ঢাকা ১০:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে বাংলাদেশ স্বরূপে উদ্ভাসিত জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাধীনতার পর যে দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সন্দিহান ছিল বিশ্ব, আজ সেই বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের পথে এগিয়ে চলেছে। আজকে বাংলাদেশের যে উত্থান, ৫০ বছর আগে কেউ কল্পনাও করেনি। সেই দেশের অগ্রগতি বিশ্বের কাছে ‘অভাবনীয়’ হিসেবে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ যে উঠে দাঁড়াবে তা আর কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক বঙ্গবন্ধুর সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই ছিল না। বাঙালি হিসেবে তিনি ছিলেন গর্বিত। বাংলার উন্নয়ন নিয়ে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড আশাবাদী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর জতিসংঘে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও বাংলাদেশের, বাঙালির অবস্থানকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে আত্মপরিচয়ের স্বরূপ তুলে ধরেছিলেন সারা বিশ্বের জাতি-রাষ্ট্রের সামনে।

জাতিসংঘে প্রথম বাংলাকে তুলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘে ভাষণ দেন। আর প্রথমবারই তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আত্মসম্মানবোধের পরিচয় স্থাপন করেছিলেন। তার মেয়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বাংলাকে নানাভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পিতার মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীন হওয়ার চার বছর পরও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ যখন গড়িমসি করছিল, তেমন একটি প্রতিকূল পরিবেশে জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেই বক্তৃতা ছিল বাংলায়। তাকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল ইংরেজিতে করার জন্য। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তাৎক্ষণিক ইংরেজিতে অনুবাদ করে ইংরেজিতে মর্মার্থ বলার জন্য কূটনীতিক ফারুক চৌধুরীকে মনোনীত করেন। কিন্তু বাংলায় বক্তৃতা করার পথ থেকে সরে আসেননি। তবে সেটিই বঙ্গবন্ধুর বিশ্বের মঞ্চে প্রথম বাংলায় বক্তৃতা ছিল না। এর আগে ১৯৫২ সালের ২-১২ অক্টোবর পিকিং এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। তার দেখাদেখি ভারতের সাহিত্যিক মনোজ বসুও বাংলায় বক্তৃতা করেন। যাহোক, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ভাষণ দেওয়ার মাত্র ছয় দিন আগে অর্থাত্ ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।

জাতিসংঘের প্রথম ভাষণে যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু - Chattogrameralo.comসৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। তখন কিন্তু পরিবেশটা এমন ছিল না। আর এই মুহূর্তে নানা কারণে বাংলাদেশের এই ভাবমূর্তিটা আরো বেশি পরিচ্ছন্ন বা উজ্জ্বল হয়েছে বহির্বিশ্বে, তখন এমন পরিস্থিতি ছিল না। বঙ্গবন্ধু যখন জাতিসংঘে যান তখন বৈশ্বিক অবস্থা আমাদের অনুকূলে ছিল না, ছিল প্রতিকূলে। ঐ রকম একটা অবস্থাতেই তিনি জাতিসংঘে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাংলা লগ্নতা থেকে পিছিয়ে যাননি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে ঠিক ৪৭ বছর আগে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি সেদিন গণতন্ত্র, ন্যায়পরায়ণতা, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ২২ বছর পর বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাধারণ পরিষদে বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে দেওয়া সেই বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরেন।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণ | প্রথম আলোজাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনবার বাংলায় বক্তৃতা করেন। আর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গতকাল ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো ১৩ বার বাংলায় বক্তৃতা করলেন। এ নিয়ে মোট ১৮ বার জাতিসংঘে দেওয়া বক্তৃতার মধ্যে ১৬ বার বাংলায় বক্তৃতা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো সরকার প্রধান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেননি। তবে, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯২ সালে জাতিসংঘে শিশুবিষয়ক একটি অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন।

এর আগে, ফ্যাসিবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামকে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে চির অম্লান করে রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত এই আন্তর্জাতিক অর্জনটি সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য দেশের বিরাট অর্জন হিসেবে দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীকালে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২০১৫ সালে জাতিসংঘ প্রদত্ত ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ’ পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নিজ দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক আঙিনাতেও তাদের কাজের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে শুরু করে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর স্বীকৃতি অর্জন

বাংলাদেশের বিশ্বের বুকে নিজেদের তুলে ধরার অপর একটি অনন্য প্রয়াস ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর স্বীকৃতি অর্জন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলিতে যোগ হয় এক অনন্য অর্জন। বাঙালির চেতনার প্রতীক, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন, ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহিদ দিবস পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। জাতিসংঘের সেই স্বীকৃতির পর থেকে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষি মানুষ দিনটি পালন করছে। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতিকে লালন করার প্রয়োজনীয়তা বিশ্বব্যাপী আরো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিশ্বে বাংলাদেশ স্বরূপে উদ্ভাসিত জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ

আপডেট টাইম : ১১:৩২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাধীনতার পর যে দেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সন্দিহান ছিল বিশ্ব, আজ সেই বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের পথে এগিয়ে চলেছে। আজকে বাংলাদেশের যে উত্থান, ৫০ বছর আগে কেউ কল্পনাও করেনি। সেই দেশের অগ্রগতি বিশ্বের কাছে ‘অভাবনীয়’ হিসেবে উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ যে উঠে দাঁড়াবে তা আর কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক বঙ্গবন্ধুর সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই ছিল না। বাঙালি হিসেবে তিনি ছিলেন গর্বিত। বাংলার উন্নয়ন নিয়ে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড আশাবাদী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর জতিসংঘে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়ে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেই ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও বাংলাদেশের, বাঙালির অবস্থানকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে আত্মপরিচয়ের স্বরূপ তুলে ধরেছিলেন সারা বিশ্বের জাতি-রাষ্ট্রের সামনে।

জাতিসংঘে প্রথম বাংলাকে তুলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘে ভাষণ দেন। আর প্রথমবারই তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আত্মসম্মানবোধের পরিচয় স্থাপন করেছিলেন। তার মেয়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে বাংলাকে নানাভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পিতার মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, স্বাধীন হওয়ার চার বছর পরও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ যখন গড়িমসি করছিল, তেমন একটি প্রতিকূল পরিবেশে জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেই বক্তৃতা ছিল বাংলায়। তাকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল ইংরেজিতে করার জন্য। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তাৎক্ষণিক ইংরেজিতে অনুবাদ করে ইংরেজিতে মর্মার্থ বলার জন্য কূটনীতিক ফারুক চৌধুরীকে মনোনীত করেন। কিন্তু বাংলায় বক্তৃতা করার পথ থেকে সরে আসেননি। তবে সেটিই বঙ্গবন্ধুর বিশ্বের মঞ্চে প্রথম বাংলায় বক্তৃতা ছিল না। এর আগে ১৯৫২ সালের ২-১২ অক্টোবর পিকিং এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন। তার দেখাদেখি ভারতের সাহিত্যিক মনোজ বসুও বাংলায় বক্তৃতা করেন। যাহোক, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ভাষণ দেওয়ার মাত্র ছয় দিন আগে অর্থাত্ ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটি ছিল সমগ্র বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাষণ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।

জাতিসংঘের প্রথম ভাষণে যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু - Chattogrameralo.comসৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের একটা ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। তখন কিন্তু পরিবেশটা এমন ছিল না। আর এই মুহূর্তে নানা কারণে বাংলাদেশের এই ভাবমূর্তিটা আরো বেশি পরিচ্ছন্ন বা উজ্জ্বল হয়েছে বহির্বিশ্বে, তখন এমন পরিস্থিতি ছিল না। বঙ্গবন্ধু যখন জাতিসংঘে যান তখন বৈশ্বিক অবস্থা আমাদের অনুকূলে ছিল না, ছিল প্রতিকূলে। ঐ রকম একটা অবস্থাতেই তিনি জাতিসংঘে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাংলা লগ্নতা থেকে পিছিয়ে যাননি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে ঠিক ৪৭ বছর আগে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি সেদিন গণতন্ত্র, ন্যায়পরায়ণতা, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ২২ বছর পর বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সাধারণ পরিষদে বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে দেওয়া সেই বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরেন।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণ | প্রথম আলোজাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনবার বাংলায় বক্তৃতা করেন। আর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গতকাল ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো ১৩ বার বাংলায় বক্তৃতা করলেন। এ নিয়ে মোট ১৮ বার জাতিসংঘে দেওয়া বক্তৃতার মধ্যে ১৬ বার বাংলায় বক্তৃতা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো সরকার প্রধান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেননি। তবে, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯২ সালে জাতিসংঘে শিশুবিষয়ক একটি অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন।

এর আগে, ফ্যাসিবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামকে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে চির অম্লান করে রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত এই আন্তর্জাতিক অর্জনটি সদ্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য দেশের বিরাট অর্জন হিসেবে দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীকালে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২০১৫ সালে জাতিসংঘ প্রদত্ত ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ’ পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নিজ দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক আঙিনাতেও তাদের কাজের স্বীকৃতি আদায় করে নিতে শুরু করে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর স্বীকৃতি অর্জন

বাংলাদেশের বিশ্বের বুকে নিজেদের তুলে ধরার অপর একটি অনন্য প্রয়াস ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-এর স্বীকৃতি অর্জন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলিতে যোগ হয় এক অনন্য অর্জন। বাঙালির চেতনার প্রতীক, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন, ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহিদ দিবস পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। জাতিসংঘের সেই স্বীকৃতির পর থেকে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষি মানুষ দিনটি পালন করছে। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতিকে লালন করার প্রয়োজনীয়তা বিশ্বব্যাপী আরো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।