ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রত্যন্ত হাওরে অত্যাধুনিক সুযােগ – সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসাের্ট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১
  • ১৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অত্যাধুনিক সুযােগ – সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসাের্ট মিঠামইন কিশোরগঞ্জে।

হাওরের দিগন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থৈ থৈ জল । সাগরের মতই উত্তাল জলের বড় বড় ঢেউ । যেতে যেতে চোখ পড়বে , জলের উপর হেলে পড়া নীল আকাশ সাদা মেঘের ওড়াউড়ি । ছােট ছােট নৌকা নিয়ে মাছ ধরা । জলের বুকে বয়ে চলে মহাজানি নাও ।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওর উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক ও অভিজাত প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। হাওরাঞ্চলে এই প্রথম ব্যক্তি উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন একটি রিসোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে থাকবে তারকা হোটেলের সমান সুযোগ-সুবিধা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জের ‘হাওরের বিস্ময়’ হিসেবে পরিচিত ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অল-ওয়েদার সড়কের মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুরে দক্ষিণের অভিজাত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের এর অবস্থান। হোসেনপুর গ্রামের জন্মস্থান ডা. এ বি এম শাহরিয়ার তার হাওরের পৈতৃক সম্পত্তির ৩০ একর উপর গড়ে তুলছেন এই প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটি ।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের এলাকায় এই রিসোর্ট নির্মাণ হওয়ায় এর মালিক রিসোর্টের নামকরণ করেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। রিসোর্টে ভিতরে আছে বিশাল একটি পুকুর । পুকুরের চতুরদিকে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্টটি। পুকুরের উত্তর পাশে রেস্টুরেন্ট আর দক্ষিণ পাশে গড়ে তোলা হয়েছে কটেজগুলো। এর চারদিকে লাগানো হচ্ছে সৌন্দর্যবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো গাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিস্তীর্ণ হাওরে সবুজের এই সমারোহ পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেবে এই সুন্দর জায়গাতে। কটেজগুলোর দক্ষিণে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ জলরাশি নিঃসন্দেহে হাওরপ্রেমীদের পর্যটকদের  চোখ জুড়াবে।

বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা অথবা স্পিডবোট। আর শুকনো মৌসুমে মোটরসাইকেল ও গাড়িযোগে আসতে পারবে এই রিসোর্টে। প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে মোট ১০টি ডুপ্লেক্স কটেজ করা হয়েছে । তবে সেগুলোর সম্পুর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। কটেজগুলোর ভেতরের অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে । বতর্মানে মিস্ত্রিরা বাইরে রঙ ও আনুষঙ্গিক  কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে ।

গত (০৬ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে এই রিসোর্টটির উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও চলমান কঠোর লকডাউনের কারণে তা পিছিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ । বিধিনিষেধ উঠে গেলেই রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানতে পারলাম, কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের দক্ষিণ পাশে হাওরে ৩০ একর জায়গায় অত্যাধুনিক ও মানসম্মত সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। অত্যাধুনিক এ রিসোর্টে রয়েছে ১০টি আবাসিক দুতলা ডুপ্লেক্স কটেজ, যার প্রতিটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। দুতলা বিশিষ্ট এ সকল কটেজে ৪০টি পরিবার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এইখানেই অত্যাধুনিক পার্টি সেন্টার (আউটডোর), বিশাল ক্যান্টিনে ৪ শতাধিক লোকের একত্রে খাবারের ব্যবস্থা। ইনডোরে রয়েছে চাইনিজ ও বাংলা রেস্টুরেন্ট। লেকের পাশে রয়েছে কালচারাল সেন্টার, সাইট লিংক ও গলফ কার রাইডিং। লেকের মাঝখানে হেলিপ্যাড নির্মাণের কাজ চলমান।

