ঢাকা ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাওয়া কাউন চাষ আবারও জনপ্রিয় হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৭:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১
  • ১৬৬ বার

জাতের কাউন চাষ করা হচ্ছে। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে নতুন
উদ্যমে জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি,গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা
নদীর বুকে জেগে ওঠা বালু চরে ব্যাপকভাবে কাউন চাষ করেছে কৃষকগণ। এ চলতি মৌসুমে
কাউনের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক হারানো দিনের ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছেন। এক সময়
গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধ সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নদী ভাঙন আর বন্যার
কারণে দরিদ্রসীমার নীচে ছিল চরাঞ্চলের মানুষ। এক সময় এই এলাকাকে মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল বলা
হতো। কাউনের চালের ভাত, পায়েস ও পাস্তা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো চরাঞ্চলের মানুষ।
তখন চরাঞ্চল জুড়েই ছিল শুধু বালু আর বালু, এখানে কোনো ফসল হতো না, কিছু কিছু
জমিতে কেবল কাউনের চাষ করা হতো। চরের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসাই ছিল
কাউনের চাষ করা আর নদীতে মাছ ধরা। বর্তমানে কাউন এখন আর দরিদ্র মানুষের খাবার নয়,
কাউনের চালের পিঠা, পায়েস ও মোয়াসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী গ্রাম বাংলার পাশাপাশি
শহরের মানুষের সখের খাবারে পরিণত হয়েছে। এর আগে দেশি জাতের কাউনের ফলন কম হওয়ায়
দিন দিন কাউনের চাষ সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধার চরাঞ্চল থেকেও হারিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু
বর্তমান কৃষি গবেষণায় নতুন উদ্ভাবিত বারী কাউন-২ জাতের বা¤পার ফলন হওয়ায় চরাঞ্চলের
কৃষক এখন আবার কাউন চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইন্সটিউটের
সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে
কাউনের চাষ ৭শত বিঘা ছাড়িয়ে গেছে। সাঘাটা উপজেলার যমুনা নদী বেষ্টিত চিনিরপটল,
কুমারপাড়া,কালুরপাড়া, হলদিয়া, কানাইপাড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি ও পাতিলবাড়িসহ
বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকরা নতুন উদ্যোমে কাউন চাষ শুরু করেন। সাঘাটা উপজেলার
কানাইপাড়া চরের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, চরের একজন কৃষক ১৫ থেকে ২০ বিঘা পর্যন্ত
জমি কাউনের চাষ করে থাকে। এর আগে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ব্যয়ে দেশী
জাতের কাউনের চাষ করে প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ কাউন ফলন হতো। ফলনও কম, বাজারে দামও
ছিলো অনেক কম। ফলে কাউন চাষে তেমন লাভ না হওয়ায় দিনদিন কাউন চাষের প্রতি আগ্রহ
হারিয়ে ছিল কৃষকরা। বর্তমানে একই পরিমাণ টাকা খরচ ও শ্রম দিয়ে বারী কাউন-২ জাতের
প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ মণ। প্রতি মণ কাউন বাজারে বিক্রি হয় ১
হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। বাজারে চাহিদা বেশি থাকার কারণে আর্থিকভাবে
লাভবান হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাউনের আবাদ নতুন উদ্যোমে শুরু করেন চরের কৃষকগণ। এরইমধ্যে
চলতি মৌসুমের কাউন কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। চরের উৎপাদিত কাউন কোন বাজারে
নিয়ে বিক্রি করতে হয় না, ব্যবসায়িরা কৃষকের বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। কাউনের
বা¤পার ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা
বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ কৃষি
গবেষনার উদ্ভাবিত বারী কাউন-২ সহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের পরামর্শে আধুনিক কৃষি
প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতের শস্য বীজ ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের
মাধ্যমে চরাঞ্চলের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ
পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, কৃষিখাতকে আরও এগিয়ে নিতে গাইবান্ধা কৃষি
গবেষণা বিভাগের চেষ্টায় গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হারিয়ে যাওয়া কাউন চাষ আবারও জনপ্রিয় হচ্ছে

