ঢাকা ০৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নের অঙ্গীকার যেখানে, ভোটও সেখানে: ছিটমহলবাসী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০১৬
  • ৩২১ বার

ভারতের স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর অবশেষে ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাদ পেতে চলেছেন সাবেক ছিটমহলবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট দিতে পারবেন ভারতীয় অংশে বসবাসকারী প্রায় ১৫ হাজার সাবেক ছিটমহলবাসীর অধিকাংশ মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার গঠনে সরাসরি ভূমিকা নেবেন এই মানুষেরা। স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া তাদের মধ্যে। তবে নিজেদের ভোট দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক সাবেক ছিটমহলবাসীরা। তাদের মতে যারা ছিটমহলবাসীদের প্রকৃত উন্নয়নের কথা ভাববে, তাদের পাশে থাকবে, ভোটটাও তাদের ঝুলিতেই পড়বে।

সাবেক ছিটের বাসিন্দা সাবানা বিবি, ‘জানান আমাদের পূর্ব পুরুষরা কোনোদিন তাদের আঙুলে ভোটের কালি লাগাতে পারেনি। দীর্ঘদিন পর আমরা সেই স্বাদ পাবো। এটা সত্যিই খুব আনন্দের। কোনো রাজনৈতিক দলই আমাদের শত্রু কিংবা মিত্র নয়, আমরা চাই সকলে মিলে যেন আমাদের উন্নয়নের কাজ করে’।

সাবেক ছিটমহলের আরেক বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন জানান, ‘দীর্ঘ ৬৮ বছর পর আমরা ভোট দিতে যাচ্ছি। আমার ঠাকুরদার বয়স ১০৬ বছর উনিও কোন দিন ভোট দেননি। ওনার সঙ্গে গিয়ে আমরা একসঙ্গে ভোট দেব, এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে’।

এব্যাপারে সাবেক ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ‘আমরা সাবেক ছিটমহলবাসীরা কোনো রাজনৈতিক দলের লোক নই। স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর থেকে এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ছিটমহলবাসীরা নাগরিকত্বের পরিচয় পায়নি, পর্যাপ্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিছুই নেই। এই অবস্থায় এলাকার উন্নয়নের স্লোগানকে সামনে রেখেই ছিটমহলবাসীরা ভোটে অংশ নেবে। প্রতিটি জায়গায় অনুন্নয়নের ছবি, ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। যারা বা যে রাজনৈতিক দল এই ছিটমহলবাসীদের প্রকৃত উন্নয়নের কথা ভাববে, আমরা তাদেরই ভোট দেব’।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব রহমানের মধ্যে ছিটমহল চুক্তি হয়। এর দীর্ঘ ৪১ বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংশোধনী বিল পাশ হয়। গত বছরের জুলাই মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। ভারতের ভূখণ্ডে ছিল বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশি ছিটমহল থেকে কোনো নাগরিক বাংলাদেশে ফিরে না গেলেও বাংলাদেশের ভেতর থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে ৯২১ নাগরিক এ দেশে ফিরে এসেছেন। ফলে ওই ৯২১ জন সহ ভারতে বসবাসকারী ১৪ হাজার ৮৫৬ জন সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহলবাসীদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এবার ভোটাধিকারের সুযোগ পেতে চলেছেন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘দ্য ডিলিমেটেশন অ্যাক্ট অব ২০০২’ এবং ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট ১৯৫০’ নামে দুইটি আইনের সংশোধনী ভারতের সংসদে পাস হয়। এই দুইটি আইনের সংশোধনীর লক্ষ্যই হলো পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কুচবিহারের সাবেক ছিটমহল এলাকার লোকসভা এবং বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস করা এবং সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার দেওয়া।

পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা দিব্যেন্দু সরকার জানান ভারতের ৫১ ছিটমহলে ১৪,৮৫৬ জন বাস করেন। তারা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা (কমিশন) সবরকম প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তিনি আরও জানান, আসন পুনর্বিন্যাস করে সাবেক ছিটমহলবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য মেখলিগঞ্জ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা এবং তুফানগঞ্জ-এই ৫টি বিধানসভা কেন্দ্র ও কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এই ৩ টি লোকসভা কেন্দ্র গঠন করা হচ্ছে। আগামী ৫ মে শেষ দফায় এই কেন্দ্রগুলিতে ভোট নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