পুকুরে মাছ ধরার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক চৌকি। রিসোর্টে প্রায় ৫ হাজার বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়েছে। ভিতরে সবজি বাগান আছে । গাছের মাঝখানে শিশুদের বিশ্রামের জন্য খেলার সামগ্রীসহ ২০টি ছাতা রয়েছে । বিভিন্ন কারুকার্যে খচিত পাথরের মাছ ,বাঘ, সিংহও রয়েছে। পাঁচ তলা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে লেকের পশ্চিম পাশে। যেখান থেকে বিস্তীর্ণ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।  মনোরম পরিবেশে লেকের দুপাশে অত্যাধুনিক দুটি সিঁড়ি ঘাট রয়েছে। সুদৃশ্য পাইপের ভেতর চারজন বসার মতো জায়গা রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে সুইমিং প্লটিং, পেডেল বোট, জেডস কি ওয়াটার বাইক, শিশুদের জন্য কিডস কর্নার। বর্ষাকালে যাতায়াতের জন্য দুটি অত্যাধুনিক ট্রলার ও তিনটি স্পিড বোট আছে । বিভিন্ন বিভাগে রিসিপশনিস্টসহ ৮০ জন স্টাফ রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি এজেন্সির ১০ জন নিরাপত্তা কর্মী আছে ।

বর্ষাকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়া বন্দর ও বালিখলা থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য নিজস্ব ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পিড বোটের ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। পর্যটকরা সেখানে আসা মাত্রই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করলে সহজেই চলে যেতে পারবেন এ বাহনগুলোতে। এছাড়াও ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অল ওয়েদার সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব পাশে হাওরের মাঝখানে নান্দনিক এ রিসোর্টে বর্ষাকালে ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে আসার ব্যবস্থা রয়েছে। আর শুকনো মৌসুমে অল ওয়েদার সড়ক দিয়েই পর্যটকরা গাড়ি নিয়ে সরাসরি রিসোর্টে আসতে পারবেন। নির্মাণকাজ শেষ না হলেও ঈদুল আজহার পর থেকেই রিসোর্টে ও অল ওয়েদার সড়কে পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।

এলাকাবাসী বলছেন, মূলত হাওরে অল ওয়েদার সড়ক হওয়ার ফলেই এই রিসোর্ট নির্মাণ হচ্ছে। এতে এলাকার শতশত মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ তৈরি হবে।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জহিরুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, হাওর অঞ্চলে পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আগে বর্ষাকালে হাজার হাজার পর্যটক হাওরের মাঝ দিয়ে অল ওয়েদার সড়ক দেখতে এখানে আসেন। কিন্তু পর্যটকদের জন্য রাত্রিযাপনের কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। অনেকেই সকালে এসে সন্ধ্যায়ই গন্তব্যে চলে যেতেন। হাওর ভ্রমণে তাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই শুধুমাত্র অল ওয়েদার  সড়ক দেখার জন্য আসত। অল ওয়েদার সড়ক ছাড়াও মিঠামইনে প্রাচীন অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। কিন্তু পর্যটকরা সময়ের অভাবে সবকিছু দেখতে পারেননি। কারণ রাত্রিযাপনের জন্য ভালো কোনো সুবিধা না থাকায় সন্ধ্যার আগেই তাদের ফিরতে হয়েছে হাওর থেকে গন্তব্যস্থলে । এ সব বিষয় চিন্তা করেই হাওরে এই নান্দনিক রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে এখন হাওরে রিসোর্ট হচ্ছে। আর সরকারিভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগেও মিঠামইনে ৩৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেস্টহাউস হচ্ছে মিনি সার্কিট হাউসের আদলে। এটি নির্মাণ হলে পর্যটকদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। হাওরে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে তিনি জানান।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, হাওরে পর্যটকদের সুবিধার জন্য প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে এই অত্যাধুনিক রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই এলাকাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত বছর পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন সচিব অল ওয়েদার সড়ক ঘুরে দেখে গেছেন। কিন্তু মিঠামইনে তখন আবাসিকভাবে সরকারি বাংলো ছাড়া থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এরপর হাওরের মাঝখানে একটি নান্দনিক রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নির্মাণকারীরা। এই রিসোর্ট নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ও উদ্বোধন করেছেন বলেও জানান।

এমপি আরও জানান, হাওর  অঞ্চলের মানুষ আর  হানিমুনের জন্য কক্সবাজার, সিলেটের জাফলংসহ বিভিন্ন পিকনিক স্পটে যেতে হবে না, হাওরেই পর্যটকরা শুকনো ও বর্ষা মৌসুমে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এ হাওরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া আছে ।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রত্যন্ত হাওরে অত্যাধুনিক সুযােগ – সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসাের্ট

