ঢাকা: হাসিনাবিহীন নির্বাচন করার কথা বলে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আবার হত্যার পরিকল্পনা করছেন কি-না জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপির কাউন্সিলে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হাসিনাবিহীন নির্বাচন বলতে খালেদা জিয়া কি বোঝাতে চাচ্ছেন? ২১ আগস্টের মতো আবার গ্রেনেড হামলা বা কোনো কিছু করে হত্যার পরিকল্পনা করছেন কি-না? সেটাই হচ্ছে আমার প্রশ্ন’।
রোববার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে খালেদা জিয়ার কাছে এ প্রশ্ন করেন তিনি।
সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা শুরু হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারো তাদের কনফারেন্স হলো। সেখানে দেখলাম, পত্রিকায় পড়লাম যে, তিনি ‘হাসিনাবিহীন’ নির্বাচন করবেন। তার মানে আরো কিছু একটা ষড়যন্ত্রের ঘোট পাকাচ্ছেন তিনি। কারণ, আর তো কোনো পথ তার নেই। সব সময় একটা পথই দেখেন’।
‘চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ছাড়া খালেদা জিয়া, বিএনপি কিছুই বোঝে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিগত সময়ে বহুবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে? শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। বহুবার চেষ্টা করেছে, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। আল্লাহ কাজ দিয়েছেন’।
‘যতোক্ষণ আমার কাজ শেষ না হবে, ততোক্ষণ আল্লাহই আমাকে হেফাজত করবেন। দেশবাসীর দোয়া আছে। নিশ্চয়ই দেশবাসীর কল্যাণের জন্য আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে আপনারা যদি খালেদা জিয়ার বক্তব্য বা তাদের দলের নেতাদের বক্তব্য একটু স্মরণ করেন। দেখবেন, তখনও তারা আমাকে এমন কথা বলেছেন, যে পথে আমার বাবা গেছেন, সে পথে আমিও যাবো’।
‘অর্থাৎ ১৫ আগস্ট আবার বাবাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেভাবে আমাকে হত্যা করা হবে। আমাকে ওই ভাবে বিদায় দেবে। আর রাজনীতি করতে পারবো না’।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এ বক্তব্য দিয়েছিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরে থাক, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবো না। অর্থাৎ আমার অস্তিত্বই থাকবে না, এটাই তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন। তারপরেই ২১ আগস্টের ঘটনা। কাজেই এটা দেশবাসীকে একটু স্মরণ করাতে চাই। এই যে তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন। তারপর ওই তার অ্যাকশন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা’।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘২০০৪ সাল না তার আরো পেছনে যেতে চাই। কোটালিপাড়ায় আমি যখন সভা করতে গেলাম, সেখানে একটা ৭৬ কেজি বোমা উদ্ধার করে। সেখানে তা উদ্ধার হওয়ার কথা না। ঘটনাচক্রে চা দোকানদার তার সন্ধান পান। ঠিক তার আগে ওই একই ধরনের বক্তব্য তারা দিয়েছিলেন’।
বিএনপির বিগত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনে না আসার পেছনে কারণ কি? কারণ আর কিছু না। এদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক, তা তারা চায় না। কারণ তাদের জন্ম তো গণতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে না। অবৈধ ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে’।
‘তারা শুধু ওইভাবেই চিন্তা করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েই কিভাবে ক্ষমতাটা দখল করা যায়, এই চিন্তাটাই তাদের মাথায় থাকে’।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়াকে এ কথাও বলেছি, আমরা সর্বদলীয় সরকার করবো। আপনারা যে মন্ত্রণালয় চান, আমরা আপনাদের তাই দেবো’।
বিগত সময়ে বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবনে অনেক আন্দোলন দেখেছি। কিন্তু এরকম আন্দোলন বাংলাদেশের কেউ দেখেনি যে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা’।
‘এরাতো অমানুষ, তাদের মানুষ হিসেবে মনে করার কোনো কারণ নেই’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেদিন পত্রিকায় পড়লাম, বিএনপি নেত্রী বলেছেন, তার আন্দোলন নাকি ঢাকার বাইরে খুব সফল হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকার বাইরে তিনি অনেক মানুষ পুড়িয়ে মারতে পেরেছেন। তাতেই তার তৃপ্তি’।
‘তাদের আন্দোলনে তো আর কিছু ছিলো না মানুষ পোড়ানো ছাড়া। মানুষ পুড়িয়ে মেরে তিনি তৃপ্তির ঢেকুর দিচ্ছেন’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকাটা দরকার মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল- ওই ৫ বছর আর ২০০৯ সালের সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত গত সাত বছরে বাংলাদেশে যতো উন্নতি হয়েছে, ওই ২১ বছর যদি পুরো যোগ করেন তার কিছুই হবে না।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশটা গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তখনো গোলাভরা ধান তিনি রেখে গিয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগ আসার পর এ দেশের মানুষ গোলাভরা ধান পেয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা সবই মানুষ পাচ্ছে। সেই সঙ্গে অবকাঠামোর উন্নয়ন, মানুষের কর্মসংস্থান, মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে। তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে মানুষের উন্নতি হয় আর বিএনপি বা জামায়াত যখন ক্ষমতায় তাদের কোনো উন্নতি হয়নি।
২০২১ সালে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ায় সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল পেছানোর ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। আমরা নির্বাচনে বেশি গুরুত্ব দেই। কাউন্সিলে তৃণমূল থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন। সেজন্য কাউন্সিল নির্বাচনের বড় গ্যাপ বা সুবিধাজনক সময়ে করা হবে।
বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কার্যনির্বাহী সংসদের প্রায় সকল নেতারা উপস্থিত ছিলেন।