উন্নয়নের অঙ্গীকার যেখানে, ভোটও সেখানে: ছিটমহলবাসী

আপডেট টাইম : ১১:১২:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০১৬

ভারতের স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর অবশেষে ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাদ পেতে চলেছেন সাবেক ছিটমহলবাসীরা। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট দিতে পারবেন ভারতীয় অংশে বসবাসকারী প্রায় ১৫ হাজার সাবেক ছিটমহলবাসীর অধিকাংশ মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার গঠনে সরাসরি ভূমিকা নেবেন এই মানুষেরা। স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া তাদের মধ্যে। তবে নিজেদের ভোট দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক সাবেক ছিটমহলবাসীরা। তাদের মতে যারা ছিটমহলবাসীদের প্রকৃত উন্নয়নের কথা ভাববে, তাদের পাশে থাকবে, ভোটটাও তাদের ঝুলিতেই পড়বে।

সাবেক ছিটের বাসিন্দা সাবানা বিবি, ‘জানান আমাদের পূর্ব পুরুষরা কোনোদিন তাদের আঙুলে ভোটের কালি লাগাতে পারেনি। দীর্ঘদিন পর আমরা সেই স্বাদ পাবো। এটা সত্যিই খুব আনন্দের। কোনো রাজনৈতিক দলই আমাদের শত্রু কিংবা মিত্র নয়, আমরা চাই সকলে মিলে যেন আমাদের উন্নয়নের কাজ করে’।

সাবেক ছিটমহলের আরেক বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন জানান, ‘দীর্ঘ ৬৮ বছর পর আমরা ভোট দিতে যাচ্ছি। আমার ঠাকুরদার বয়স ১০৬ বছর উনিও কোন দিন ভোট দেননি। ওনার সঙ্গে গিয়ে আমরা একসঙ্গে ভোট দেব, এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে’।

এব্যাপারে সাবেক ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ‘আমরা সাবেক ছিটমহলবাসীরা কোনো রাজনৈতিক দলের লোক নই। স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর থেকে এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ছিটমহলবাসীরা নাগরিকত্বের পরিচয় পায়নি, পর্যাপ্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিছুই নেই। এই অবস্থায় এলাকার উন্নয়নের স্লোগানকে সামনে রেখেই ছিটমহলবাসীরা ভোটে অংশ নেবে। প্রতিটি জায়গায় অনুন্নয়নের ছবি, ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। যারা বা যে রাজনৈতিক দল এই ছিটমহলবাসীদের প্রকৃত উন্নয়নের কথা ভাববে, আমরা তাদেরই ভোট দেব’।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব রহমানের মধ্যে ছিটমহল চুক্তি হয়। এর দীর্ঘ ৪১ বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংশোধনী বিল পাশ হয়। গত বছরের জুলাই মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। ভারতের ভূখণ্ডে ছিল বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশি ছিটমহল থেকে কোনো নাগরিক বাংলাদেশে ফিরে না গেলেও বাংলাদেশের ভেতর থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে ৯২১ নাগরিক এ দেশে ফিরে এসেছেন। ফলে ওই ৯২১ জন সহ ভারতে বসবাসকারী ১৪ হাজার ৮৫৬ জন সাবেক বাংলাদেশি ছিটমহলবাসীদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এবার ভোটাধিকারের সুযোগ পেতে চলেছেন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘দ্য ডিলিমেটেশন অ্যাক্ট অব ২০০২’ এবং ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট ১৯৫০’ নামে দুইটি আইনের সংশোধনী ভারতের সংসদে পাস হয়। এই দুইটি আইনের সংশোধনীর লক্ষ্যই হলো পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কুচবিহারের সাবেক ছিটমহল এলাকার লোকসভা এবং বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস করা এবং সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার দেওয়া।

পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা দিব্যেন্দু সরকার জানান ভারতের ৫১ ছিটমহলে ১৪,৮৫৬ জন বাস করেন। তারা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা (কমিশন) সবরকম প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তিনি আরও জানান, আসন পুনর্বিন্যাস করে সাবেক ছিটমহলবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য মেখলিগঞ্জ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা এবং তুফানগঞ্জ-এই ৫টি বিধানসভা কেন্দ্র ও কুচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এই ৩ টি লোকসভা কেন্দ্র গঠন করা হচ্ছে। আগামী ৫ মে শেষ দফায় এই কেন্দ্রগুলিতে ভোট নেওয়া হবে।