ঢাকা ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিয়ারা ভালো দামে বিক্রি সন্তুষ্ট চাষিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝালকাঠি-পিরোজপুর সীমান্তে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত ভিমরুলীর ভাসমান হাটে এবার ভালো দাম পেয়ে করোনা সঙ্কটের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারছেন আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারা চাষিরা। তবে বাজার মূল্য গতবছরের চেয়ে ভালো হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম আছে । যা মাঝে মধ্যেই চাষিদের দুশ্চিন্তার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি এবারো ভিমরুলীতে পর্যটকদের পদচারণা সীমিত রয়েছে। ফলে এ কৃষিপণ্যের সাথে গড়ে ওঠা পর্যটন খাতে জড়িতরা এবারো খুব ভালো করতে পারেননি।

গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণায় গত এক দশক ধরেই সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ঝালকাঠির ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে ছুটে আসেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনারও ২০১৯ সালে ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট দেখে উচ্ছ্বাসিত হয়েছিলেন। আটঘর-কুড়িআনা এলাকার ‘মুকুন্দপুরী’, ‘লতা’ ও ‘পুর্নমণ্ডল’ জাতের পেয়ারা মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। শ্রাবণ-ভাদ্র থেকে আশি^নের মধ্যভাগ ঝালকাঠির ব্র্যান্ডিং পণ্য পেয়ারার ভরা মৌসুম। ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের আটঘর, শতদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি ও কাঁচাবালিয়া গ্রামে প্রতিবছরই প্রায় ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে।

প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িআনা এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টরের বিশাল বাগান থেকে ভিমরুলীর ভাসমান হাটে পেয়ারার বিপণন ইতোমধ্যে একটি ভালো বাজার তৈরি করেছে। পুরো মৌসুমে নিজস্ব বাজার ব্যবস্থাপনায় ভিমরুলীর ভাসমান হাট থাকে মুখরিত। বিভিন্ন ধরনের দেশি নৌকায় চাষিরা এ ভাসমান হাটে পেয়ারা নিয়ে এসে তা বিক্রি করছেন। গত বছর করোনা মহামারী সঙ্কটে ভিমরুলীর হাটে যেখানে চাষিরা ১৫ টাকায়ও এক কেজি পেয়ারা বিক্রি করতে পারেননি, এবার সেখানে মূল মৌসুমে ৩০ টাকা এবং মৌসুমের শেষ প্রান্তে এখন ৪০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারছেন। তবে প্রকৃত চাষিরা পাচ্ছেন প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কম।

করোনা মহামারীর কারণে গত বছর বাইরের পাইকাররা পেয়ারার বাগান কেনার ঝুঁকি নেননি। ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মধ্যেই এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করলেও এবার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। সারা দেশ থেকেই পাইকাররা ছুটে এসেছেন ভিমরুলীর ভাসমান বাজারে। তাই চাষিরাও গত বছরের চেয়ে অনেকটাই ভালো দাম পেয়েছেন।

সারা দেশের পাইকাররা ভিমরুলীর ভাসমান হাট থেকে পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে নিজ নিজ মোকামে নিয়ে বিক্রি করছেন। গত প্রায় তিনমাস ধরে ভিমরুলী ও আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে পেয়ারা চাষি ও পাইকারদের ভিড় লেগেই আছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বেপারিরা নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকালে ভরপুর এ বাজারে পেয়ারার বেচাকেনা শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যেই সুনশান হয়ে যাচ্ছে। ঝালকাঠির ১২টি গ্রামের প্রায় এক হাজার হেক্টর এলাকায় এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে শতবর্ষজুড়ে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন পেয়ারা চাষিরা খুব ভোরে বাগান থেকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে ৩-১০ মণ করে পেয়ারা ভিমরুলীর হাটে নৌকায় বসেই বিক্রি করছেন।

বাজারে দেশি বিদেশি অনেক উচ্চ ফলনশীল পেয়ারার মধ্যেও স্বাদ ও গন্ধের কারণে সারা দেশেই আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারার বিশেষ কদর রয়েছে দীর্র্ঘদিন ধরে। আর এখানের পেয়ারা ইতোমধ্যে ভারতের কোলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাজার ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতলাতেও অবস্থান করে নিয়েছে।
পিরোজপুর ও ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাটি কেটে লম্বা ঢিবি তৈরি করে ‘সার্জন’ পদ্ধতিতে পেয়ারার চাষ হয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ‘অ্যানথ্রাকনোজ’ নামে এক ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পেয়ারা বাগান। এতে গাছের পাতা ও ফলে দাগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ রোগ দমনে প্রতি সপ্তাহ ‘কম্পেনিয়ন’ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। তবে এখনো আটঘর-কুড়িআনার বেশিরভাগ বাগানেই পেয়ারার উৎপাদন হচ্ছে কিটনাশকবিহীন সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তিতে।

তবে এ কৃষিপণ্যের সঠিক বাজার ও চাষিদের ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণে সরকারি পর্যায়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ, পেয়ারা, আমড়াসহ আরো কয়েকটি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানির লক্ষ্যে এ অঞ্চলে একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের। এক সময়ে বরিশালে একটি ইপিজেড গড়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে সব স্তিমিত হয়ে গেছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে দুটি ‘একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত এখনো কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পিয়ারা ভালো দামে বিক্রি সন্তুষ্ট চাষিরা

আপডেট টাইম : ১২:১৮:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝালকাঠি-পিরোজপুর সীমান্তে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত ভিমরুলীর ভাসমান হাটে এবার ভালো দাম পেয়ে করোনা সঙ্কটের ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারছেন আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারা চাষিরা। তবে বাজার মূল্য গতবছরের চেয়ে ভালো হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম আছে । যা মাঝে মধ্যেই চাষিদের দুশ্চিন্তার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি এবারো ভিমরুলীতে পর্যটকদের পদচারণা সীমিত রয়েছে। ফলে এ কৃষিপণ্যের সাথে গড়ে ওঠা পর্যটন খাতে জড়িতরা এবারো খুব ভালো করতে পারেননি।

গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণায় গত এক দশক ধরেই সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ঝালকাঠির ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে ছুটে আসেন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনারও ২০১৯ সালে ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার হাট দেখে উচ্ছ্বাসিত হয়েছিলেন। আটঘর-কুড়িআনা এলাকার ‘মুকুন্দপুরী’, ‘লতা’ ও ‘পুর্নমণ্ডল’ জাতের পেয়ারা মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। শ্রাবণ-ভাদ্র থেকে আশি^নের মধ্যভাগ ঝালকাঠির ব্র্যান্ডিং পণ্য পেয়ারার ভরা মৌসুম। ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের আটঘর, শতদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি ও কাঁচাবালিয়া গ্রামে প্রতিবছরই প্রায় ১০ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে।

প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের আটঘর-কুড়িআনা এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টরের বিশাল বাগান থেকে ভিমরুলীর ভাসমান হাটে পেয়ারার বিপণন ইতোমধ্যে একটি ভালো বাজার তৈরি করেছে। পুরো মৌসুমে নিজস্ব বাজার ব্যবস্থাপনায় ভিমরুলীর ভাসমান হাট থাকে মুখরিত। বিভিন্ন ধরনের দেশি নৌকায় চাষিরা এ ভাসমান হাটে পেয়ারা নিয়ে এসে তা বিক্রি করছেন। গত বছর করোনা মহামারী সঙ্কটে ভিমরুলীর হাটে যেখানে চাষিরা ১৫ টাকায়ও এক কেজি পেয়ারা বিক্রি করতে পারেননি, এবার সেখানে মূল মৌসুমে ৩০ টাকা এবং মৌসুমের শেষ প্রান্তে এখন ৪০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারছেন। তবে প্রকৃত চাষিরা পাচ্ছেন প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কম।

করোনা মহামারীর কারণে গত বছর বাইরের পাইকাররা পেয়ারার বাগান কেনার ঝুঁকি নেননি। ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মধ্যেই এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করলেও এবার পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। সারা দেশ থেকেই পাইকাররা ছুটে এসেছেন ভিমরুলীর ভাসমান বাজারে। তাই চাষিরাও গত বছরের চেয়ে অনেকটাই ভালো দাম পেয়েছেন।

সারা দেশের পাইকাররা ভিমরুলীর ভাসমান হাট থেকে পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে নিজ নিজ মোকামে নিয়ে বিক্রি করছেন। গত প্রায় তিনমাস ধরে ভিমরুলী ও আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে পেয়ারা চাষি ও পাইকারদের ভিড় লেগেই আছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বেপারিরা নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকালে ভরপুর এ বাজারে পেয়ারার বেচাকেনা শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যেই সুনশান হয়ে যাচ্ছে। ঝালকাঠির ১২টি গ্রামের প্রায় এক হাজার হেক্টর এলাকায় এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে শতবর্ষজুড়ে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন পেয়ারা চাষিরা খুব ভোরে বাগান থেকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে ৩-১০ মণ করে পেয়ারা ভিমরুলীর হাটে নৌকায় বসেই বিক্রি করছেন।

বাজারে দেশি বিদেশি অনেক উচ্চ ফলনশীল পেয়ারার মধ্যেও স্বাদ ও গন্ধের কারণে সারা দেশেই আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারার বিশেষ কদর রয়েছে দীর্র্ঘদিন ধরে। আর এখানের পেয়ারা ইতোমধ্যে ভারতের কোলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাজার ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতলাতেও অবস্থান করে নিয়েছে।
পিরোজপুর ও ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাটি কেটে লম্বা ঢিবি তৈরি করে ‘সার্জন’ পদ্ধতিতে পেয়ারার চাষ হয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ‘অ্যানথ্রাকনোজ’ নামে এক ধরনের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পেয়ারা বাগান। এতে গাছের পাতা ও ফলে দাগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ রোগ দমনে প্রতি সপ্তাহ ‘কম্পেনিয়ন’ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ওষুধ মিশিয়ে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। তবে এখনো আটঘর-কুড়িআনার বেশিরভাগ বাগানেই পেয়ারার উৎপাদন হচ্ছে কিটনাশকবিহীন সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তিতে।

তবে এ কৃষিপণ্যের সঠিক বাজার ও চাষিদের ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণে সরকারি পর্যায়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ, পেয়ারা, আমড়াসহ আরো কয়েকটি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানির লক্ষ্যে এ অঞ্চলে একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের। এক সময়ে বরিশালে একটি ইপিজেড গড়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে সব স্তিমিত হয়ে গেছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে দুটি ‘একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত এখনো কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।