হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেক বাঘা বাঘা প্রার্থীকেও নির্বাচনী (বিসিবির) বৈতরণী পাড়ি দিতে হয়েছে এবার; কিন্তু সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান চট্টগ্রাম বিভাগীয় কোটায় নামী ক্রীড়া সংগঠক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিনের সাথে এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক যে জাতীয় দল পরিচর্য্যা, পরিচালনা ও তত্ত্বাবধায়ক কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্সেরও প্রধান। কেমন হলো এবারের বিশ্বকাপ উপলক্ষে টাইগারদের প্রস্তুতি? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাহিনীর সম্ভাবনাই বা কতটুকু? কতদুর যেতে পারবে তারা?
দেশের মাটিতে স্লো ও লো এবং খানিক স্পিন সহায়ক পিচে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতাটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভাল খেলায় কতটা সহায়ক হবে? জাগো নিউজের সাথে আলাপে এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন আকরাম খান।
তার বিশ্বাস, এবার টাইগাররা ভাল খেলবে। তাই আকরামের মুখে এমন আশাবাদী মন্তব্য, ‘আল্লাহর রহমতে ভাল করবে। কারণ, আমার মনে হয় এবারের প্রস্তুতিটা অনেক ভাল হয়েছে। আগে কোনোবার এত ভাল প্রস্তুতি হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছি, এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দু’ দুটি সিরিজ খেললাম। তারও আগে জিম্বাবুয়ের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে অংশ নিয়েছে ক্রিকেটাররা। এতে করে তাদের ম্যাচ প্র্যাকটিস হয়েছে ভাল। এ তিনটি সিরিজ আমাদের ভাল হয়েছে। আমরা সবকটায় জিতেছি। প্লেয়াররা মনের দিক থেকে চাঙ্গা ও অনুপ্রাণিত থাকবে।’
তবে দেশের ক্রিকেটের এ পরীক্ষিত যোদ্ধা মানছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের পথচলা সহজ হবে না। তার ব্যাখ্যা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিন্তু সহজ জায়গা নয়। আমরা যে টুর্নামেন্টটা খেলতে যাচ্ছি, সেটা টি টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবচেয়ে বড় আসর। কঠিন ক্ষেত্র। এখানে পথচলা সহজ হবে না। হবার কথাও না।’
আকরাম মানছেন, ‘আমরা টেস্টের মত টি-টোয়েন্টিতেও এতটা ভাল খেলি না। এ ফরম্যাটে আমরা এখনো তেমন শক্তিশালী দল গড়তে পারিনি। তবে যদি আমরা প্রথম ৫ ওভার আর শেষ ৫ ওভারে ভাল ব্যাটিং আর বোলিং করতে পারি, তাহলে ভাল করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমাদের প্লেয়ারদের সেন্সেবল ক্রিকেট খেলতে হবে।’
আকরাম যোগ করেন, বিশ্বকাপে ছোট-বড় দল বলে কিছু নেই। আমাদের প্রথম কোয়ালিফাই রাউন্ড খেলতে হবে। সেখানেও কোন ছোট দল বলে কিছু নেই। কোয়ালিফাই করার পর যাদের সাথে খেলবো তারা সবাই খুব শক্তিশালী দল। তাদের ব্যাটিং ও বোলিং বেশ সোজানো-গোছানো। প্রথম ৫ ওভার আর শেষ ৫ ওভারে ভাল ব্যাটিং করার মত পর্যাপ্ত পারফরমার আছে ওই দলগুলোয়। একইভাবে ডেথ ওভারে কার্যকর বোলিং করার মত বোলারও আছে।’
কিন্তু ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলছে স্লো এবং লো উইকেটে। তাহলে কী আরব আমিরাতে ভাল খেলা সম্ভব? কোন সমস্যা হবে কী?