আপডেট টাইম : ০৫:১১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অগাস্ট ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অত্যাধুনিক সুযােগ – সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট রিসাের্ট মিঠামইন কিশোরগঞ্জে।

হাওরের দিগন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থৈ থৈ জল । সাগরের মতই উত্তাল জলের বড় বড় ঢেউ । যেতে যেতে চোখ পড়বে , জলের উপর হেলে পড়া নীল আকাশ সাদা মেঘের ওড়াউড়ি । ছােট ছােট নৌকা নিয়ে মাছ ধরা । জলের বুকে বয়ে চলে মহাজানি নাও ।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওর উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক ও অভিজাত প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। হাওরাঞ্চলে এই প্রথম ব্যক্তি উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন একটি রিসোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে থাকবে তারকা হোটেলের সমান সুযোগ-সুবিধা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জের ‘হাওরের বিস্ময়’ হিসেবে পরিচিত ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অল-ওয়েদার সড়কের মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুরে দক্ষিণের অভিজাত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের এর অবস্থান। হোসেনপুর গ্রামের জন্মস্থান ডা. এ বি এম শাহরিয়ার তার হাওরের পৈতৃক সম্পত্তির ৩০ একর উপর গড়ে তুলছেন এই প্রেসিডেন্ট রিসোর্টটি ।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের এলাকায় এই রিসোর্ট নির্মাণ হওয়ায় এর মালিক রিসোর্টের নামকরণ করেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। রিসোর্টে ভিতরে আছে বিশাল একটি পুকুর । পুকুরের চতুরদিকে গড়ে উঠেছে এই রিসোর্টটি। পুকুরের উত্তর পাশে রেস্টুরেন্ট আর দক্ষিণ পাশে গড়ে তোলা হয়েছে কটেজগুলো। এর চারদিকে লাগানো হচ্ছে সৌন্দর্যবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো গাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিস্তীর্ণ হাওরে সবুজের এই সমারোহ পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেবে এই সুন্দর জায়গাতে। কটেজগুলোর দক্ষিণে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ জলরাশি নিঃসন্দেহে হাওরপ্রেমীদের পর্যটকদের  চোখ জুড়াবে।

বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা অথবা স্পিডবোট। আর শুকনো মৌসুমে মোটরসাইকেল ও গাড়িযোগে আসতে পারবে এই রিসোর্টে। প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে মোট ১০টি ডুপ্লেক্স কটেজ করা হয়েছে । তবে সেগুলোর সম্পুর্ণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। কটেজগুলোর ভেতরের অংশের কাজ শেষ করা হয়েছে । বতর্মানে মিস্ত্রিরা বাইরে রঙ ও আনুষঙ্গিক  কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে ।

গত (০৬ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে এই রিসোর্টটির উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও চলমান কঠোর লকডাউনের কারণে তা পিছিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ । বিধিনিষেধ উঠে গেলেই রিসোর্টটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানতে পারলাম, কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের দক্ষিণ পাশে হাওরে ৩০ একর জায়গায় অত্যাধুনিক ও মানসম্মত সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। অত্যাধুনিক এ রিসোর্টে রয়েছে ১০টি আবাসিক দুতলা ডুপ্লেক্স কটেজ, যার প্রতিটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। দুতলা বিশিষ্ট এ সকল কটেজে ৪০টি পরিবার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এইখানেই অত্যাধুনিক পার্টি সেন্টার (আউটডোর), বিশাল ক্যান্টিনে ৪ শতাধিক লোকের একত্রে খাবারের ব্যবস্থা। ইনডোরে রয়েছে চাইনিজ ও বাংলা রেস্টুরেন্ট। লেকের পাশে রয়েছে কালচারাল সেন্টার, সাইট লিংক ও গলফ কার রাইডিং। লেকের মাঝখানে হেলিপ্যাড নির্মাণের কাজ চলমান।