আপডেট টাইম : ১২:১৭:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১

জাতের কাউন চাষ করা হচ্ছে। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের তত্ত্বাবধানে নতুন
উদ্যমে জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি,গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা
নদীর বুকে জেগে ওঠা বালু চরে ব্যাপকভাবে কাউন চাষ করেছে কৃষকগণ। এ চলতি মৌসুমে
কাউনের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক হারানো দিনের ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছেন। এক সময়
গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধ সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নদী ভাঙন আর বন্যার
কারণে দরিদ্রসীমার নীচে ছিল চরাঞ্চলের মানুষ। এক সময় এই এলাকাকে মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল বলা
হতো। কাউনের চালের ভাত, পায়েস ও পাস্তা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো চরাঞ্চলের মানুষ।
তখন চরাঞ্চল জুড়েই ছিল শুধু বালু আর বালু, এখানে কোনো ফসল হতো না, কিছু কিছু
জমিতে কেবল কাউনের চাষ করা হতো। চরের মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসাই ছিল
কাউনের চাষ করা আর নদীতে মাছ ধরা। বর্তমানে কাউন এখন আর দরিদ্র মানুষের খাবার নয়,
কাউনের চালের পিঠা, পায়েস ও মোয়াসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী গ্রাম বাংলার পাশাপাশি
শহরের মানুষের সখের খাবারে পরিণত হয়েছে। এর আগে দেশি জাতের কাউনের ফলন কম হওয়ায়
দিন দিন কাউনের চাষ সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধার চরাঞ্চল থেকেও হারিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু
বর্তমান কৃষি গবেষণায় নতুন উদ্ভাবিত বারী কাউন-২ জাতের বা¤পার ফলন হওয়ায় চরাঞ্চলের
কৃষক এখন আবার কাউন চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা ইন্সটিউটের
সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে
কাউনের চাষ ৭শত বিঘা ছাড়িয়ে গেছে। সাঘাটা উপজেলার যমুনা নদী বেষ্টিত চিনিরপটল,
কুমারপাড়া,কালুরপাড়া, হলদিয়া, কানাইপাড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি ও পাতিলবাড়িসহ
বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকরা নতুন উদ্যোমে কাউন চাষ শুরু করেন। সাঘাটা উপজেলার
কানাইপাড়া চরের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, চরের একজন কৃষক ১৫ থেকে ২০ বিঘা পর্যন্ত
জমি কাউনের চাষ করে থাকে। এর আগে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ব্যয়ে দেশী
জাতের কাউনের চাষ করে প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ কাউন ফলন হতো। ফলনও কম, বাজারে দামও
ছিলো অনেক কম। ফলে কাউন চাষে তেমন লাভ না হওয়ায় দিনদিন কাউন চাষের প্রতি আগ্রহ
হারিয়ে ছিল কৃষকরা। বর্তমানে একই পরিমাণ টাকা খরচ ও শ্রম দিয়ে বারী কাউন-২ জাতের
প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ মণ। প্রতি মণ কাউন বাজারে বিক্রি হয় ১
হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়। বাজারে চাহিদা বেশি থাকার কারণে আর্থিকভাবে
লাভবান হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাউনের আবাদ নতুন উদ্যোমে শুরু করেন চরের কৃষকগণ। এরইমধ্যে
চলতি মৌসুমের কাউন কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। চরের উৎপাদিত কাউন কোন বাজারে
নিয়ে বিক্রি করতে হয় না, ব্যবসায়িরা কৃষকের বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। কাউনের
বা¤পার ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। গাইবান্ধা কৃষি গবেষণা
বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ কৃষি
গবেষনার উদ্ভাবিত বারী কাউন-২ সহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের পরামর্শে আধুনিক কৃষি
প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতের শস্য বীজ ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের
মাধ্যমে চরাঞ্চলের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ
পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, কৃষিখাতকে আরও এগিয়ে নিতে গাইবান্ধা কৃষি
গবেষণা বিভাগের চেষ্টায় গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল