কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের পাতিলাপুর ও সংলগ্ন আরো ১১টি গ্রামের নারীদের তৈরি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। টুপি তৈরি করে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে এলাকার নারীরা।
গ্রামগুলোর সব বয়সের নারীদের সংসারের কাজের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করেন টুপি তৈরিতে। পাইকারী ক্রেতারা কম দামে টুপি পাওয়ায় এবং এখানকার তৈরি টুপি কারুকাজ ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে বেড়ে গেছে এসব টুপির কদর।
উলিপুর উপজেলার সদর থেকে ৫ কি.মি. দুরে অবস্থিত পাতিলাপুর গ্রাম। এই গ্রামে এখন চলছে টুপি তৈরীর উৎসব। কারও হাতে সাদা আর কারো হাতে রঙবেরঙয়ের কাপড়। সুঁইয়ের ফোঁড়ে ফুটে উঠছে নান্দনিকতা। বিশেষ কায়দায় সেলাই করা কাপড় বা রেশমার উপর নকশায় টুপি তৈরি করছে এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারীরা।
Kurigram-pic-(2)-08.03.2016পাশাপাশি ১২টি গ্রাম- পশ্চিম নাওডাঙা, মিয়াপাড়া, নাগরাকুড়া, থেতরাই, কুকুয়াপাড়া, চরুয়াপাড়া, দলদলিয়া, জকিয়াপাড়া, পান্ডুল, গুনাইগাছ, বাঙালি ও পাতিলাপুর গ্রাম এখন টুপির গ্রাম নামে পরিচিত।
এসব গ্রামের গৃহবধূ, কলেজ-স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী-এমনকি অশিক্ষিত,স্বল্প শিক্ষিত বেকার কিশোরী-তরুণীরা এখন দারুণ ব্যস্ত টুপি তৈরির কাজে। তৈরি করা টুপি রফতানি হয় ওমান, কুয়েত, সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে। বছরে গড়ে ৬০ হাজার টুপি তৈরি হয় এখানে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিটি টুপির মুল্য গড়ে ১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকার টুপি তৈরি হয় এসব গ্রামে। সারা বছরই টুপি তৈরির কাজ করলেও ঈদের সময় তাদের দম ফেলার ফুরসত সময় থাকেনা।
বিশেষ কায়দায় সেলাই করা কাপড় বা রেশমার উপর নকশা তৈরি করে টুপি বানাচ্ছে এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারীরা। পাতিলাপুরের গৃহবধূ শারমীন জানান, তিনি এ মাসে ৪টি টুপি জমা দিয়েছেন। এতে ১২শ টাকা পাবেন।
পাতিলাপুর গ্রামের গৃহবধূ সালেহা, আমেনা ও হাসি বলেন, ‘মোর্শেদা আপা আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন। এখন শুধু স্বামীর উপার্জনের উপর নির্ভর করতে হয়না। স্বামীর সংসারে এখন অনেক সাহায্য করতে পারি। অবসরে টুপি তৈরির কাজ করি বলে নিজের সংসারের কোন কাজের ক্ষতি হয় না’।
মোর্শেদা জানান, ফেনীর দু’জন ব্যবসায়ীর কাছে তিনি তৈরি করা টুপি বিক্রি করেন। আর এই টুপি মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি হয়। ওই ব্যবসায়ীরা আমার কাছে রেশমা (কারখানায় তৈরী নকশার ছাপ দেয়া টুপি তৈরির কাপড়) সরবরাহ করেন। এরপর তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীদের সঙ্গে নিয়ে স্রেফ সুঁই সুতা দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরণের নকশাখচিত টুপি। প্রতিটি টুপি তৈরির জন্য পারিশ্রমিক দেন ৩০০-৩৫০ টাকা। এতে সুঁই সুতার খরচ ৩০-৪০ টাকা। প্রতি টুপিতে কমিশন পান ৩০-৪০ টাকা। প্রতি গ্রামে সুপারভাইজার নিয়োগ করে কাজের তদারকির পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি উপক্ষো করে পায়ে হেঁটে ও রিক্সায় গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে টুপির তৈরির কাজ দেখভাল করেন তিনি। এভাবে মাসে গড়ে ৫ হাজার টুপি সরবারহ করা সম্ভব হয়। তিনি টুপি তৈরির ব্যাপারে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে ওমান যান।
পাতিলাপুরের দরিদ্র নারী মোর্শেদা টুপি তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বি হবার পাশাপাশি দরিদ্র গ্রামীণ নারীদের আয়ের নতুন দরজা খুলে দিয়েছেন, সেই মোর্শেদাকে ঘিরে টুপি তৈরির এই কর্মযজ্ঞ চলছে।