পুকুরে মাছ ধরার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক চৌকি। রিসোর্টে প্রায় ৫ হাজার বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়েছে। ভিতরে সবজি বাগান আছে । গাছের মাঝখানে শিশুদের বিশ্রামের জন্য খেলার সামগ্রীসহ ২০টি ছাতা রয়েছে । বিভিন্ন কারুকার্যে খচিত পাথরের মাছ ,বাঘ, সিংহও রয়েছে। পাঁচ তলা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে লেকের পশ্চিম পাশে। যেখান থেকে বিস্তীর্ণ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।  মনোরম পরিবেশে লেকের দুপাশে অত্যাধুনিক দুটি সিঁড়ি ঘাট রয়েছে। সুদৃশ্য পাইপের ভেতর চারজন বসার মতো জায়গা রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে সুইমিং প্লটিং, পেডেল বোট, জেডস কি ওয়াটার বাইক, শিশুদের জন্য কিডস কর্নার। বর্ষাকালে যাতায়াতের জন্য দুটি অত্যাধুনিক ট্রলার ও তিনটি স্পিড বোট আছে । বিভিন্ন বিভাগে রিসিপশনিস্টসহ ৮০ জন স্টাফ রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি এজেন্সির ১০ জন নিরাপত্তা কর্মী আছে ।

বর্ষাকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়া বন্দর ও বালিখলা থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য নিজস্ব ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্পিড বোটের ব্যবস্থা রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। পর্যটকরা সেখানে আসা মাত্রই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করলে সহজেই চলে যেতে পারবেন এ বাহনগুলোতে। এছাড়াও ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অল ওয়েদার সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব পাশে হাওরের মাঝখানে নান্দনিক এ রিসোর্টে বর্ষাকালে ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে আসার ব্যবস্থা রয়েছে। আর শুকনো মৌসুমে অল ওয়েদার সড়ক দিয়েই পর্যটকরা গাড়ি নিয়ে সরাসরি রিসোর্টে আসতে পারবেন। নির্মাণকাজ শেষ না হলেও ঈদুল আজহার পর থেকেই রিসোর্টে ও অল ওয়েদার সড়কে পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।

এলাকাবাসী বলছেন, মূলত হাওরে অল ওয়েদার সড়ক হওয়ার ফলেই এই রিসোর্ট নির্মাণ হচ্ছে। এতে এলাকার শতশত মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ তৈরি হবে।

প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জহিরুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, হাওর অঞ্চলে পর্যটকদের সুবিধার জন্য এই রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আগে বর্ষাকালে হাজার হাজার পর্যটক হাওরের মাঝ দিয়ে অল ওয়েদার সড়ক দেখতে এখানে আসেন। কিন্তু পর্যটকদের জন্য রাত্রিযাপনের কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। অনেকেই সকালে এসে সন্ধ্যায়ই গন্তব্যে চলে যেতেন। হাওর ভ্রমণে তাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই শুধুমাত্র অল ওয়েদার  সড়ক দেখার জন্য আসত। অল ওয়েদার সড়ক ছাড়াও মিঠামইনে প্রাচীন অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। কিন্তু পর্যটকরা সময়ের অভাবে সবকিছু দেখতে পারেননি। কারণ রাত্রিযাপনের জন্য ভালো কোনো সুবিধা না থাকায় সন্ধ্যার আগেই তাদের ফিরতে হয়েছে হাওর থেকে গন্তব্যস্থলে । এ সব বিষয় চিন্তা করেই হাওরে এই নান্দনিক রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে এখন হাওরে রিসোর্ট হচ্ছে। আর সরকারিভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগেও মিঠামইনে ৩৫ কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেস্টহাউস হচ্ছে মিনি সার্কিট হাউসের আদলে। এটি নির্মাণ হলে পর্যটকদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। হাওরে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে তিনি জানান।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, হাওরে পর্যটকদের সুবিধার জন্য প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে এই অত্যাধুনিক রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই এলাকাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত বছর পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন সচিব অল ওয়েদার সড়ক ঘুরে দেখে গেছেন। কিন্তু মিঠামইনে তখন আবাসিকভাবে সরকারি বাংলো ছাড়া থাকার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এরপর হাওরের মাঝখানে একটি নান্দনিক রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নির্মাণকারীরা। এই রিসোর্ট নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ও উদ্বোধন করেছেন বলেও জানান।

এমপি আরও জানান, হাওর  অঞ্চলের মানুষ আর  হানিমুনের জন্য কক্সবাজার, সিলেটের জাফলংসহ বিভিন্ন পিকনিক স্পটে যেতে হবে না, হাওরেই পর্যটকরা শুকনো ও বর্ষা মৌসুমে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। এ হাওরকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া আছে ।