার ছুড়েছিলেন স্কটল্যান্ড কোচ শেন বার্জার। জবাবটা মাঠেই দিতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বার্জারের হুংকারই সত্যি হলো। পচা শামুকে পা কেটে শুরু হলো বাংলাদেশের টি ২০ বিশ্বকাপ অভিযান। রোববার উদ্বোধনী দিনে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্কটল্যান্ডের কাছে ছয় রানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলংকা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়েই হেরেছিল দল। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তারই পুনরাবৃত্তি হলো।
মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে রাতের ম্যাচে শিশিরের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে তাকে হতাশ করেননি বোলাররা। কিন্তু ৫৩ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে প্রবল চাপে পড়ে যাওয়া স্কটল্যান্ড ম্যাচসেরা ক্রিস গ্রিভসের (২৮ বলে ৪৫) বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নয় উইকেটে ১৪০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়ে যায়। লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যেই ছিল। কিন্তু ঘুমপাড়ানি ব্যাটিংয়ে রান তাড়ায় পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। ১৮ রানের মধ্যে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে হারিয়ে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সাত উইকেটে ১৩৪ রানে থামে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৪ রান। প্রথম তিন বল থেকে আসে ছয় রান। চতুর্থ বলে স্কটিশ পেসার সাফিয়ান শরিফকে ছক্কা মেরে মেহেদী হাসান ক্ষীণ আশা জাগালেও শেষ দুই বলে ১২ রানের সমীকরণ আর মেলেনি। দলের তিন সিনিয়র ব্যাটার সাকিব আল হাসান (২৮ বলে ২০), মুশফিকুর রহিম (৩৬ বলে ৩৮) ও মাহমুদউল্লাহ (২২ বলে ২৩) রান পেলেও মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি। তাতেই বিব্রতকর হার দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। আন্তর্জাতিক টি ২০-তে এ নিয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের দুটিতেই হারল বাংলাদেশ।
এই হারে শেষের এলোমেলো বোলিংয়ের কিছু দায় থাকলেও বাংলাদেশের বোলাররা কাল খারাপ করেননি। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৭ রানে দুই উইকেট নিয়ে দারুণ এক কীর্তি গড়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গাকে (১০৭ উইকেট) ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক টি ২০-তে সবচেয়ে বেশি ১০৮ উইকেট শিকারের রেকর্ড এখন সাকিবের। এছাড়া প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে তিনি গড়েছেন তিন সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট ও ১২ হাজার রানের অনন্য যুগলবন্দির রেকর্ড। কিন্তু দলের হারে নিজের কীর্তি সেভাবে উদ্যাপন করা হলো না এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। ১৯ রানে তিন উইকেট নিয়ে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার মেহেদী হাসান। পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের ঝুলিতে গেছে দুই উইকেট। বাকি দুই উইকেট তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। স্কটল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন ক্রিস গ্রিভস। তার ২৮ বলের ইনিংসে রয়েছে চারটি চার ও দুটি ছক্কা।
তৃতীয় ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে স্কটিশ অধিনায়ক কাইল কোয়েটজারকে বোল্ড করে প্রথম আঘাত হানেন পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দ্বিতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটিতে স্কটল্যান্ড যখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথে, তখনই মঞ্চে হাজির স্পিনাররা। অষ্টম ওভারে জোড়া আঘাতে স্কটল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দেন মেহেদী হাসান। তিন বলের ব্যবধানে ম্যাথু ক্রস (১১) ও জর্জ মানসিকে (২৯) ফিরিয়ে দেন এই অফ-স্পিনার। ১১তম ওভারে সাকিবও ধরেন জোড়া শিকার। এই বাঁ-হাতি স্পিনার ফিরিয়ে দেন রিচার্ড বেরিংটন ও মাইকেল লিস্ককে। পরের ওভারে মেহেদীর তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ক্যালাম ম্যাকলিওড। এক উইকেটে ৪৫ থেকে ৫৩ রানে নেই ছয় উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনারদের দাপটে কাঁপতে থাকা স্কটল্যান্ডকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন ক্রিস গ্রিভস ও মার্ক ওয়াট। সপ্তম উইকেটে তারা যোগ করেন ৫১ রান। ১৮তম ওভারে ওয়াটকে ২২ রানে থামিয়ে এই জুটি ভাঙেন পেসার তাসকিন আহমেদ। শেষ ওভারে টানা দুই বলে গ্রিভস ও জশ ডেভিকে ফিরিয়ে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যে রেখেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় সবই গেছে বিফলে।
(স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)