আকরামের ব্যাখ্যা, ‘দেখেন আমরা তো আর একা খেলিনি। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডেও তো অনেক কোয়ালিটি প্লেয়ার আছে। ওরাতো পারেনি। মোটকথা এ উইকেটে দুই দলের ভেতরে বাংলাদেশ ভাল খেলেছে। আর দুবাই ও আরব আমিরাতে ভেন্যুগুলোয় আইপিএলে যে একদম খুব ভাল উইকেট হচ্ছে তাও কিন্তু নয়। সেখানেও যে রানের নহর বইছে আর চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছুটছে, তা কিন্তু নয়। দুবাই, শারাজাহ এবং আবুধাবিতে কিন্তু আপনি এর চেয়ে খুব ভাল উইকেট পাবেন না। এটা ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া না যে, তাদের মত উইকেট ওখানে পাবেন।’
আকরামের অনুভব ম্যাচ ডে‘তে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, উইকেট কোন ফ্যাক্টর নয়। দেশের উইকেটের মত খেলতে পারেন, তাহলে আর কোন সমস্যাই ঘটবে না।
জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়কের সোজা সাপটা উচ্চারন, আসলে যারা কোয়ালিটি প্লেয়ার তারা সব উইকেটেই ভাল খেলতে পারে। সমস্যা হয় না মানিয়ে নিতে।
চাচা হিসেবে নয়। নির্মোহ ও নিরপক্ষে দৃষ্টি ভঙ্গিতেই আকরামের ধারণা- তামিমের না থাকাটা শুরুর দিকে ঘাটতির কারণ হবে। তার ভাষায়, তামিমের অভাব অবশ্যই বোধ হবে। তিন ফরম্যাটেই তামিম আমাদের ওয়ান অবদ্য বেস্ট প্লেয়ার। ওর কোয়ালিটি, এক্সপেরিয়েন্স অনেক বড় সম্পদ। টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ব্যাটসম্যানদের একটিমাত্র সেঞ্চুরি আছে। সেটা তামিমের। তাই তাকে অবশ্যই মিস করবো।’
‘তামিম থাকলে টিমের স্ট্রেন্থ অনেক বেড়ে যায়। ও থাকলে আরও ভাল হতো। যারা আছে তারাও ভাল প্লেয়ার। কোয়ালিটি আছে। তাদেরও বুদ্ধি খাটিয়ে জায়গামত নিজেদের সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আমাদের বাকি প্লেয়াররাও কম না। তবে তামিম হলো প্রুভেন। তবে এখন যারা নতুন চান্স পেয়েছে, তাদেরও ভাল সুযোগসামনে। তাদেরকে এ সুযোগগুলো নেয়া উচিৎ।’
সাকিব-মোস্তাফিজের আইপিএল খেলা কতটা সহায়ক ও ইতিবাচক হবে? আকরাম মনে করেন, ‘সাকিব খেলতে পারলে (কেকেআরে) খুব ভাল হতো; কিন্তু কি আর করা? টিম কম্বিনেশনের কারনে হয়ত পারছে না (তবে গ্রুপ পর্বে শেষ দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ভালো পারফরম করেছে)। ওখানে তো বিদেশী চারটার বেশি খেলতে পারে না।’
ও কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারেনি। ওগুলোতে আমাদের জন্য অনেক ভাল হতো। তারপরও কোন সমস্যা নেই। সাকিব কোয়ালিটি প্লেয়ার। খুব অল্প সময়ে যে কোন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। যেটা হয়েছে মোস্তাফিজ খুব ভাল বল করছে, ওটা খুব কাজে দেবে।’
‘যারা বলছেন ঢাকায় খারাপ উইকেটে খেলা হয়েছে। যেটা বিশ্বকাপে কাজে দেবে না, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তাই যদি হতো তাহলে মোস্তাফিজ আরব আমিরাতের মাঠে আইপিএলে কিভাবে ভাল করছে? আসল কথা হলো যারা ভাল করার তারা সব জায়গায় ভাল করে।’