হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষকেরা ভালো দাম পাওয়ায় এবার রংপুর অঞ্চলের আগাম জাতের ধানের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। রংপুর অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে আগাম জাতের ধান ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে আগাম জাতের আমন ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গত পাঁচ বছরে রংপুর অঞ্চলে ধানের জমি বেড়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৬৪ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ৬৩ হাজার ১৯৭ হেক্টর আগাম জাতের ধানের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৪ হাজার ৪৩৯ হেক্টর বেশি।
গত বছর বন্যায় কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলায় স্বল্পমেয়াদি ধানের চাষ বেড়েছে প্রায় ২৭ হাজার ৬৪ হেক্টর জমিতে। ২০১৬- ১৭ অর্থবছরে ধানের চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ১৩৩ হেক্টর।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ৪৬ হাজার ১২১ হেক্টর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর। ২০২০-২১ অর্থবছরে চাষ হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৭৫৮ হেক্টর এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৩ হাজার ১৯৭ হেক্টর আগাম ধানের চাষ হয়েছে।
জমিতে বীজ বপন থেকে ফলন পাওয়া পর্যন্ত আগাম জাতের ধানের সময় লাগে ১০০- ১২০ দিন। আগাম ধানের জন্য মূলত জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলার বয়স ১৫-২৫ দিন অর্থাৎ চারার গড় বয়স ২০ দিন হলে জমিতে রোপণ করা হয়।
আমনের বেশকিছু হাইব্রিড ও উফশি জাত কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিরাহীম গ্রামের কৃষক শরিফ উদ্দিন খান জানান, তিনি এ বছর ২৪ শতক জমিতে স্বল্পমেয়াদি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন। ফলন ১২ মণের বেশি আশা করছেন। ধান চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ৯ শত টাকা দরে। বর্তমানে বাজারে গবাদি পশুর খাবার হিসেবে খড়ের চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেয়েছেন। তিনি ওই জমিতে আগাম আলু চাষ করার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। পরে আলু তুলে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
কাউনিয়া উপজেলার সারাই মাছহারী এলাকার কৃষক তারেকুল ইসলাম জানান, দুই বিঘা জমিতে ব্রি-৭৫ জাতের উচ্চফলনশীল ধান চাষ করেছেন। ২-১ দিনের মধ্যে মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলবেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ ধান আশা করছেন। এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ধান বিক্রি কওে ২৫ হাজার টাকা ভাল হবে বলে জানান তিনি।
আগাম জাতের ধান চাষি কৃষকরা জানান, আগাম ধান করে ওই জমিতে আলুসহ অন্যান্য রবিশস্য করা সম্ভব হয়। ফলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এছাড়া আশ্বিন- কার্তিক মাসে জমিতে তেমন ফসল না থাকায় অনেকের কাজ থাকে না। কিন্তু আগাম ধানের চাষ বাড়ায় কৃষি শ্রমিকদের কাজে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগাম ধানের কর্তন হয়েছে নীলফামারী জেলায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৮৯০ হেক্টরে স্বল্পমেয়াদি জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্তনকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর। কৃষকরা ধান কর্তন করেই আগাম আলু এবং রবিশস্য রোপণ শুরু করেছেন। এবার বিঘা প্রতি কৃষকরা ১৩-১৪ মণ ধান পাবেন বলে তিনি জানান।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, কৃষকরা যে ফসলে লাভবান হন, সে ফসল আবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন। জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের অন্য তিন জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে আগাম ধানের আবাদ হয়েছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৮০৭ হেক্টর, ৮ হাজার ১৫০ ও ৬ হাজার ৩২৮ হেক্টর। কর্তনকৃত জমির পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত শুধু নীলফামারী ও রংপুর জেলায় আগাম জাতের ধান কর্তন করা হয়েছে।