কেউ কারও জায়গা কখনো নিতে পারে না : শখ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একটা সময় টিভি খুললেই পর্দায় দেখা যেতো অভিনেত্রী আনিকা কবির শখকে। নাটক কিংবা বিজ্ঞাপন সবখানেই তার নিয়মিত বিচরণ ছিলো। ছোট পর্দা ছাপিয়ে অভিনয় করেছেন বড় পর্দাতেও, সেখানেও হয়েছেন সফল। নান্দনিক অভিনয়ে মুগ্ধতা ছড়ানোর সময়েই অর্থাৎ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকার সময়েই আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তুমুল জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। এরপর মাঝেমাঝে কিছু কাজ করলেও আবার ফিরে যান আড়ালে।

গেল অনেকদিন ধরেই পর্দায় নেই তিনি। এরমধ্যে বিয়ে করেছেন, স্বামী ও সংসার নিয়ে বেশ সুখেই দিন যাপন করছেন শখ। আড়ালে চলে যাওয়া, বিয়ে এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা হয় এই অভিনেত্রীর সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

অনেকদিন থেকেই আড়ালে রয়েছেন আপনি। সবাই তো ধরে নিয়েছে আপনি হারিয়ে গেলেন কিনা!

এক গাল হাসি হেসে শখ বলেন, আমি হারিয়ে যাই নি, ইচ্ছে করেই কাজ বন্ধ রেখেছি। এরমধ্যে বিয়ে করলাম এখন সংসার করছি। আমার একটু সময় দরকার ছিলো যার কারণে এ বিরতিটা নিলাম। তাছাড়া বিয়ের আগে আগে আমার ফেসবুক থেকে শুরু করে সব সোশ্যাল প্লাটফর্ম হ্যাকড হয়ে গিয়েছিলো। যার কারণে সবকিছু থেকে আমি একটু দূরে ছিলাম। ওইসময়টাতে এসব রিকভার করার মতো মন মানসিকতাও ছিলো না। এরজন্য হয়তো অনেকে এরকমটা মনে করছেন। আমি ছিলাম, আছি।

আর যেহেতু বিয়ে করেছি নতুন পরিবারেও একটু সময় দেওয়া দরকার। এরমধ্যে শুরু হলো করোনা মহামারি। সবকিছু মিলিয়েই মনে হলো যে পরিবারকে সময় দেওয়া দরকার তাই বিরতি নিয়েছি। এরপর তো নতুন খুশির খবর এলো, মা হতে যাচ্ছি। এখন ৮ মাস চলতেছে।

শারীরিক অবস্থা কেমন এখন?

এখন প্রায় শেষ দিকে তো, এসময় অবস্থা একটু পরিবর্তন হয়। তারপরও আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছি, বই পড়ছি, নাটক-সিনেমা দেখছি সারাক্ষণ। এভাবেই বেশ সুন্দর একটা সময় পার করছি এখন আলহামদুলিল্লাহ।

আপনার বিয়ে নিয়ে কোথাও আপনার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আপনাদের পরিচয় কিভাবে এবং হঠাৎ করেই বিয়ে কেন?

সত্যি বলতে আমি ইচ্ছে করেই চাইনি কোথাও জানাতে। আর আমি সবকিছু থেকে দূরে থাকার কারণে ওভাবে কাউকেই জানানো হয়নি। আমার স্বামীর নাম আতিকুর রহমান জন, পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আমাদের মধ্যে প্রেম ছিল না, যা হয়েছে দুই পরিবারের পছন্দে ও সম্মতিতে। ২০২০ সালে ১২ মে আমরা বিয়ে করি। তখন রোজা ছিলো, এরমধ্যেই হুট করে সবকিছু হয়ে যায়।

আমাদের পরিচয় অনেক বছর থেকে। আমার পরিবারের সাথে জনের বেশ ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো। সে আমাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করতো কিন্তু সেটা আমি জানতাম না। বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পর সেটা জেনেছি, তাও ওর (জন) পরিবারের কাছ থেকে। ১৭ বছর ধরে সে আমাকে পছন্দ করতো কিন্তু কখনো আমাকে কিছু বলেও নি, বুঝতেও দেয়নি। মিডিয়াতে আমার শুরু ছিলো নাচ দিয়ে ২০০২ সালের দিকে, এরপর বিভিন্ন ফটোশুট করেছি। আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি, সালটা মনে নেই; মান্ত্রা’র ফটোশুট করছিলাম স্টুডিওতে। সেখানে সেখানেই জন আমাকে দেখেছিলো। সেই তখন থেকে মনে মনে আমাকে পছন্দ করতে শুরু করে। তখনও আমি জানতাম না।

আমাদের মাঝেমধ্যে দেখা হতো, শুধু হাই/হ্যালো কথা হতো। গত বছরে ওর পরিবার থেকেই আমাদের বাসাতে বিয়ের প্রস্তাব আসে এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়। এরপর প্ল্যান ছিলো অনুষ্ঠান করবো কিন্তু একের পর এক লকডাউন আর দেশের পরিস্থিতির কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

এই যে অনেকদিন কাজে নেই, এই জায়গাটা মিস করছেন কি?

এখনের এই অবস্থায় কাজ নিয়ে ভাবছি না। মা হওয়ার যে অনুভূতিটা; এখন শুধু সেটা অনুভব করতে চাই। কাজ তো অনেক করেছি। তারপর এখন একটা নতুন পরিবার হয়েছে, সেখানে সময় দিতে হয়। সবকিছু সুন্দর স্বাভাবিক হোক, কাজ তো অবশ্যই করবো। আর যেহেতু এখানে অনেক কাজ করেছি, জায়গাটা তো মিস করবো; এটাই স্বাভাবিক। বেবিটা হয়ে যাওয়ার পর নিজেক ঠিকঠাক করে এরপর সুন্দরভাবেই কাজে ফিরবো। কাজে ফেরা নিয়ে আমার পরিবারের কোনো বাঁধা-নিষেধ নেই। তারা এ বিষয়ে খুবই পজেটিভ।

বিরতির পর কাজে ফেরা, এতে করে নিজের জায়গা নষ্ট হবে; এমনটা আমি কখনোই ভাবি না। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, কেউ কারও জায়গা কখনো নিতে পারে না। একজন শিল্পী তার কাজের মাধ্যমে, দর্শকের ভালোবাসার মাধ্যমে একটা জায়গা করে নেয়। শিল্পী অনেক আছে কিন্তু সেই একজনের জায়গাটা কেউ কখনো নিতে পারে না। যদি এরকমই হতো তাহলে একজন সাদিয়া ইসলাম মৌ আপুও আজকে তার জায়গায় থাকতো না।

আমার কাছে মনে হয়, আমি যদি আবার মনযোগ দিয়ে ভালো পার্ফরমেন্সের সঙ্গে কাজ শুরু করি তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমার আগের জায়গাটা কখনোই নষ্ট হবে না।

অনেকের অভিযোগ, আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না…

এই যে আমি বিরতি নিয়েছি। যার কারণে আমি একটু ডিটাচড সবার থেকে। এরমধ্যে অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কাজের জন্য। আমি যখন বেবি কনসিভ করি, তখনও অনেকে বলছিলো যে কাজ করার জন্য। কিন্তু আমি সময় নিয়েছি। আমি চাই সবকিছু সুন্দরভাবে হোক, এরপর নিজেকে গুছিয়ে তারপর কাজে ফিরবো। খুব সম্ভবত গত বছরের কোরবানি ঈদের আগে প্রীতি দত্তের ‘মন চোর’ নাটকে কাজ করেছিলাম। এরপর আর কাজ করা হয়নি।

এখন তো অনেকেই কাজ করছেন। তাদের কাজ কি দেখা হয়?

আমি তো প্রচুর নাটক সিনেমা দেখি। সবার কাজই দেখা হয়। আমি অনেক আগে থেকেই দেখি। আমার কাছে মনে হয়, আমি যে সেক্টরে কাজ করি সেখানকার কাজ আমি দেখবো না, বুঝবো না; এটা আমার কাছে অবাকই লাগে। তাই আমি সবসময় আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সব কাজই দেখি। এখনও দেখি। এখন অনেকেই কাজ করছে, ভালো করছে। এখন তো সব ইউটিউব বেইজড হয়ে গিয়েছে। এখন সবকিছু ইউটিউব বেইজড হলেও টেলিভিশনের যে জনপ্রিয়তা সেটা সবসময়ই থাকবে, আমি এটাই বিশ্বাস করি। তবে সবাই-ই ভালো কাজ করছে। এবার কোরবানি ঈদে আমি বেশ কিছু কাজ দেখেছি, দেখে খুব প্লিজড হয়েছি যে এত সুন্দর সুন্দর কাজ হচ্ছে আমাদের।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর