হাওর বার্তা ডেস্কঃ কয়টা লাগব’। রাজধানীর কাওরান বাজার রেললাইন সড়কে গেলে অনেকে এ শব্দ দুইটি শুনে থাকবেন। যারা এ শব্দের সঙ্গে পরিচিত নন তাদের কাছে বিষয়টি খটকা লাগবে; কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝতে পারবেন যে, তারা মাদকের ‘কাস্টমার’ খুঁজছে।
এদিক ওদিক থেকে আসছে মোটরসাইকেল, হাত বাড়িয়ে টাকা দিচ্ছে, একই সঙ্গে তারা মাদকের পুটলি বুঝে নিচ্ছে। মাঝেমধ্যে দেখা মেলে পুলিশের; কিন্তু পুলিশ একদিকে টহল দিচ্ছে অন্যদিকে নির্ভয়ে ইয়াবা-গাঁজা বিক্রি চলছে। এটা নিত্যদিনের চিত্র। পুলিশ প্রশাসন জানে এখানকার এই রমরমা মাদক-বাণিজ্যের কথা।
দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু এই এলাকায় মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত। মাঝেমধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও থানা পুলিশ অভিযান চালায়। আটকও করা হয় জড়িতদের। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাও দেওয়া হয়।
একাধিক মাদক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধরপাকড় নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, আটক হলে বের হয়ে আসতে সময়ও লাগে না। এগুলো স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে তাদের কাছে। লকডাউন চলাকালে ইয়াবা বা গাঁজা বিক্রি কিছুটা কমে গিয়েছিল; কিন্তু বর্তমানে এই এলাকায় বেপরোয়াভাবে চলছে মাদক সেবন ও বিক্রি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করেছে ১৫০ কেজি গাঁজা ও সোয়া লাখ পিস ইয়াবা। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বুধবার পল্টন এলাকা থেকে সাড়ে ৭ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে।
এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া সাজ্জাদ কক্সবাজার হতে ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করত। একই দিন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম দারুস সালাম এলাকা থেকে জব্দ করে ১২ কেজি গাঁজা।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম জানান, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী দারুস সালাম থানার কল্যাণপুর খাজা মার্কেটের সামনে গাঁজা বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ১২ কেজি গাঁজাসহ সাদ্দাম ও জাহিদ নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানায়, সম্প্রতি রাজধানীতে গাঁজার ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকা থেকে গাঁজার চালান ঢাকায় আনছে বিভিন্ন পন্থায়। তবে গাঁজার বড় বাজার কাওরান বাজার এলাকায়। এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই গাঁজা কেনাবেচা চলে।
সম্প্রতি গাঁজা ও ইয়াবার চালান বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গাঁজা ও ইয়াবার চাহিদা দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ঢাকায় বেশি। ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট থাকে মাদকের চালান ঢাকায় আনার।
তাছাড়া ইয়াবার মূল প্রবেশ পথ কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে এখন প্রতিনিয়ত চালান আসছে দেশে। ক্রসফায়ারে বেশ কিছুসংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছিল। এখন সে আতঙ্ক তাদের মধ্যে নেই বলেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনই তথ্য জানিয়েছে গ্রেফতার হওয়া একাধিক মাদক ব্যবসায়ী।