ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানদের দেখতে ঢাকায় আসা জাপানি নারীর সঙ্গে হৃদয়বিধারক আচরণ স্বামীর!

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১
  • ১৭৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই কন্যা শিশুকে নিজের হেফাজতে নিতে বাংলাদেশে এসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন এক জাপানি নারী।  তার নাম নাকানো এরিকো।  তিনি জাপানের নাগরিক।

এরিকোর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইন অনুসারে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের (৫৮) বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাদের তিনজনকেই টোকিও’র চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপান (এএসআইজে)-এ ভর্তি করা হয়। সেখানেই তারা পড়ালেখা করছিল। কিন্তু পারিবারিক বিরোধের জেরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য জাপানি আদালতে মামলা করেন এরিকো।

কয়েকদিন পর ২১ জানুয়ারি বড় মেয়েকে নিজের সঙ্গে নিতে শরীফ ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সে আবেদন খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বড় দুই মেয়েকে স্কুলবাস থেকে নামিয়ে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান ইমরান। এরপর বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের জন্য গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এ অবস্থায় গত ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিও’র পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মায় রাখতে মামলা করেন। আদালত শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। পরবর্তীতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। এরপর ইমরান বড় মেয়ে দুটিকে নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

এদিকে টোকিও’র পারিবারিক আদালত গত ৩১ মে এরিকোর জিম্মায় মেয়ে দুটিকে হস্তান্তরের আদেশ দেয়। এ অবস্থায় গত ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইমরান সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও তা ছিল হৃদয়বিধারক ঘটনা।

গত ২৭ জুলাই এরিকোকে চোখ বেঁধে গুলশান থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। এরপর কোনো একটি বাসায় নিয়ে মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। সাক্ষাত শেষে আবার চোখ বেঁধে একই গাড়িতে করে গুলশানে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সন্তান দুটিকে আদালতে হাজির করা এবং নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মা এরিকো। এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট শিশু দুটি ও তাদের বাবার বাংলাদেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এক মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শিশু দুটিকে আগামী ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির করতে তাদের বাবা শরীফ ইমরান ও ফুফু আমিনা জেবিনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির নিশ্চিত করতে গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। শিশু দুটির মা নাকানো এরিকোর করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।

আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সন্তানদের দেখতে ঢাকায় আসা জাপানি নারীর সঙ্গে হৃদয়বিধারক আচরণ স্বামীর!

আপডেট টাইম : ০৮:২৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুই কন্যা শিশুকে নিজের হেফাজতে নিতে বাংলাদেশে এসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন এক জাপানি নারী।  তার নাম নাকানো এরিকো।  তিনি জাপানের নাগরিক।

এরিকোর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইন অনুসারে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬) এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের (৫৮) বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাদের তিনজনকেই টোকিও’র চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপান (এএসআইজে)-এ ভর্তি করা হয়। সেখানেই তারা পড়ালেখা করছিল। কিন্তু পারিবারিক বিরোধের জেরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য জাপানি আদালতে মামলা করেন এরিকো।

কয়েকদিন পর ২১ জানুয়ারি বড় মেয়েকে নিজের সঙ্গে নিতে শরীফ ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সে আবেদন খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বড় দুই মেয়েকে স্কুলবাস থেকে নামিয়ে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান ইমরান। এরপর বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের জন্য গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এ অবস্থায় গত ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিও’র পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মায় রাখতে মামলা করেন। আদালত শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। পরবর্তীতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। এরপর ইমরান বড় মেয়ে দুটিকে নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

এদিকে টোকিও’র পারিবারিক আদালত গত ৩১ মে এরিকোর জিম্মায় মেয়ে দুটিকে হস্তান্তরের আদেশ দেয়। এ অবস্থায় গত ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইমরান সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেও তা ছিল হৃদয়বিধারক ঘটনা।

গত ২৭ জুলাই এরিকোকে চোখ বেঁধে গুলশান থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। এরপর কোনো একটি বাসায় নিয়ে মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। সাক্ষাত শেষে আবার চোখ বেঁধে একই গাড়িতে করে গুলশানে নামিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সন্তান দুটিকে আদালতে হাজির করা এবং নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মা এরিকো। এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট শিশু দুটি ও তাদের বাবার বাংলাদেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এক মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শিশু দুটিকে আগামী ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির করতে তাদের বাবা শরীফ ইমরান ও ফুফু আমিনা জেবিনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির নিশ্চিত করতে গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। শিশু দুটির মা নাকানো এরিকোর করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।

আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।