যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক’ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনোকে সহজভাবে দেখছেন না প্রযুক্তিবিদ ও সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা।
তাদের মতে, রিজার্ভ ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনায় প্রযুক্তির পাশাপাশি দুই ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও দায়ী।
তারা ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে ব্যাংককে আরও সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন।
রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকের মাধ্যমে টাকা চুরি প্রসঙ্গে প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আসলে প্রকৃত ঘটনা কী তা বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। বাইরের পত্র-পত্রিকা, দেশের গণমাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে যে তথ্যগুলো আমাদের কাছে এসেছে, সেগুলো আমাদের প্রযুক্তিগত দুর্বলতা। এ ছাড়া পুরো ঘটনাটাও উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ রাখব সেখানকার নিরাপত্তা যদি ঠিকমতো না থাকে তবে সেটি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। যে জায়গা থেকে সম্পদ হ্যাক হয়েছে সেই সার্ভারে একটি নরমাল ফায়ারওয়াল (কম্পিউটার এন্টিভাইরাস বিশেষ) কাজ করে না এটি খুবই দুঃখজনক।’
দেশ বিদেশের গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি মাসে তাদের ব্যাংকের সার্ভারে ক্ষতিকর ভাইরাস ইন্সটল করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখে রাত সাড়ে ১২টায় ইন্সট্রাকশনগুলো নিউইয়র্কে পাঠানো হয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে ৫টি এডভাইস ক্লিয়ার করার পর সন্দেহ হয়েছে। তখন সন্দেহ রি-ভেরিফাই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে খুঁজলেও কাউকে পায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ৮ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই ধরনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে হ্যাকিংয়ের চেয়ে ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা) বেশি প্রাসঙ্গিক। এ ঘটনায় আরও বেশি ক্ষতি হতে পারত।
সুইফট কোড প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, সুইফট এমন একটি সিস্টেম, যে সিস্টেম কাজ করাতে একটি ফিজিক্যাল ডিভাইস প্রয়োজন। এটিকে যেকোনো স্থান থেকে এক্সেস করে ই-মেইল বা অন্যান্য সেবার মতো ব্যবহার করা যায় না।
‘এই তথ্য প্রমাণ করে, চুরির সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত সে বা তাদের কেউ শারীরিকভাবে সার্ভার কক্ষ পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে গেছে’- যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল প্রতিষ্ঠানে দেশীয় সফটওয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, দেশের বাইরের ডেভেলপার দিয়ে তৈরি সফটওয়ারে ভবিষ্যতে দেশের ক্ষতি হতে পারে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যংকের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের নিরাপত্তা গবেষকরা।
২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একাত্তর টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত এক টক-শোতে তরুণ নিরাপত্তা গবেষক আলমাস জামান বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের কিছু নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা তুলে ধরেন। টক-শোটিতে সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আরও কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির বিষয়টি নিয়ে আলমাস জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত দুর্বলতাগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি। ঠিক করতে হবে।