দারুণ ব্যস্ত চাষিরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমন আবাদে দারুণ ব্যস্ত চাষিরা। এই ফসলে খরচ অপেক্ষাকৃত কম। তবে ফলন ভালো। আর তাই চাষযোগ্য কোন জমি খালি রাখতে চান না কৃষক। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদ চলছে।  উদয়াস্ত পরিশ্রম করে চলেছেন প্রান্তিক চাষিরা। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ শেষ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৭২৩ হেক্টর। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা আউশের মতো আমনেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে যাবে।
পাহাড়, টিলা আর বন-বনানীতে ঘেরা চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবাদী জমির পরিমাণ অন্য অঞ্চলের তুলনায় কম। এরপরও দিনে দিনে আবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে চালের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ার পর থেকে কৃষকরা ব্যাপক হারে ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এতে অনেকে কৃষিতে বিনিয়োগও করছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ধান চাষে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ বাড়ানো হচ্ছে। সরকারিভাবে আউশ আবাদে কৃষকদের নানা ধরনের প্রনোদনা দেয়া হচ্ছে। এতে আউশ উৎপাদন বাড়ছে। এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে এক লাখ ১০ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কর্তন হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৪৬৪ হেক্টর জমির ধান। তাতে ফলন পাওয়া গেছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন (চাল)।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, আউশের মত আমনেও এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। আউশ ধান কাটার পরপরই রোপা আমন লাগানো হচ্ছে। চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় এখনও আমন আবাদ চলছে। তবে অন্য জেলাগুলোতে আবাদ এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। রোপা আমনের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন চাষিরা। দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রাম জেলায় আউশ ধানের ফলন হয় দেরিতে। আর এ কারণে আমনের আবাদও শুরু হয় কিছুটা দেরিতে। আগামী আরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত আমন আবাদ চলবে বলে জানান কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রান্তিক চাষিরা জানান, আউশ এবং বোরোর তুলনায় আমনে খরচ অপেক্ষাকৃত কম। এ কারণে আমনের আবাদ বেশি হচ্ছে। করোনায় অনেকে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন। কেউ কেউ বেকার হয়ে গেছেন। তাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। মনোনিবেশ করছেন চাষাবাদে। এবার কৃষি শ্রমিকও পাওয়া গেছে। সার, বীজেরও তেমন সঙ্কট ছিল না। এতে করে আবাদ বাড়ছে। চাষাবাদযোগ্য সব জমিতেই আমনের আবাদ হচ্ছে।
মহানগরীর হালিশহর, পতেঙ্গা, কুলগাঁও, অনন্যা আবাসিক এলাকাসহ অনেক এলাকায় আমন আবাদ করতে দেখা গেছে। হালিশহর আউটার রিং রোড এলাকায় ব্যাপক হারে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আমনের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ধান চাষে বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে। ব্যাপক হারে সরু ও সুগন্ধি চালের ধান আবাদ হচ্ছে।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় এক লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৯, কক্সবাজারে ৭৮ হাজার ৯২৫, নোয়াখালীতে এক লাখ ৬৩ হাজার ২১৯, ফেনীতে ৬৪ হাজার ৭৪০ এব ল²ীপুরে ৮০ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। পাঁচ জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমিতে। এবার আট হাজার ৯৮৩ হেক্টরে হাইব্রিড, চার লাখ ৮৩ হাজার ৫শ’ হেক্টরে উফশি এবং ৭৮ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন আবাদ করা হচ্ছে। গত বছর সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৪১৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়।
এদিকে ধানের পাশাপাশি শরৎকালীন ও শীতকালীন শাকসবজির আবাদও চলছে। এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১২ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চলছে শীতকালীন শাকসবজির আবাদ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার আউশেরও ভাল ফলন হয়েছে। আমন আবাদ ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি অর্জিত হয়েছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির সমস্যা থাকলেও এ অঞ্চলে তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল না। এ কারণে যথাসময়ে বীজতলা প্রস্তুত করা গেছে। সার ও বীজের সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। আবাদও এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকরা ধান চাষে এখন ব্যাপকভাবে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগও তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর